সরস্বতীর সাথেই বিসর্জনের পথে সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর

0


HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, বিশেষ প্রতিবেদন ঃ অনেকে হয়তো ঘুম থেকেই ওঠেনি, কেউ হয়তো বা খবরের কাগজের পাতা ওল্টাতে ব্যাস্ত, কোনো বাড়ির দোতলার ঘরে অষ্টাদশী রেওয়াজে ব্যাস্ত। এই সবের ফাঁকেও টিভির সামনে কিছু নিরব মুখেদের ভিড়। হ্যাঁ সুর সম্রাজী নেই, নেই ভারতের কোকিলকন্ঠী, নেই কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ছন্দ পতন মাত্র ৯২টি বছর পর। আজ সকাল ৮টা ১২ মিনিটে দেবী সরস্বতীর সাথেই সুর সম্রাজীও বিসর্জনের পথে। চিকিৎসক প্রতীত সামধানি জানান, ‘মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওরের জেরেই মৃত্যু হয়েছে লতা মঙ্গেশকরের।

কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৮ দিন হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন তিনি। জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বর্ষীয়ান গায়িকা। ২৯ দিনের যমে মানুষের লড়াইয়ের পর আজ হেরে গেলেন। করোনা ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে গত ৮ই জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। করোনা মুক্ত হলেও শনিবার ফের তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়, ভেন্টিলেশনেও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবুও ঘটে গেলো জীবনের ছন্দ পতন, শেষরক্ষা হল না আর।

তাঁর অকালপ্রয়াণে ভারত সহ পৃথিবীর অগুণতি মানুষ ও শিল্পী মহল আজ শোকাহত, কারন
শিল্পীদের দেশ, জাত, ধর্ম হয় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কিণী সঙ্গীতজ্ঞ এবং মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। তাঁর মাতা ছিলেন শেবন্তী বোম্বে প্রেসিডেন্সির তালনারের একজন গুজরাতি নারী।

শৈশবে বাড়িতে থাকাকালীন কে এল সায়গল ছাড়া আর কিছু গাইবার অনুমতি ছিল না তাঁর। বাবা চাইতেন তিনি শুধু ধ্রপদী গান নিয়েই পরে থাকুক। জীবনে প্রথম রেডিও কেনার সামর্থ্য যখন হলো, তখন তার বয়স মাত্র আঠারো। কিন্তু রেডিওটা কেনার পর নব ঘুরাতেই প্রথম যে খবরটি তাঁকে শুনতে হয় তা হয়, তা হলো যে কে. এল. সায়গল আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি রেডিওটা ফেরত দিয়ে দেন। “পৃথিবীতে যখন এসেছো তখন অন্তত একটা দাগ রেখে যাও” —কথাটি স্বামী বিবেকানন্দের।

সেই দাগ অর্থাৎ সমাজের, দেশের, মানুষের জন্য কিছু কাজ। কোকিলকন্ঠী তাঁর কন্ঠ দিয়েই গানকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তিনি বাঙালি না হলেও কিন্তু বাংলার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ছিল বড় আত্মিক। প্রায় ১৮৫’র বেশি বাংলা ভাষায় গান রয়েছে তাঁর। সেই সব গান কালজীয় হয়ে উঠেছে তাঁর কণ্ঠে। বাংলা ভাষার প্রতি লতা মঙ্গেশকরের একটা আলাদাই টান ছিল। যেটা বাঙালি সুরকারদের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রেও প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করত।



পুরস্কারের ঝুলিতে রয়েছে ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ একাধিক সম্মাননা। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আগামী ১৫ দিন রাজ্যে বাজবে লতাজির গাওয়া গান। শিল্পীর প্রয়াণে দেশে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা।

সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধে সাড়ে ছ’টায় মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তার আগে লতার প্রভুকুঞ্জের বাড়িতে শায়িত ছিল তাঁর মরদেহ। সেখানেই চলচ্চিত্র জগতের অগুণতি মানুষ ও তাঁর সঙ্গীতপ্রেমী অনুরাগীগণ শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এদিন শোকপ্রকাশ করে অল্লু অর্জুন বলেন, ‘আজ বড়ই দুঃখের দিন। ভারতের নাইটিঙ্গেল লতা মঙ্গেশকরজি আর নেই। একটি যুগের অবসান।

কিন্তু তিনি গানের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে চিরকালই থেকে যাবেন। তাঁর প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং তাঁর আত্মার চির শান্তিকামনা করি।’ টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘আমি আমার ব্যথার কথা বলে প্রকাশ করতে পারব না। দয়ালু এবং যত্নশীল লতা দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তিনি আমাদের দেশে এমন এক শূন্যতা রেখে দিয়ে চলে গেলেন যা কখনও পূরণ করা যাবে না।

ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁকে ভারতীয় সংস্কৃতি জগতের একজন অকুতোভয় মানুষ হিসেবেই চিরজীবন মনে রাখবে। তাঁর সুরেলা কণ্ঠে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার এক অতুলনীয় ক্ষমতা ছিল। আমি লতা দিদির কাছ থেকে সবসময় অগাধ স্নেহ পেয়ে এসেছি। এটাকে আমি আমার সম্মান বলে মনে করি। তাঁর সাথে আমার আলাপচারিতা চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। লতা দিদির প্রয়াণে আমি আমার সহ নাগরিকদের সাথে শোকাহত। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাঁদের সমবেদনা জানাচ্ছি।’

শোকজ্ঞাপন করেন টলিউড খ্যাত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এই খবরে রীতিমতো ভেঙে পড়েন তিনি। ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গানে তাঁর লিপে থাকবে, এ স্বপ্ন ছিল দেশের প্রতিটি অভিনেত্রীর-ই। সেই তালিকায় ছিলেন স্বয়ং ঋতু-ও। ‘লতাজি’-র গানে লিপ মেলাতে পেরে তিনি যে কতটা ভাগ্যবান, সে কথাও এদিন অকপটে জানালেন। সুত্র অনুযায়ী জানা যায় যে, মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে সন্ধ্যে সাড়ে ছটায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সহকারে শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো চন্দনকাঠে শায়িত দেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply