ফুটপাত জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে এগিয়ে চলেছে প্রবীণ ও নবীনের যুগলবন্দী
HnExpress রূপা বিশ্বাস, কলকাতা ঃ একমাত্র ফুটপাতই তাদের আস্তানা। প্রতিনিয়ত সব কষ্টকে উপেক্ষা করে ফুটপাতেই জীবন কাটছে বৃদ্ধা সন্ধ্যা অধিকারি এবং তার নাতনি পুজার। ভবানীপুর গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রি পুজা। শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি রোডের বিজলী সিনেমা হল সংলগ্ন ফুটপাতেই তাদের আস্তানা। সকালে নাতনিকে স্কুলে পাঠিয়ে লোকের বাড়ি বাড়ি পরিচিকার কাজ করে বেড়ান বছর সত্তরের উর্ধে ওই মহিলা।
বিকাল চারটে নাগাদ নাতনি ফিরলে তাকে খাইয়ে, তারপর পড়াশুনায় বসে পড়ে পুজা ও সাথে তার ছায়াসঙ্গী দিদিমা। একটা জল চৌকির উপরে বই রেখে রাত পর্যন্ত পড়াশুনো চলতে থাকে। একটা মোটা চশমা পরে নাতনিকে হাতে ধরে শিখিয়ে দেন লেখার নিয়মকায়দা, কখনো বা পড়ে শোনান বাংলা গদ্য। এই ভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন সহ পড়াশুনোর পাঠ। তারপর রাতের খাবার খেয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন প্রবীন আর নবীনের যুগলবন্দী।
যেকোনো রকম বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন।
প্রতিনিয়ত এই ভাবেই দিদিমা অপত্যস্নেহ আর ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করে তুলছেন স্নেহের নাতনিকে। সন্ধ্যা দেবির স্বপ্ন, নাতনিকে বড়ো ডাক্তার বানানোর। কিন্তু এতো কষ্টের করে রাস্তায় দিন যাপন করে কিভাবে সেই স্বপ্ন সফল হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত তিনি। যদিও এই বিষয় নিয়ে পুজার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনিতা চৌধুরী বললেন, এইভাবে রাস্তায় দিন যাপন করে পড়াশোনা চালানো খুবই কষ্টের। ফুটপাতে সৌচাগারের সহ সবথেকে বড়ো প্রশ্ন বা সমস্যা তার নিরাপত্তা নিয়ে। কারণ সে যে একটি কন্যা সন্তান।
স্কুলের বাকি কয়েকজন শিক্ষকরা বলেন, পুজা পড়াশোনায় বেশ মনযোগী। ওর আগ্রহও আছে কিন্তু এই মুহুর্তে মেয়েটার একটা ভিষণ নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন। ফুটপাতে কোনো সমস্যায় পড়লে ওকে কেইবা দেখবে? তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রীটির জন্য শিক্ষা দপ্তরের কাছে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন। যদিও নাতনিকে অন্য আশ্রয়ে পাঠানোর কথা ভাবতেই চোখে জল এসে যায় প্রবীণ দিদার।
তিনি বললেন, স্বামী মারা যাবার পর থেকেই তিনি একাই আগলে বড়ো করেছেন বাবা-মায়ের ফেলে যাওয়া এই সন্তানকে। আমি থাকতে ওর কিছু হতে দেবনা। আর দিদাকে জড়িয়ে ধরে তার আদরের নবীন সাথী বলে ওঠে, আমার দিদা থাকতে আমার কোনো ক্ষতি হবেনা। আমি আমার দিদার কাছেই খুব ভালো আছি।
ছবি ও তথ্যসূত্র ঃ সংগৃহীত।