বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে সহবাস, ৩ দিনের মধ্যে চার্জশিট, ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড যুবকের
HnExpress ২৩শে ফেব্রুয়ারী, ওয়েবডেক্স নিউজ, কলকাতা ঃ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে বলপূর্বক সহবাস করার অভিযোগে গ্রেফতার। ৩ দিনের মধ্যেই চার্জশিট জমা পরে, আর অতঃপর সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণের পরে মহামান্য আদালতের রায় অনুযায়ী ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের সাজা হয় অভিযুক্ত যুবকের। ঘটনাটি গত বছরের ৮ই অক্টোবরের, এদিন টালা থানায় একটি গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ে। এক স্থানীয় মহিলা জানান, তাঁর ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়ে নিখোঁজ।
৭ই অক্টোবর দুপুর ১টা থেকে ১.৩০-এর মধ্যে সে নাকি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আর তারপর থেকে সে আর বাড়িই ফেরেনি। মহিলার আশঙ্কা, তাঁর মেয়েকে হয়তো অপহরণ করেছে কেউ। নিখোঁজ মেয়েটির তদন্তের স্বার্থে তাঁর মোবাইল নম্বর তদন্তকারী অফিসারদের দিয়ে যান সেই মহিলা। শুরু হয় প্রযুক্তি-প্রহরা। খবর দেওয়া হয় সোর্সদেরও। জানা যায়, গার্ডেনরিচ এর এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেই নাবালিকা মেয়েটির।
আর মেয়েটির পাশাপাশি সেই যুবকও নাকি বেশ কয়েক দিন ধরে নিরুদ্দেশ। তদন্তকারী অফিসারদের অঙ্ক মেলাতে আর অসুবিধে হয়নি। নিখোঁজ কিশোরীর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে জানা যায়, তার অবস্থান তখন নিউ দিল্লিতে। এই কেসের তদন্তকারী অফিসার সাব ইনস্পেকটর মানসী মাইতি রায়ের নেতৃত্বে টালা থানার বিশেষ টিম দ্রুত রওনা দেয় নিউ দিল্লির উদ্দেশ্যে।
১৯শে অক্টোবর, জামিয়া নগর থানার সাহায্য নিয়ে বাটলা হাউজ এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু মেয়েটির খোঁজ তো মেলেইনি, সাথে খোঁজ মেলেনি সেই যুবকেরও। প্রথম তল্লাশি ব্যর্থ হলেও মেয়েটির খোঁজ জারি থাকে। অবশেষে, ২রা নভেম্বর, তদন্তকারী টিমের এক ভারপ্রাপ্ত অফিসারের থেকে পাওয়া নিশ্চিত খবরের ভিত্তিতে টালা অঞ্চলেরই নিত্যগোপাল চ্যাটার্জি লেনের সামনে থেকে কিশোরী মেয়েটিকে উদ্ধার করে টালা থানার বিশেষ টিম।
মেয়েটি তাঁর জবানবন্দিতে জানায় যে, কিছুদিন আগে আজম আলি ওরফে মহঃ শোয়েব নামের একটি যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আজম গার্ডেনরিচের বাসিন্দা, পেশায় শ্যামবাজার হতে মেটিয়াবুরুজ রুটের একটি প্রাইভেট মিনিবাসের খালাসি। পরিচিতিটা ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হতে বিশেষ সময় লাগেনি। কিশোরী মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় আজম। প্রেমের দুর্নিবার আকর্ষণে সেই প্রস্তাবও এড়াতে পারেনি সেই কিশোরী।
বাড়িতে জানানো সম্ভব ছিল না। তাই আজমের পরামর্শ মতো সে পালায় বাড়ি থেকে। তারপর আজম তাকে নিউ দিল্লিতে নিয়ে যায়। সেখানে বিয়েও হয় দু’জনের। যদিও আইনত কোনও নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে বিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ। আর সেই কারণে, বিয়ে করার আগে মেয়েটির বয়স সংক্রান্ত কিছু জাল নথি তৈরি করিয়েছিল আজম। ঘর বাঁধার আশায় এইসবই মুখ বুজে মেনে নিয়েছিল নাবালিকা মেয়েটি।
এরপর একাধিকবার মেয়েটির সঙ্গে সহবাস করে আজম। দু’জনে কলকাতায় ফিরে আসে ১লা নভেম্বর। কলকাতায় ফিরতেই আজমের হাবভাব বদলে যায়। মেয়েটির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় সে। মেয়েটির মেডিকেল রিপোর্টেও সহবাসের প্রমাণ মেলে। আজমের খোঁজ শুরু হয়। বেগতিক বুঝে সে তখন গা ঢাকা দিয়েছে। সোর্সদের খবর দেওয়া হয়।
ফের শুরু হয় প্রযুক্তি-প্রহরা। অবশেষে এই বছরের ২১ জানুয়ারি সন্ধে ৭.৪০ নাগাদ আজমকে তার বাড়ির সামনে থেকেই গ্রেপ্তার করে টালা থানার বিশেষ টিম। তল্লাশিতে আজমের জিম্মা থেকেই উদ্ধার হয় তার ও সেই কিশোরীর বিয়ে সংক্রান্ত সমস্ত জাল নথি।আজম এর বিরুদ্ধে অপহরণ, মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহ এবং পকসো আইনে ( Protection of Children from Sexual Offences Act) মামলা রুজু হয়।
উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ও মেডিকেল রিপোর্ট-সহ চার্জশিট জমা দেওয়া হয় মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই।আর সেই কেসেরই রায় বেরিয়েছে। নাবালিকা মেয়েটিকে অপহরণের অপরাধে আজম আলির ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারক। আর সেক সঙ্গে ১০,০০০ টাকা জরিমানা। তবে জরিমানার ৯০% অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ যাবে কিশোরী মেয়েটির কাছে।
জরিমানা অনাদায়ে সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়বে আরও ৩ মাস। এরই পাশাপাশি পকসো আইনে আজমের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশও দিয়েছেন মাননীয় বিচারক। আর সঙ্গে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা। এক্ষেত্রেও জরিমানার ৯০% অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ যাবে সেই কিশোরী মেয়েটির কাছে। আর এক্ষেত্রেও জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়বে ৬ মাস।
তবে দুটি শাস্তিই বহাল থাকবে একসঙ্গে। অর্থাৎ মোট শাস্তির মেয়াদ হল ১৫ বছর ও জরিমানার অংকটা হল ৬০,০০০ টাকা। চার্জশিট জমা দেওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বিচার প্রক্রিয়া। নিরলস পরিশ্রমে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করেছেন এই কেসের তদন্তকারী অফিসার সাব ইনস্পেকটর মানসী মাইতি রায়।