“সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বাড়ছে নানান ধরনের অপরাধ মূলক ক্রিয়াকলাপ, সক্রিয় হচ্ছে অপরাধ চক্রও”
HnExpress ২৬শে অগাস্ট, অরুন কুমার, বারাসাত ঃ বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বাড়ছে নানান ধরনের অপরাধ মূলক ক্রিয়াকলাপ, সক্রিয় হচ্ছে অপরাধ চক্রও”। একদিকে লকডাউন আর অন্যদিকে করোনা মহামারী প্রতিরোধে কাজ হারানোর যে প্রবণতা সেটা আমরা এই সময়ে বেশ দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি আরও যেটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তা হল, এই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে নয়তো প্রেমের প্রলোভন অথবা চাকরি দেওয়ার নাম করে বাড়ছে যৌন হয়রানির মতো বিকৃত মানসিকতা।
একশ্রেণীর অসাধু অসামাজিক মানুষের চক্র দিনের পর দিন ব্যবহার করছে এই সোশ্যাল মিডিয়াকে। ফেসবুক থেকে আরম্ভ করে হোয়াটসঅ্যাপ এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার জায়গাগুলোকে ব্যবহার করে চলেছে অপরাধ মূলক কাজের জন্য বা নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে। এতদিন ছিল মিথ্যা প্রেমের প্রলোভনে ফাঁসিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিস ইউজ করা। আর এখন লকডাউনের জেরে কর্মহীনতার সুযোগ নিয়ে চাকরি বা কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিশেষ করে মহিলাদের, গৃহবধু, কলেজ পড়ুয়া, বেকার মেয়েদেরকে শোষণ করার কর্মকান্ডের নতুন আখড়া হয়ে উঠেছে এই সোশ্যাল মিডিয়া।
এদিকে রাজ্যে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে বার বার এই ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলেছে। সম্প্রতি এই ধরনের আরেকটি মারাত্মক অভিযোগ উঠে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত বারাসাত অঞ্চল থেকে। জনৈকা যুবতি যিনি বারাসাতেরই একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের সদস্য, লকডাউনের জেরে কর্মহীনতার জন্য স্বাভাবিক কারণেই গ্রুপে দেওয়া চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী হয়ে খোঁজ করতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, নাম মধুমিতা চক্রবর্তী।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে ধরনের প্রতারণা চক্রের সক্রিয়তা এবং এই বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রকারান্তরে এই চক্রের বা ব্যাক্তির যে অসৎ উদ্দেশ্য তা ফাঁস করে দেওয়ার সাহসিকতা দেখিয়েছেন তা আগামী দিনে সব শিক্ষিত সচেতন মেয়েদের জন্য একটি বার্তাও বহন করেছে বটে। এ ধরনের বরিষ্ঠ পোষ্টের মাধ্যমে এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
তিনি কি কি বলেছেন এ বিষয় তাঁর নিজের জবানবন্দিতে, আমরা সেই বিষয়টি তুলে ধরছি আপনাদের সামনে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী জানা গেছে যে, প্রতারক ও অশোভনীয় আচরণকারী ব্যাক্তিটির নাম কৌস্তুভ মাধব চ্যাটার্জি, থাকেন বারাসাতেই। তার প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থাতে Assistant Manager and Technical Head পোস্টে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি সেই অফিসেই কিছু Job Vacancy এর জন্য বারাসাত রেসিডেন্সিয়াল (অফিসিয়াল) সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে তা পোস্ট করেন।
আর সেই পোস্ট দেখেই নাকি মধুমিতা চক্রবর্তী তার সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করেন। তাঁরই সম্প্রতি করা একটি পোস্ট থেকে জানা গেছে যে, তিনি কিছু দিন যাবৎ একটি ভালো চাকরির সন্ধানে এই গ্রুপটি নিয়মিত ফলো করছিলেন। আর তারপরই এই কৌস্তুভ মাধবের করা পোস্ট দেখে আগ্রহী হয়ে যোগাযোগ করেন। এবং কৌস্তুভ এর কথা অনুযায়ী তার হোয়াটসঅ্যাপে বায়োডাটা ও কিছু নর্মাল সেল্ফি ছবিও সেন্ড করেন মধুমিতা।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তারপরই তাঁকে একটা ইন্টারভিউ এর জন্য গত শনিবার নিজের অফিসে ডেকে পাঠান কৌস্তুভ। যথারীতি তিনি পোঁছালে পরে তাঁর ইন্টারভিউও নেওয়া হয়। এবং তাঁকে বাইরে বসতে বলে অন্য আরেকটি মেয়েকে ইন্টারভিউ এর জন্য ভেতরে ডাকা হয়। তিনি আরও বললেন যে, তার কিছুক্ষণ পরই তাঁকে কৌস্তুভ চলেও যেতে বলেন এই বলে যে, তাঁর সিলেকশন হয়ে গেছে। বাকিটা তিনি তাঁকে ফোনে জানিয়ে দেবেন।
মধুমিতা চক্রবর্তীর সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা ভাইরাল হওয়া অংশ থেকে আরও জানা যায় যে, সেদিন ইন্টারভিউ দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসার কিছু পরেই বাড়ি ফেরার পথে ফোনে ম্যাসেজ করে কৌস্তুভ মাধব চ্যাটার্জি তাঁকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এই জবটি পেতে ইচ্ছুক? মধুমিতা উত্তরে হ্যাঁ জানালে সে তাঁর কাছে কিছু অ্যাট্রাকটিভ ছবি চায় তাদের বসকে ইম্প্রেশ করে মধুমিতার কাজটি পাঁকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে। বেশ কিছু ছবিও দেন মধুমিতা চক্রবর্তী।
কিন্তু তারপরও কৌস্তুভ আরও বেশি রকম অ্যাট্রাকটিভ ছবি চাইলে পরেই মধুমিতা বেঁকে বসেন, এবং তিনি বলেন যে নরম্যাল ছবি দেখে যদি কাজটা হয় তবেই তিনি জবটা করবেন। নতুবা অ্যাট্রাকটিভ ছবি দিয়ে তিনি কাজ পেতে আগ্রহী নন। তিনি এও বলেন যে, আমি সেই ধরনের মেয়েই নই, এসব ছবি দিয়ে কাউকে ইম্প্রেশ করে চাকরি পেতে ইচ্ছুকও নই মোটেও।
কিন্তু বর্তমানে চাকরি দেওয়ার নাম করে বেশ কিছু ভুইফোঁড় সংস্থা এবং কিছু অসাধু ব্যক্তি বিশেষ এধরনের কাজ করেই চলেছে। তবে যাতে এই ব্যাক্তিটি আর এই ধরনের জালিয়াতি করতে না পারে সেই বিষয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই মধুমিতা চট্টোপাধ্যায় সোস্যাল মিডিয়ার এই গ্রুপে কমপ্লেইন পোস্টই শেয়ার করেন। তাঁর এই বিস্তারিত ও বিষ্ফোরক কথা গুলো যেভাবে তিনি সমস্ত তথ্য প্রমাণ সহকারে তুলে ধরেছেন তা নিঃসন্দেহে তাঁর একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বলা যেতেই পারে।
মধুমিতা চক্রবর্তী যিনি বারাসাতের মতো জায়গা থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধ প্রবনতা যে কিভাবে আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে চলেছে সেই বিষয়ে সতর্ক করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষকে। সেই সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের কাছেও তা এক নজির এবং সুরক্ষার বার্তাবহ। বলা যায় এর থেকে হয়ে তো আগামীতে আরও অনেকেই সতর্ক হবেন। আর যারা এখনও এই সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া কাজের প্রলোভনে সাড়া দিয়ে সতর্ক হবেন না, তাদের জন্য আগামীতে রয়েছে সমুহ বিপদের সম্ভাবনা।
যদিও গতকালই সেই বেসরকারি কোম্পানির থেকে এই ঘটনার সাথে তাঁরা কোনো ভাবেই যে জরিত নয় সে বিষয় অবগত করেন আমাদের সংবাদ মাধ্যমকে, সাথে এই ধরনের অসভ্যতা ও নোংরা কার্যকলাপকে তীব্র ভর্ৎসনাও করেন তাঁরা। এবং তারই পাশাপাশি নিজেদের সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযুক্ত কৌস্তুভ মাধব চ্যাটার্জিকে ইমেইলে একটি সাসপেন্ড লেটারও ইস্যু করা হয়। পরে আজ তাকে পুরোপুরি স্যাকও করা হয় অফিসিয়ালি ট্রামিনেশন লেটার দিয়ে। বর্তমানে লকডাউনের মধ্যে কাজ পাওয়া হলো একটা অতিবড় প্রয়োজনীয় বিষয়, কিন্তু নিজের আত্মসম্মানকে বলি দিয়ে কখনোই কোনো মিথ্যে প্রলোভনে বা ফাঁদে পা দেবেন না।
তথ্যসুত্র ও চিত্র ঃ সোশ্যাল মিডিয়া।