সব পুজো প্যান্ডেলই ‘নো এন্ট্রি জোন’, এক জনস্বার্থ মামলায় সোমবার ঐতিহাসিক রায় কলকাতা হাইকোর্টের

0

HnExpress ২০শে অক্টোবর, অরুণ কুমার, কলকাতা ঃ বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয়ার প্রাক্কালে সবচেয়ে বড় খবর, এ বছর রাজ্যের সব দুর্গাপুজোর মণ্ডপকেই কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষনা করে সব দর্শনার্থীদের জন্যে নো এন্ট্রি জোন করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার, জনস্বার্থ মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

অর্থাৎ এই বছর দুর্গা পূজার মন্ডপগুলিতে শুধু উদ্যোক্তারা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। এই রায় নিয়ে সারা দেশে আরম্ভ হয়েছে নানান প্রতিক্রিয়া। তবে আশংকা যে, “কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে, রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গেলে; পুজো-টাই না বন্ধ হয়ে যায়”। এমনটাই ধারনা হাইকোর্টের আইনজীবী ও কলকাতার বেশ কিছু পুজো উদ্যোক্তাদের। এই একই ঘটনা ঘটে; মহারাষ্ট্রে গণেশ পুজোয়।

রাজ্য হাইকোর্টের বিরুদ্ধে, সুপ্রিম কোর্টে গেলে; শীর্ষ আদালতের নির্দেশে গণেশ পুজোটাই বন্ধ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই গণেশ উৎসবের জমায়েতের অনুমতি দেয়নি। ফলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলে, পুজোয় অনুমতি পাওয়া তো দূরের কথা। যেটুকু পুজো হচ্ছিল, তাও না বন্ধ হয়ে যায়; অনেকেই এমনটাই আশঙ্কা করছেন।

উল্লেখ্য যে, রাজ্যে লাগাতার বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই এই কড়া নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার ব্যাপারে পুলিশকে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ লিফলেট আকারে রাজ্যের প্রতিটি পুজো কমিটির কাছে পৌঁছে দেবে পুলিশই।
আদালতের বিধি কতটা মানা হল সে বিষয়ে পুজোর পরেই বিস্তারিত তথ্য আদালতে জমা দিতে হবে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে।

আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সারা রাজ্যে পুজোয় কেমন ভিড় হল না হল, নির্দেশ কেমন কার্যকর হল তা লক্ষ্মী পুজোর চার দিনের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা সহ সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাসের পর মাস বন্ধ স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত। মারণ ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ফলে এই অবস্থায় পুজো হোক, কিন্তু উৎসব নয়। এই দাবি জানিয়েই কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রাক্তন কর্মী অজয়কুমার দে। হাওড়ার বাসিন্দা সেই ব্যক্তির দায়ের করা মামলারই শুনানি চলছিল কিছুদিন ধরেই।

সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মুখ্যসচিবকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্লু প্রিন্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সোমবার রাজ্যের তরফে কোনও ব্লু প্রিন্ট জমা দেওয়া হয়নি বলে সুত্রের খবর। এই জনস্বার্থ বিষয়ক মামলার রায়ে আদালত বলেছে, ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। কারণ দুর্গাপূজার সাথে বাঙালির আবেগ জড়িত। তাই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকলে সেখানে উৎসবপ্রেমীরা জড়ো হয়ে ভীড় এর সৃষ্টি করবেই। ফলে সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকবে না।

সুতরাং এই মহামারীর সময়ে ভীড় জমানোর উদ্দেশ্যে উৎসবে অনুমতি দেওয়া যায় না। তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তবে অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণ রুখতে পুজো দর্শনে যে ভাবে হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করল, তা এক ঐতিহাসিক রায় বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, চলতি বছরে রাজ্যের পুজো মণ্ডপগুলি দর্শক শূন্যই থাকবে। প্রতিটি পুজো মণ্ডপ চত্বরকে কনটেনমেন্ট জোন হিসেবেই ধরা হবে। ছোট মণ্ডপের ক্ষেত্রে ৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

আর বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে বজায় রাখতে হবে ১০ মিটার দূরত্ব। পুজো মণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় ব্যারিকেড ও নো এন্ট্রি লাগাতে হবে। পাশাপাশি সংক্রমণ রুখতে সচেতনতামূলক প্রচারেরও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আর রাজ্যের প্রতিটি পুজোর ক্ষেত্রেই এই রায় প্রযোজ্য হবে। এছাড়া কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছেন, বড় পুজোর ১০ মিটার ও ছোট পুজোর পাঁচ মিটারের মধ্যে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। মণ্ডপের শেষ অংশ থেকে দূরত্বের পরিমাপ করতে হবে।

স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় পুজো কমিটির আদালতের বিধি কার্যকর করবে। বড় পুজোর ক্ষেত্রে ২৫ জন এবং ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ১৫ জন মণ্ডপের ভিতর পুজোর কাজ করতে যেতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষকে তাঁদের সদস্যদের নাম এর তালিকা জমা দিতে হবে। যদিও কোন্ পুজো ছোট বা কোন্ পুজো বড় তা ঠিক করবে পুলিশ। যদিও এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকার পুজোর বিধি সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। সে ব্যাপারে আদালত বলেছে, অত্যন্ত সৎ উদ্দেশ্য। কিন্তু শুধু ইচ্ছে থাকলেই হবে না। তাকে প্রয়োগ করতে হবে।

এদিন দুর্গা পুজোর অনুমতি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ঐতিহাসিক রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, পুজোর এরিয়া ব্যারিকেড করতে হবে’, ‘নো এন্ট্রি বোর্ড লাগাতে হবে’, আর এই নির্দেশ রাজ্যের সব পুজোর জন্যই প্রযোজ্য। তবে এই নির্দেশ আদতে কতটা মানা হল, লক্ষ্মীপুজোর পর তা হলফনামা সহকারে জানাবেন ডিজিপি, পুলিশ কমিশনার। ৫ই নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে হলফনামা। এদিন হাইকোর্ট বলেছে, ‘পুলিশের গাইডলাইনে সদিচ্ছা আছে, কিন্তু তা বাস্তবে দেখা রূপায়িত হতে যাচ্ছে না’।

বাজারে যা ভিড়, পুজোর ৫ দিন তার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যায় না। তবে ভার্চুয়ালে পুজোর কভারেজ করা যেতে পারে। ৬ মাস স্কুলে যায়নি পড়ুয়ারা, সেখানে পুজোকে কীভাবে অনুমতি দেওয়া যায়? যেখানে ছাত্ররা শৃঙ্খলাপরায়ণ, সেখানে কীভাবে পুজোর অনুমতি? যেখানে মানুষের জীবন সঙ্কটে, সেখানে কী ভাবে উৎসব এর অনুমতি? সতর্কতা নিয়ে সদিচ্ছা আছে রাজ্যের, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা নেই’ বাংলায় স্বাস্থ্য-সহ একাধিক পরিষেবা পর্যাপ্ত নয়। পুজোর বিষয়ে কেন আদালত হস্তক্ষেপ করল সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিচারক।

আদালত জানিয়েছে, এখনও স্কুল-কালেজ স্বাভাবিক ভাবে খোলেনি। বাচ্চারা মাঠে খেলতে যেতে পারছে না। দিনের পর দিন সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। অগুনতি মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রতি ২৪ ঘন্টায়। চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন ভিড় কমাতে। এইরকম গুরুতর পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়বেন তা হতে দেওয়া যায় না। সেই মর্মেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়ে। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক রায় জানান কলকাতা হাইকোর্ট।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply