তৃণমূলকে সমর্থন করার অপরাধে মা নিজের সদ্যজাত সন্তানকে হারালেন

0

HnExpress রূপা বিশ্বাস, উত্তর ২৪ পরগণা ঃ তৃণমূলকে সমর্থন করার জন্য সদ্যজাত সন্তানকে হারালেন অশোকনগর থানার সেনডাঙা এলাকার বাসিন্দা শিখা গঙ্গোপাধ্যায়। অভিযোগে এমনটাই জানিয়েছেন সেই তরুণী। তার অভিযোগ, গত শনিবার সকালে সে তাঁর দু’মাসের ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় তাঁর ভাসুর এবং ননদেরা এসে আচমকা তাঁকে মারধর শুরু করে। যখন তারা শিখাকে মারধর করছিল, তখন তাঁর সন্তানের বুকেও প্রচন্ড আঘাত লাগে। তৎক্ষনাৎ দম বন্ধ হয়ে যায় শিশুটির। সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, চিকিৎসকদের মতে বহু আগেই মারা গিয়েছে মাত্র দু’মাসের বাচ্চাটি। শিশুটির মায়ের অভিযোগ, এদিন উঠান ঝাঁট দিতে গিয়ে অন্য কাজে দেরি হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর ভাসুর এবং ননদেরা আক্রমণ করে তার উপর। তবে তিনি এও বললেন যে, এটি সম্পুর্ন সাজানো একটি পরিকল্পনা, রাজনৈতিক বিবাদের জেরেই মারধর করা হয়েছে তাঁকে। উঠান ঝাঁট দেওয়াটা ছিল এক নিছকই বাহানা মাত্র। তবে এখানে আসল ব্যাপার হল কেন সে তৃণমূলকে সমর্থন করে। যেখানে বাড়িতে শিখা ও তার স্বামীকে বাদ দিলে প্রায় সবাই বিজেপির কর্মী-সমর্থক।

সুত্রের খবর, গত রবিবার এই মর্মে শিখা তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তার ভাসুর সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে পাগলাকে গ্রেফতার করেছে। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে শিপ্রা শর্মা, রিনা মন্ডল, সমাপ্তি গঙ্গোপাধ্যায়, কমলা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায় নামের বাকিরা পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বধু নির্যাতন, মারধর এবং শিশুকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বারাসাতের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর জানিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চলছে। একজনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকি অভিযুক্তরা এখনো পলাতক। তবে পুলিশের তরফ থেকে অভিযুক্তদের তল্লাশি জারি আছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক কলহের জেরে নিত্যদিনই ওই তরুণীর উপর অকথ্য নির্যাতন চলত।

এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অশোকনগর থানার সামনে ভিড় জমান তৃণমূল-সমর্থকরা। তারা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
স্হানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিমান রায় বললেন, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় ওই তরুনীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তরুণীকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়ানোর জন্য জোড়াজুড়িও করে ছিল। তবে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি তরুণী। তারপর থেকেই নানান ভাবে নানান সময়ে তাঁকে বিজেপিতে নাম নথিভুক্ত করার জন্য জোর করতো তাঁর পরিবার। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার রাগেই মেয়েটিকে মারধর করা হয়। এবং সেই মারধরের জেরেই মারা যায় কোলের ছোট্ট শিশুটি।

বারাসাতের সাংসদ কাকলি দস্তিদার এহেন অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে এটা ভাবাই যায় না। সুত্র অনুযায়ী, ধৃত সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে পাগলা বাবু বিজেপির স্থানীয় যুব মোর্চার সভাপতি। তিনি তার সাফাইয়ে বললেন, বাড়িতে ঝামেলা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু কাউকে মারধর করা হয়নি। তিনি আরও বললেন, বাচ্চাটি জন্ম থেকেই নাকি অসুস্থ ছিল। শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি নিজেই। এর মধ্যে রাজনৈতিক কোনো যোগাযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়।

এদিন বারাসাতের বিজেপির সাংগঠনিক মহিলা মোর্চা সভানেত্রী ভাস্বতী সোম বললেন, শিশুটির মৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক। তবে এই ঘটনা মূলত সম্পত্তি, জমি লজমা ও বিবাদের জেরে ঘটেছে। এই ঘটনার মধ্যে কোন রাজনৈতিক কারণ নেই।
গত শনিবার ঘটনার পরে ছোট্ট শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকরা জানান, শ্বাস আটকে মৃত্যু হয়েছে বাচ্চাটির। তবে অন্যদিকে অভিযোগে সন্তানহারা শিখা জানান, তিনি যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তখনো নানান কারণবশত তাঁকে মারধর করতো শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মূলত তৃণমূল করার জন্যই কয়েকবার তাকে বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার সকালে উঠান ঝাঁট না দেওয়ার শিখার ভাসুর এবং ননদ-এরা এসে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে মাথা মাটিতে ঢুকে দেয়, এবং চড় কিল ঘুষি মারে। তখন শিশুটিকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন শিখা। তাকে যখন মারধর করা হয় সেই সময়ই আঘাত লাগে শিশুটির উপরেও, যার জন্য শ্বাস আটকে মারা যায় বাচ্চাটি। শিখা বললেন ঝাঁট দেওয়াটা নিতান্তই বাহানা মাত্র। আসল কারণ আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই তৃনমূল কংগ্রেস করি, আর সেই রাগেই আমার বাচ্চাটিকে ওরা মেরে ফেললো।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply