এক অন্য চোখে ঃ সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার রহস্য, “নেপথ্যে খুন, নাকি প্ররোচনার হুমকি?”
HnExpress ১৯ই জুন, অরুণ কুমার, বিশেষ প্রতিবেদন ঃ সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার রহস্য, “নেপথ্যে খুন, নাকি প্ররোচনার হুমকি?”। ঠিক যেন মৃত্যু নয়, খুনই করা হয়েছে, সুশান্তের আত্মহত্যার পর এমনই দাবি জোরালো ভাবে উঠে আসছে এবং সেই মত ইতিমধ্যেই বিহারের এক আদালতে বলিউড খ্যাত তারকা সলমান খান, প্রযোজক করণ জোহর, সঞ্জয়লীলা বনসালি, একতা কাপুর, আদিত্য চোপড়া, সাজিদ নাদিয়াড ওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে৷
এদিকে সুশান্তের আইনজীবী সুধীর কুমার ওঝা বিহারের মুজাফরপুরের আদালতে আইপিসি সেকশন ৩০৬, ১০৯, ৫০৪ ও ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করেন৷ আগামী ৩রা জুলাই হবে সেই মামলার শুনানি৷ আইনজীবি সুধীর কুমার ওঝার অভিযোগ, সুশান্ত সিং রাজপুতকে প্রায় ৭টি ছবি থেকে প্ল্যান করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ আর কিছু ছবির রিলিজও আটকে দেওয়া হয়েছিল৷ এতেই অভিনেতার যেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷
যার শিকার হয়ে তিনি এই মর্মান্তিক পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ আর ঠিক এভাবেই কেউ কেউ তাঁর হাত থেকে কাজ ছিনিয়ে নিয়েছেন, আর কেউ কেউ আবার তাঁকে ধর্তব্যের মধ্যেই ধরতে চাননি। তবে সবই তিনি চুপচাপই মেনে নিয়েছিলেন। আর তাই সে কারনেই অভিনেতা সুশান্তের সিং রাজপুতের এমন অকাল মৃত্যুতে এখন নেটিজেনদের রোষানলে বলিউডের একাংশ। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সলমান খান, করণ জোহর, আলিয়া ভাট, সোনম কাপুরের একাংশ এবং আরও অনেকেই।
অভিযোগ স্বজনপোষণের কারণেই ভারতীয় চলচ্চিত্র হারিয়েছে সুশান্তের মতো এক দক্ষ তরুণ অভিনেতাকে। আর এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্স হারাতে শুরু করেছেন বলিউডের প্রভাবশালী তারকারা। একটু দেখে নেওয়া যাক এক নজরে, অভিনেতা সুশান্ত রাজপুতের মৃত্যুর আগে এই প্রযোজক করণ জোহারের ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার্স ছিল ১১ মিলিয়নের ওপর। কিন্তু মাত্র গত কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর ফলোয়ার্স কমে চলে আসে ১০.৮ মিলিয়নে।
অন্যদিকে মহেশ কন্যা আলিয়া ভাটের ছিল ৫০ মিলিয়নের মতো ফলোয়ার্স। বর্তমানে যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৮.২ মিলিয়নে। এছাড়াও অভিনেত্রী সোনম কাপুরেরও এক লক্ষের মতো ফলোয়ার্স কমেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, সুশান্তের মৃত্যুতে এই স্বজনপোষণকারীদের বিরুদ্ধে যিনি তীব্র প্রতিবাদ করেছেন, সেই দাপুটে অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতের কিন্তু ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার্সের সংখ্যা ক্রমশই উর্ধ্বমুখী।
সুত্রের খবর তাঁর কয়েকদিন আগেই টিম কঙ্গনা রানাওয়াত ইনস্টা অ্যাকাউন্টে ছিল ২ মিলিয়ন ফলোয়ার্স, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৩.৬ মিলিয়ন।
উল্লেখ্য, মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই আত্মহত্যা করেছেন খেলোয়াড় ধোনির চরিত্রে অভিনয় করা প্রখ্যাত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হয় সুশান্তের মৃতদেহ। অভিযোগ, বিগত কয়েকমাস ধরেই বলিউডের একাধিক প্রভাবশালীর অঙ্গুলি হেলনে ৬/৭টির মতো ছবি হাতছাড়া হয়েছিল তাঁর।
সেই সন্দেহের তির সুপারস্টার— সলমান খান, প্রযোজক করণ জোহার, মহেশ ভাট, সঞ্জয় শীলা বনসালী, একতা কাপুরের বিরুদ্ধে। আর তাই বুধবার তাঁদের বিরুদ্ধেই বিহার আদালতে দায়ের হয় মামলা। উল্লেখ্য যে, মুম্বাই পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ১৪ই জুন রবিবার বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস লাগিয়েই আত্মহত্যা করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। কিন্তু ডেডবডির আশেপাশে বা তাঁর রুমের কোথাও কোনো সুসাইড নোট পাওয়া যায়নি।
যদিও সুশান্তের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যার কথা সামনে উঠে এলেও, কেন অভিনেতা এধরনের পদক্ষেপ নিলেন, তা ভাবাচ্ছে প্রায় প্রত্যেককেই। সেই কারণেই সুশান্তের চিকিৎসক, পরিবারের লোক, কাছের বন্ধুদের পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে খবর। ইতিমধ্যে মুম্বাই পুলিশ সুশান্ত সিং রাজপুতের লেখা পাঁচটি ডায়েরীও উদ্ধার করছে আর প্রয়াত অভিনেতার ফোন কলের রেকর্ড খতিয়ে দেখে অনেক তথ্যই জানতে পেরেছে।
অন্যদিকে মুম্বই পুলিস ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রির ৫ টি প্রযোজনা সংস্থাকে নোটিশ পাঠিয়েছে বলে সুত্রের খবর। বলিউডের বেশ কয়েকজন তাবড় তাবড় প্রযোজক এবং পরিচালককেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। সুশান্ত কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন? এমন কোনো পরিস্থিতির চাপে পড়েই কি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি? এমন বেশ কিছু বিষয় যেমন ভাবাচ্ছে পুলিসকে। তেমনি আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে তা হলো, সুশান্ত সিং রাজপুত কি নেপোটিজমের শিকার?
হাতের থেকে একের পর এক সিনেমার চলে যাওয়ার জন্যই কি এরকম পরিণতি বেছে নিলেন নায়ক? নাকি তাঁর প্রেমিকার সাথে মহেশ ভাটের অবৈধ সম্পর্কের জেরেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন! সুশান্তের মৃত্যুর পর এমন প্রশ্নই উঠে আসছে। রহস্যও জমছে৷ বিশ্বস্ত সুত্রের জানা গেছে, সুশান্তের বর্তমান প্রেমিকা রিহার সাথে পরিচালক মহেশ ভাটের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এবং তিনি নাকি বহুবার রিহাকে সুশান্তের সাথে কোনো রকম সম্পর্ক রাখতে বারণ করেছিলেন।
এমনও শোনা যাচ্ছে যে, সুশান্ত নিজেও একবার রিহাকে বলে ফেলেছিলেন যে, তোমার সাথে সম্পর্ক রাখলে আমায় খুন হতে হবে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে বলিউডের স্টার পাওয়ারকেই! কিন্তু সত্যিই কি সুশান্ত এরকম একটা কাজ করতে চেয়েছিলেন? পটনায় জন্ম সুশান্তের৷ সেখান থেকে তিনি বলিউডে নিজের মতো করে জায়গা বানিয়েছিলেন৷ পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তাও৷ তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় তাঁকে৷
কিন্তু সুশান্তের এভাবে মৃত্যুর পিছনে অনেকটাই চাপ কাজ করেছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠেছে৷ তাঁর মতো দৃঢ়চেতা ছেলে এভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন, মেনে নিতে পারেনি তাঁর ফ্যান থেকে শুরু করে পরিবারও৷ তাই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে এমন অনেক অভিযোগও উঠে আসছে নানা কারণে। এ বিষয়ে আরও কয়েকটি কথার অবতরনা করেই ইতি টানবো এই লেখার। ব্যর্থতা বোধহয় মেনে নেওয়া যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বোঝানো যায়। নিজেকে পরিমার্জিত ও শুদ্ধিকরণ তথা নিখুঁত করে তোলার কাজে ব্রতী হওয়া যায়।
কিন্তু এসব? ঠিক এইভাবে অল্প অল্প করে একজন যোগ্য ব্যক্তির প্রাপ্য ও কনফিডেন্স কেড়ে নেওয়া হয়। কারন তখন তাঁরা নিজেরা নিরাপত্তা হীনতায় ভোগেন। এর আগে আমরা দেখছিলাম অনুপম খের কিভাবে রীতা কয়রাল এর প্রাপ্য কেড়ে নিয়েছেন। সেই অনুপম খের কিভাবে ভদ্র মুখোশ পরে আত্মহত্যা প্রসঙ্গে যুক্তি উড়িয়ে বলছেন এসব হয়। বুঝতে পারছি কেন আপনার এরকম মনে হচ্ছে। অন্যদিকে সোনম কাপুর বলেছেন কারো মৃত্যুর জন্য অন্য কাউকে দায়ী করা নাকি অন্যায়।
আর ওটা আত্মহত্যা মাত্র, খুন নয়। একথা যারা বলছেন, সুশান্ত ব্যর্থতা মেনে নিতে পারেনি। তাই আত্মহত্যা করেছেন, তাঁরা নিজের কান দুটিই খুইয়ে বসে আছেন। দ্বিতীয়ত, কিছু মানুষ দুঃখের ভান করেন নিজেকে সহানুভূতি আদায় করে বেচবেন বলে। কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে সমস্ত একচেটিয়া করে নিয়েছেন। অন্য কাউকে কাজ করতে দেবেন না। এমনসব হিপোক্রিট সোসাইটির অন্তর্গত অসংখ্য বলির ঘটনা আছে, সুশান্ত একজন উদাহরণ মাত্র। তবে তা খুবই দুঃখজনক উদাহরণ।
এখন তো শেয়ার হচ্ছে “He was extremely intelligent and educated, not like school drop out stars. কিন্তু একথা বেঁচে থাকতে কজন করেছিলেন? সবাই সাফল্য দেখেই তাঁকে তোয়াজ করেন। একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি এর পেছনে কত সুশান্তের মৃত্যু হয়েছে আজ পর্যন্ত। মৃত্যুর আগে ভাবলে, সাহায্য করলে হয়তো আত্মহত্যা প্রবনতা একটু কম হতে পারত। আর স্টার্ডাম যাদের দান সুশান্ত তাদের একরকম প্রতিনিধি।
সেই শিল্পীদের প্রতিনিধি যারা এই নোংরা পলিটিক্স এর শিকার। এটা ব্যর্থতা বলে ধামাচাপা দেওয়াটাও একটা নির্লজ্জতা। তাই সব সাধারণ মানুষেরা, শিল্পীরা তাঁকে রিলেট করতে পারছেন। প্রতিবাদ করছেন। নায়কের সার্থকতা সেখানেই যেখানে দর্শক ও পাঠক একাত্ম হয়ে তার সুখে হাসেন, দুঃখে কাঁদেন। সুতরাং সুশান্ত ব্যর্থ নন মোটেও, বরং অন্যায়ের শিকার। উনি ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেন নি। বরং বলা যায় আপনারা, আপনাদের মত মানুষ এসব করে হত্যা করেছেন।
পরিশেষে আর একটি কথা, আমরা অনেকেই তার ছবি দেখলেও তেমন কিছু গুণমুগ্ধ তো ছিলাম না। ভাল লাগত এটুকুই। ওর মৃত্যুর পর ওর যোগ্যতা সম্পর্কে জেনেছি আর অনেকের মত অপরাধ বোধে ভুগছি। একটা ছোট্ট যুক্তি মাথায় আসছে। সেটা হলো আসলে মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। বলা হয় যার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে সে মৃত। সুশান্ত আসলে সেই দলের যারা স্বপ্ন দেখান। আমরা ঘণ্টা তিনেকের জন্য ওদের মধ্যে দিয়ে অন্য জগতে গিয়ে স্বপ্ন দেখি। ওর ঝকঝকে কনফিডেন্ট মুখ টা আর হাসিটা যতবার মনে পড়ছে কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছেনা এ কোনো হেরে যাওয়া, ব্যর্থ এ্যক্টরের হাসি মুখ। বারে বারে ভেতর টায় মোচড় দিয়ে উঠছে। কারন ওকে জোর করে হারানো হয়েছে।***