বাংলাদেশ থেকে পাচার করে আনা নাবালিকাকে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করার অপরাধে ১০ বছরের স্বশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিল আদালত

0

HnExpress ওয়েবডেক্স নিউজ ঃ এটি ২০১৫ সালের ঘটনা। ১৪ই ডিসেম্বর, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটে (AHTU) গোপন সোর্স মারফত একটি খবর আসে। একজন নাবালিকা মেয়েকে নাকি বাংলাদেশ থেকে পাচার করে আনা হয়েছে সোনাগাছির নিষিদ্ধপল্লিতে।

সুত্রের খবরে, সেই দিনই সোনাগাছির দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের একটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের বিশেষ টিম। যাতে আগে ভাগেই খবর পেয়ে মেয়েটিকে সরিয়ে না ফেলতে পারে কেউ, তাই সেদিন সোনাগাছিতে ঢোকার মুখে টিমের সবাই ছিলেন সাদা পোশাকেই। তবে ইনফরমেশন অনুযায়ী সেই বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয় নাবালিকা মেয়েটিকে। ২ দিন আগেই নাকি তাকে আনা হয়েছিল কলকাতায়। তারপর আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে। জোর করে নামানো হয়েছিল দেহব্যবসাতেও। সাথে গ্রেপ্তার করা হয় বাড়ির মালকিন তানিয়া মণ্ডল ওরফে তানিয়া খাতুনকেও। তিনিই যে এই নারীপাচার চক্রের অন্যতম মাথা, তা নিয়ে আর সন্দেহই ছিল না তদন্তকারী অফিসারদের।

পুলিশ সুত্রের খবর, কিশোরী মেয়েটির বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার বটিয়াঘাটায়। দুঃস্থ পরিবারের সন্তান। চার ভাই-বোনের মধ্যে সেই কনিষ্ঠ। বাবার সামান্য চায়ের দোকান। বাজারে ধার-দেনাও হয়েছিল ভালোই। আর দুর্ভাগ্যবশত সেই গ্রামেই যাতায়াত ছিল তানিয়া মণ্ডলেরও। তানিয়ার বাবা-মা সেখানেই থাকেন। সেই সূত্রে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেও পরিচয় ছিল তানিয়ার। তবে তার পেশা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না গ্রামের কারোরই, এমনকি তার পবিবারও জানত না তাদের মেয়ে আসলে কি কাজ করে। তারা শুধু জানত, যে তানিয়া কলকাতায় থাকে, কাজ করে আর বেশ ভালোই রোজগার করে।

এদিকে, সংসারে অভাবের সুরাহা হবে এই আশায় তানিয়ার কাছে কলকাতায় একটা কাজের জন্য আবদার করে কিশোরী মেয়েটি। চালাক তানিয়া তা শুনেই তাকে কাজের আশ্বাস দেয়। মোটা মাইনের কাজ, মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই পরিবারের সমস্ত দেনা শোধ হয়ে যাবে বলে প্রলোভন দেখায় মেয়েটির অসহায়তার সুযোগ নিয়ে। ওদিকে তানিয়ার কথা শুনে রাজি না হওয়ার কোনো কারণই ছিল না মেয়েটির এবং তার পরিবারের। কারণ তানিয়া যে নারীপাচার চক্রের সাথে এবং দেহব্যবসার সঙ্গে পেশাগত ভাবে যুক্ত, তা ভাবতেই পারেননি কেউ।

আরও গোপন সুত্র অনুযায়ী জানা যায়, এরপর কলকাতায় ফিরে আসে তানিয়া। কিন্তু মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল প্রতিনিয়ত । আর তানিয়ার কথামতোই তানিয়ার মা নির্দিষ্ট দিনে কিশোরী মেয়েটিকে কাজের সংস্থান হওয়ার আশায় নিয়ে আসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। সেখানে অপেক্ষা করছিল আহমেদ আলি নামের একজন নারী পাচারকারী দালাল। যে মেয়েটিকে নিয়ে আসে দুর্গাচরণ স্ট্রিটের এই বাড়িতে, যেখানে রাতে অন্ধকারে চলে অপহরণ বা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে নিয়ে আসা নারীদের দেহব্যবসার জলসা। তারপর, তাকেও ঠিক একই কায়দায় আটকে রেখে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করে দুই অভিযুক্ত তানিয়া আর আহমেদ আলি।

If U like publish any type of Advertisements, Plz contact Us.

তবে ধরা পড়ার পরে সেই তানিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আহমেদ আলিকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতেন অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের তদন্তকারী অফিসারেরা। অবশেষে, ২৬ ডিসেম্বর, কলকাতা এয়ারপোর্টের ১ নং গেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আহমেদ আলিকে। জেরার মুখে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নেয় দুই মূল অভিযুক্ত তানিয়া ও আহমেদ। তাদের কাছ থেকে আরও জানা যায় যে, বেশ কিছুদিন ধরেই তারা এই নারীপাচারের সঙ্গে যুক্ত। কাজ দেওয়ার অছিলায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নানা প্রান্ত, নানা জেলার নানা শহর ও বিশেষত গ্রাম থেকে বিভিন্ন মেয়েদের তারা নিয়ে আসত কলকাতায়। তারপর বাধ্য করত দেহব্যবসায় নামতে।

সেই মর্মেই অভিযুক্ত তানিয়া আর আহমেদের বিরুদ্ধে নারীপাচারের মামলা রুজু হয়। সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ চার্জশিটও জমা দেওয়া হয় যথাসময়েই। আদালতে প্রয়োজনীয় হাজিরার পর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে নিজের পরিবারের কাছে ফিরেও যায় মেয়েটি।

গতকাল সেই কেসেরই রায় বের হয়। অভিযুক্ত তানিয়া আর আহমেদ আলি— দু’জনেরই ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারক। সেইসঙ্গে তানিয়ার ৩৪,০০০ টাকা আর আহমেদের ১০,০০০ টাকার জরিমানার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। আর জরিমানা অনাদায়ে হবে অতিরিক্ত ৬ মাসের কারাদণ্ড। তবে জরিমানার এই সমস্ত টাকাই ক্ষতিপূরণ বাবদ যাবে কিশোরী মেয়েটির কাছে, এমনটাই পুলিশ সুত্রের খবর। আর এই কেসের তদন্তকারী অফিসার ছিলেন অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের ইনস্পেকটর গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল(বর্তমানে অবসারপ্রাপ্ত)। আজ কলকাতা গোয়েন্দা বিভাগ পুলিশের তৎপরতায় অন্ধকারে হাড়িয়ে যাওয়া একটি মেয়ে পুনরায় তার দেশ আর পরিবারকে ফিরে পেল।

ছবি ও তথ্যসূত্র ঃ সোস্যাল মিডিয়া।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply