দশমী নয়, অষ্টমীতেই সিঁদুর খেলে রাজগঞ্জের পাল বাড়ি—
HnExpress সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী, হাওড়া ঃ ২০০ বছর আগের জৌলুস হয়তো থিতিয়েছে কিছুটা। কিন্তু বনেদি রীতি বা পুজোর ধর্মীয় আচার-উপাচারে খামতি নেই এতটুকু। দু’শতক আগে যে পুজোর শুরু, তা প্রায় নিখুঁতভাবে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন হাওড়া জেলার সাঁকরাইল রাজগঞ্জের পাল পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের অনেক সদস্যই কর্মসূত্রে বা বিভিন্ন কারণে বাইরে থাকেন। একান্নবর্তী যৌথ পরিবার এখন ছোট হতে হতে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। কিন্তু শরতের আকাশ, কাশফুল আর শিউলির গন্ধ গঙ্গার হাওয়ার ঝাপটায় পাল পরিবারের ঠাকুরদালানে বয়ে আনে আগমনীর বার্তা। বাক্স-প্যাটরা গোছাতে থাকেন ভিন জেলা, রাজ্য বা বিদেশে থাকা এই পরিবারের বাকি সদস্যরা।
শারদোৎসব বছর বছর পুনর্মিলন ঘটায় পাল পরিবারে। রাজগঞ্জের গঙ্গার পাড় লাগোয়া প্রশস্ত ঠাকুরদালান সংলগ্ন সুবিশাল অট্টালিকা। প্রায় ১৮৪ বছর আগে গঙ্গার গ্রাসে পুরানো বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পর এই পরিবারের পূর্বপুরুষ জমিদার নফরচন্দ্র পাল তৈরি করেছিলেন বর্তমান এই বাড়িটি। তবে পাল বাড়ির পুজো তারও আগে থেকে হয়ে আসছে বলে মত পরিবারের সদস্যদের।
জানা যায়, নফরচন্দ্র পালের বাবা চূড়ামণি পালের উদ্যোগে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। চূড়ামণি পাল ছিলেন আন্দুল রাজবাড়ির দেওয়ান। রাজা তাঁর কাজে খুশি হয়ে পুরস্কার স্বরূপ বেশ কিছুটা নিস্কর জমির মালিকানা দেন। পাশাপাশি দেন আশপাশের এলাকায় জমিদারির দায়িত্বভার। সেই থেকেই পুজোর শুরু।
তবে পাল বংশের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল নফরচন্দ্রের হাত ধরে। পারিবারিক জমিদারির পাশাপাশি উদ্যোগপতি ছিলেন নফরচন্দ্র। এখনও এলাকাবাসী এককথায় এন.সি পালের ইটভাটার নাম বলে দেয়। ব্যবসা শুরু করলেন নফরচন্দ্র ওরফে এন.সি পাল। তাঁর আমলেই বিস্তার ঘটলো পাল বাড়ির পুজোর। একচালার প্রতিমা। ঠাকুরদালানেই গড়া হয় প্রতিমার মূর্তি।
মহালয়া থেকে শুরু চন্ডীপাঠ। বৈষ্ণব মতে হয় পাল বাড়ির পুজো। তাই পশুবলির প্রথা নেই। সন্ধিপুজোয় প্রজ্বলিত হয় ১০৮টি মাটির প্রদীপ। আর ঘরে তৈরি মিষ্টি বোঁদে ও অন্যান্য মিষ্টি ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। বিশেষ বৈশিষ্ট্য অষ্টমীতে সিঁদুরখেলা। কিন্তু ঠিক কী কারণে অষ্টমীতে এই সিঁদুরখেলার রেওয়াজ, জানা নেই পাল পরিবারের সদস্যদেরও।
তবে তার জন্য প্রায় দু’শো বছর ধরে হয়ে আসা বনেদি প্রথায় কোনও রদবদল ঘটেনি। বরং প্রাচীন রীতি, ঐতিহ্য, চাকচিক্য বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাল পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।