সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরল মালদার আরেক ছেলে, অভ্যর্থনা জানালেন প্রশাসনিক কর্তারা
HnExpress বিশ্বজিৎ মন্ডল, মালদা ঃ ছেলে ইউক্রেনে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার একটি বাংকারে আটকে ছিল দীর্ঘদিন। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ছেলের। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে ছেলের বাড়ি ফেরার কামনাতে দোয়া করে চলে ছিলেন মা। আর সেই করুণ পরিস্থিতির মধ্যেই ছেলের বাড়ি ফেরার কামনায় দোয়া পড়ছিলেন মা। ঠিক মায়ের দোয়া পড়ার সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরল ছেলে। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে নিজের ঘরে ফিরল কিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ।
এখনো পিছু ছাড়ছে না যুদ্ধের সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। বাঙ্কারের মধ্যেই অনিশ্চিত ভাবে গাদাগাদি ভিড়ে থাকতে হয়েছে। যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বাড়ির সঙ্গেও। বাঙ্কারে থেকে শুনতে হয়েছে একের পর এক গোলা বর্ষনের আওয়াজ। তখন সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল। পরে বাঁচার তাগিদে নিজেদের উদ্যোগেই বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ভারতের পতাকা হাতে নিয়ে ১১ কিলোমিটার হেঁটে স্টেশনে পৌছান পারভেজ। চারদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন।
আলাদা আলাদা ৫ বা ১০ জনের দল করে হেঁটে কাছের স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে তাদের। সেখানেও মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। আতঙ্ক সকলের চোখে মুখে। সাহায্য করেছে ইউক্রেনীয় কিছু রেস্টুরেন্টের লোকজন। কোনক্রমে সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি সরকারও সাহায্য করেছে বলে সংবাদ সুত্রের খবর। মুম্বই পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরে মুম্বই থেকে কলকাতা হয়ে একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই মাসুমের বাবা মোহাম্মদ মোমিনুদ্দিন, মা হামেদা খাতুন গোটা পরিবার সহ মাসুমকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাসুমকে সংবর্ধনা জানাতে তাঁর বাড়িতে আসেন এসডিপিও শুভেন্দু মন্ডল, সঙ্গে ছিলেন আইসি সঞ্জয় কুমার দাস ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা। মাসুম বাড়ি আসছে শুনেই পাড়া-প্রতিবেশীরাও মাসুমকে দেখতে ভিড় জমায়। মাসুম এমবিবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
বাবা মোহাম্মদ মমিনউদ্দীন স্থানীয় মিটনা হাইস্কুলের শিক্ষক। মা হামেদা খাতুন গৃহবধূ। মাসুমের ২ বিবাহিত দিদি রয়েছে এবং এক ছোট ভাই রয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মসজিদ পাড়ার বাড়িতে ফিরে স্বস্তি মাসুমেরও। তবে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনায় রয়েছে সে। কীভাবে এমবিবিএস কমপ্লিট করা যাবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয় তাঁর কাছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন রেখেছে মাসুম, যাতে তাঁদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।