রাশিয়া ইউক্রেন মেতে উঠলো যুদ্ধে, ভারতের কাছে শান্তি রক্ষার অনুরোধ ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ইগর পোলিখার—

0


HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁকয়েক মাস ধরেই আকাশে বাতাসে যুদ্ধ লাগার চাপা কন্ঠস্বর প্রতিটা দেশে। ক্ষমতা দখলের লড়াই নাকি কোনো এক দেশের অস্ত্র ব্যাবসা কে ফুঁলিয়ে ফাঁপিয়ে বাড়িয়ে তোলাই লক্ষ? কোভিড আবহে সারা দুনিয়ায় টেরোরিস্ট হানা অনেকটা কমে গেলেও রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধের তরজা কয়েক মাস আগে থেকেই লক্ষ করার মতো ছিল।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যুদ্ধের ঘোষণা করে রাশিয়া। দুই দেশ অর্থাৎ ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বিবাদের কারণ কী?

এই বিবাদের প্রকৃত কারণ হল, ইউক্রেনের NATO- তে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ। আবার অন্যদিকে আমেরিকাও চায় যে, ইউক্রেন NATO অর্থাৎ NORTH ATLANTIC TREATY ORGANIZATION এর সঙ্গে যুক্ত হোক বা এর সদস্য হোক। আর এটাই হল রাশিয়ার মাথাব্যথার প্রধান কারণ। ইউক্রেন NATO’র সদস্য হোক এটা রাশিয়া কোনওভাবেই চায় না। তাই রাশিয়া আমেরিকার থেকে শুধু আশ্বাসই নয়, তাদের থেকে লিগাল গ্যারান্টিও চায়, যাতে ইউক্রেন কোনওভাবেই NATO- র সদস্য হতে না পারে।

NATO টা আসলে কী ? ১৯৪৯ সালে আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স , ব্রিটেন ও আরও ৮টি ইউরোপীয় দেশ মিলে এই NATO তৈরি করে। এখন এই অর্গানাইজেশনে ৩০টি দেশ যুক্ত রয়েছে। এই NATO- র সদস্য দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে জুড়ে থাকে বা একে অপরকে সাহায্য করে থাকে। এই অর্গানাইজেশনের অর্ন্তভুক্ত কোনও দেশের উপর যদি বাইরের কোনও দেশ বা রাষ্ট্র আক্রমণ করে বা আক্রমণের কথা বলে তাহলে NATO তাদের ছেড়ে কথা বলে না।

সেক্ষেত্রে NATO-র যত সদস্য দেশ আছে তাঁরা সবাই একত্রিত হয়ে যায় ও বাইরের সেই দেশকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। এবার প্রশ্ন, ইউক্রেন কেন NATO-র সদস্য হতে চায়? কারণ ইউক্রেন জানে যে, তাঁরা নিজেদের শক্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে লড়তে পারবে না। ইউক্রেনের কাছে না আছে রাশিয়ার মতো সেনা, না আছে তাদের মতো অত্যাধুনিক হাতিয়ার বা অর্থবল। ২০১৪ সালে এই রাশিয়াই ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া নামের একটা অঞ্চলের কার্যত দখল নিয়ে নেয় ও নিজেদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে।



ইউক্রেনের এখন ভয়, তাঁরা যদি নিজেদের শক্তি না বাড়ায় তাহলে রাশিয়া ফের তাদের এলাকা দখল করবে। ঠিক এই নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থেকেই ইউক্রেন চাইছে NATO-র সদস্য হতে। যাতে তাঁরা সুরক্ষিত থাকতে পারে। যে প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবেই এসে পড়ে তা হল, ইউক্রেন যদি NATO-র সদস্য হয়ে যায়, তাহলে রাশিয়ার এত মাথাব্যথা কেন? রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ যেমন এস্টোনিয়া, লাতভিয়া একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। কিন্তু এখন এই দেশগুলো NATO-র সদস্য।

রাশিয়ার চিন্তা হল, যদি ইউক্রেনও NATO-র সদস্য হয়, তাহলে রাশিয়াকে এই NATO কিন্তু চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে। ফলে আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশের রাশিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়ে যাবে। যা তাদের উদ্বেগের বা ভয়ের একটা কারণ বলা যেতেই পারে। আর রাশিয়া এটাও খুব ভালো ভাবে জানে যে, যদি ইউক্রেন NATO-র সদস্য হয়, তাহলে NATO-র যে দেশগুলো আছে তাঁরা কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে যাবে। এখানে আর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললেই নয়।



তা হল, এই NATO-র জন্মই হয়েছিল রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে বা সোভিয়েত ইউনিয়নকে একঘরে করতে। এই বিষয়টা বুঝতে গেলে একটু ইতিহাসের দিকে নজর দিতে হবে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। ইতালি ও জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকা, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, এই দেশগুলো যুদ্ধ করেছিল। ১৯৪৫ সালে জাপানের উপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকা, তারপর বিশ্বযুদ্ধের শেষ হয়। কিন্তু, আমেরিকার এই পদক্ষেপকে ভালো ভাবে নেয়নি সোভিয়েত ইউনিয়ন।

তাঁরা প্রশ্ন তোলে, যুদ্ধের সহযোগী দেশ হয়েও আমেরিকা কেন তাদের এই পরমাণু বোমা সম্পর্কে কোনও তথ্য দেয়নি বা তাদের থেকে এই তথ্য লুকিয়ে রেখেছিল। এই যে মনোমালিন্য তাই দুই দেশকে কার্যত COLD WAR- এর দিকে টেনে নিয়ে যায়। দুই দেশ সেই তখন থেকেই নিজেদের শক্তি বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। দুই দেশেরই লক্ষ্য হয়ে ওঠে, যত বেশি সংখ্যক দেশকে নিজের দিকে টানা যায়। আর ঠিক সেই সময় NATO তৈরি হয়। ১২টি দেশের সমর্থন নিয়ে আমেরিকা NATO তৈরি করে ফেলে। আর আজ সেই NATO-ই হল ৩০টি দেশের যুক্ত সংগঠন।



বৃহস্পতিবার থেকে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার পর ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় এখনও পর্যন্ত তাঁদের প্রায় ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩৬০ জন। আর ইতিমধ্যেই চেরনোবিলের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নিয়েছে রুশ প্যারাট্যুপাররা। ইউক্রেনের মেলিটোপল বিমানঘাঁটির দখলও নেওয়া হয়েছে বলে দাবি মস্কোর। তাদের দাবি, এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনের ২৪৩ জন সেনা ও একটি মেরিন ব্রিগেড আত্মসমর্পণ করেছে। ইউক্রেনের ১১৮টি সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩৬০ জন।

পাল্টা হামলায় ৮০০ জন রুশ সেনাকে মারতে সক্ষম হয়েছে তাঁরা। অন্যদিকে, রাশিয়ার তরফে সাফ জানান হয়েছে যে, আত্মসমর্পণ করলে বন্ধ হবে যুদ্ধ। এই আবহে আলোচনার জন্য পুতিনের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে ইউক্রেন। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন ইউক্রেন এর প্রেসিডেন্ট স্বয়ং। ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ইগর পোলিখা বলেন, “আমি জানি না কতজন রাষ্ট্রনেতার কথা পুতিন শুনবেন। কিন্তু আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে ধ্বনি তুললে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন পুতিন”।

তিনি আরও বলেন যে, “এক্ষেত্রে ইউক্রেন এবং রাশিয়া দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই আলোচনা চালাতে পারে ভারত। অতীতেও শান্তিরক্ষার কাজ করেছে ভারত। এই মুহূর্তে আমরা ভারতের সাহায্য চাইছি। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিশ্বের প্রতি দায়িত্ব পালন করুক ভারত”। কিন্তু কথা হচ্ছে যে ইউক্রেনই বা এতো দেশ থাকতে ভারত কে শান্তি রক্ষা করার জন্য বলছে কেন? কারণ, ইউক্রেন সামনে থাকলেও এই দ্বন্দ্ব আসলে আমেরিকা ও রাশিয়ার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আমেরিকা ও রাশিয়া এই দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভালো।

সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর ভারত অনেকটাই নির্ভরশীল। এখনও প্রায় ৫৫ শতাংশ হাতিয়ার রাশিয়ার থেকে কেনে ভারত। আবার গত ১০ বছরে আমেরিকার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্যিক ও কূটনেতিক সম্পর্ক ভালো। অর্থাৎ ভারত এই তিন দেশের মধ্যে কারও সঙ্গেই নিজের সম্পর্ক খারাপ করতে চাইবে না। ফলতঃ সেই কারনেই ইউক্রেন ভারতকে টানতে বদ্ধপরিকর। ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও নিজের সেনাবাহিনীর মনোবল দৃঢ় করতে সেনা পোশাকে ময়দানে দেখা গিয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি দেখেছে সারা দুনিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাতের ফলে একাধিক জিনিসের দাম বাজারে অগ্নিমূল্য হতে পারে। বিস্ফোরণে জ্বলছে খরকিভ থেকে কিয়েভ। এর ফলে সাথে সাথেই সোনার দাম বেড়েছে। যুদ্ধের নজর পরেছে শেয়ার বাজারেরও। প্রশ্ন উঠছে তেল থেকে এলপিজির দামের গতি নিয়ে। যুদ্ধের গতি বাড়ার সাথে সাথেই ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তায় ভারত। এটিএম কিয়ক্স বন্ধ। হাতে টাকা নেই। পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ। প্রায় ৪৮ ঘন্টারও বেশী হতে চললো মাটির নিচে বাঙ্কারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রহর গুনছে প্রবাসী ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা। এটাই এই মুহূর্তের ছবি রুশ হানায় আক্রান্ত ইউক্রেনে ভারতীয়দের করুণ অবস্থা।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply