কলকাতা পুলিশের “পাগড়ি কান্ডে” মুখ পুড়তে চলেছে কার?

0

HnExpress ১২ই অক্টোবর, অরুণ কুমার, কলকাতা ঃ কলকাতা পুলিশের “পাগড়ি কান্ডে” মুখ পুড়তে চলেছে কার? সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল ও তাদের যুব মোর্চার পূর্বঘোষিত অনুযায়ী নবান্ন অভিযানকে ঘিরে একটি ভিডিও সমগ্র রাজ্য তো বটেই দেশ, বিদেশে তুমুল আলোড়ন ও বিতর্ক এর সৃষ্টি করেছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জনৈক শিখ যুবককে রাজ্য পুলিশের কয়েকজন মিলে টানা হ্যাচড়া করছে।

আর ধস্তাধস্তিতে তার পাগড়ি খুলে যায়, কিন্তু তার পরেও তাকে চার পাঁচজন মিলে পেটায় ও পুলিশভ্যানে তোলে। সেই ধৃত যুবক যার কাছ থেকে বেআইনি ভাবে অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল বলে কলকাতা পুলিশের অভিযোগ। এরপরই সুন্দর একটি ছবি শুট করে নিয়ে সেটা আবার সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয়। পুলিশ ভ্যানে তোলার আগে ছবিতে পেছনে দুজন কনস্টেবল সহ সেই যুবকটিকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে।

এবং এই ছবি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে সব ঠিকঠাক আছে। ওই রাজনৈতিক দলের নবান্ন অভিযানের সময় ধৃত এই যুবক জনৈক রাজনৈতিক নেতার দেহরক্ষী বলে জানা গিয়েছে এবং তার কাছ থেকে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি উপযুক্ত লাইসেন্স এবং অনুমতি রয়েছে বলে দাবি করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সেটা স্বীকার করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এবার প্রশ্ন হল, তাহলে আসল রহস্যটা ঠিক কোথায় ?

বিষয়টি যেহেতু এখন আদালতের বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই পরবর্তী সময়ে আদালত কী রায় দেয় তার জন্য অপেক্ষায় জনগণ। কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কতকগুলি প্রশ্ন উঠে এসেছে, যা শুধু প্রাসঙ্গিকই নয় জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বলা যায়। যেমন, যারা পুলিশ-প্রশাসনকে এই ভাবে ব্যবহার করে নিজেদের পতনকে তরান্বিত করছেন তার কি সত্যি কোনো দরকার ছিল?

একটা সামান্য বিষয়কে ঢাকতে যত ধরনের মস্তিষ্ক প্রসূত কায়দা-ফন্দি-চাতুরির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে, এসব খুব জরুরি ছিল কি? এমনই সব প্রশ্ন উঠে আসছে বার বার। এই পাগড়ী বিতর্ককে হালকা করতে প্রথমে পুলিশ বেআইনি ভাবে অস্ত্রের গল্প সংবাদমাধ্যমেকে বলে। দ্বিতীয়ত, রাজ্য পুলিশ তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পরপর দুবার বক্তব্য জারি করে নিজেদের অবস্থানকে অটুট রাখতে।

তারপর ড্যামেজ কন্ট্রোলের অন্যতম প্রয়াস, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি ভূপেন্দর সিং এর মূল্যবান বক্তব্য। এদিকে কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটেও একটা দায়সারা ভাবে দায় মুক্ত হওয়ার প্রয়াস দেখা গিয়েছে এই পাগড়ি কান্ডের পর। আরও একটা প্রশ্ন জোরালো ভাবে দেখা দিয়েছে, তা হল পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই পুলিশ বাহিনীর অদ্ভুত রকমের অদক্ষতা আর অশৃংখলতা।

একজন শৃংখলাপরায়ন প্রাক্তন সামরিক কর্মীর সাথে অসংবেদনশীল অমানবিক ব্যবহার, যা তিন-চারটে ভিডিও ফুটেজ দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে। যেখানে সেই অভিযুক্তকে বারবার নিজের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে কিন্তু তার কথা শোনার চাইতেও কলকাতা পুলিশের কিছু জওয়ানরা তাকে আঘাত করতে বেশি আগ্রহী ও উৎসাহী হয়েছে, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনা থেকে প্রশ্ন উঠে আসছে যে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা দক্ষ এই পুলিশ বাহিনী।

কতটা প্রশিক্ষিত এই অর্গানাইজড ডিসিপ্লিন ফোর্স? রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যত নিজেরাই নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা। উল্টে তাঁরা উশৃংখলতা পরিচয় দিচ্ছে, যা তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবের পরিচয় বহন করছে বলে আওয়াজ উঠেছে। আর এমনই একটা পুলিশ বাহিনীকে “স্কটল্যান্ড পুলিশ” মডেল কি করে বলা যেতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ভাবার বিষয় হলো, রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনে শিখ পুলিশ অফিসার-আমলা যে কেউ নেই তাও নয়। তবুও শিখদের পাগড়ি ও মাথার লম্বা চুলের মর্যাদা সম্পর্কে রাজ্য পুলিশ বাহিনী যে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নয় সে বিষয় বিন্দুমাত্র সংশয় নেই তা ভিডিও ক্লিপিংয়ে প্রমাণিত। ‌ বলবিন্দর সিং নামের এক শিখ দেহরক্ষীকে নিয়ে রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকজন যে তুর্কিনৃত্য দেখালেন তা একেবারেই দৃষ্টিসুখকর ছিল না।

সত্যি কথা বলতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত বালখিল্য উপস্থিত বুদ্ধিহীনতার পরিচয় রেখেছে এই রাজ্যে পুলিশের একাংশ জাওয়ানদের ভূমিকা। যা রাজ্যের শুভবুদ্ধি মানুষের সামনে, দেশের সামনে এবং সারা বিশ্বের কাছে মাথা হেঁট করে দিয়েছে বলে মনে করছে বিরোধী মহলের একাংশ। যেখানে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ও দক্ষতা সম্পর্কে তুলনা করা হচ্ছে, সেখানে রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তুলনা করছেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পুলিশের দক্ষতার সঙ্গে।

উপরন্তু, পুলিশ দিবস পালনের মাধ্যমে তাদেরকে উজ্জীবিত করছেন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, এক ধরনের অদক্ষমুলক, অপ্রস্তুতি সুলভ আচরণ। যার ফলে কোনোরকম স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও উপস্থিত বুদ্ধির সঙ্গে সমীকরণ বলুন বা রসায়ন বলুন তা মেলানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে বার বার এগুলোকে দায়সারা, দায়িত্বহীন ভাবে দুর্বল যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাওয়া হচ্ছে বলে দাবী বিরোধীদের।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply