করোনা ভাইরাস মোকাবিলার আবহে কেমন ভাবে সময় কাটচ্ছে সেলেবদের? আজ HN Express এর মুখোমুখি হলেন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মৌবনী সরকার

0

HnExpress ৭ই এপ্রিল, বিশেষ প্রতিবেদন, মুখোমুখি ঃ সারা ভারত তথা রাজ্য জুড়ে নোভেল করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চলছে ২১ দিনের সম্পূর্ণ লক ডাউন। সেই আবহে কেমন ভাবে সময় কাটছে সেলেবদের? তারই সুকুল সন্ধানে আজ HN Express এর প্রতিনিধি অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সামনে “মুখোমুখি”তে রয়েছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী মৌবনী সরকার। কি বললেন তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে, জেনে নিন এক নজরে —


প্রঃ বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মূল অস্ত্র একান্তে ঘরে থাকা, কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
উঃ আমি হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে একটা সুন্দর তথ্য জানি। যে কোন মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন হতে বা নতুন অভ্যাস আত্মস্থ করতে ২১ দিন সময় লাগে। আমি এই ২১ দিন সময়ে নিজেকে ‘ইকো ফ্রেন্ডলি’ মানুষ হিসাবে তৈরী করতে চেষ্টা করছি, এবং সেই অভ্যাসটা নিজের মধ্যে নিয়ে নিচ্ছি। মানে, আমি যখন জল ব্যবহার করব বা বাড়ির আলো-পাখা ব্যবহার করব, সেটা যথাযথভাবে ব্যবহার করব। কোন খাবার নষ্ট করব না। আমি জাঙ্ক খেয়ে ওজন বাড়িয়ে জিমে গিয়ে ওজন ঝরাব না।

 

 

কারণ, এই মুহূর্তে আমার সব থেকে প্রয়োজন যে, এই মুহূর্তে যেটা করলে আমি সব থেকে বেশি খুশি থাকব, আমি সেটাই করব। আমি নিজের ব্যক্তিত্বকে উন্নত করার চেষ্টা করব। আমি একজন অভিনেত্রী, কিন্তু এতদিন আমি খালি এদিক-ওদিক ছুটেই যাচ্ছিলাম। নিজের জন্য বা নিজের অভিনয়কে উন্নত করার জন্য যা যা করার দরকার ছিল, সেগুলো কিছুই করা হচ্ছিল না। গায়করা রেওয়াজ করেন, নৃত্য শিল্পীরা তালিম নেন, তেমন আমাদের আয়নার সামনে বসে মুখের এক্সপ্রেশন নিয়ে কিছু চর্চা আছে, সেগুলো এখন শুরু করেছি নিজের জন্য।

আমি এতদিন অভিনয় করছিলাম কিন্তু আমার অভিনয় চর্চাটা হচ্ছিল না। আমি নিজেকে বড্ড বেশি রকম ভালবাসতে শুরু করেছি। আমি মনে করি এই ২১ দিন একটা ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’ নিজের মধ্যে কিছু ভালো গুন আত্মস্থ করার জন্য। আমি এই ক’দিনে নিজেকে একটা রুটিনে আনতে পেরেছি। আগে আমি রাতের অনেকটা সময় মোবাইলে কাটাতাম, এখন সেগুলো বন্ধ করে নিজের শরীর চর্চা করছি। আমি নিজেকে বাঁধতে পেরেছি দিনের কতটা সময় আমি নিজেকে দেব আর কতটা সময় আমি নেট করব এবং সেখান থেকে আমার জরুরী তথ্য সংগ্রহ করে নেব। আমি ফালতু গসিপ বা ইন্ড্রাস্ট্রিতে আমার কোন সহকর্মীর ‘আন্ডারওয়্যার ফ্ল্যাস’ হয়েছে, সেই নিয়ে মাথা ঘামাব না।

 

 

প্রঃ অনেকে এত দিন ‘লক ডাউন’-এ থেকে অবসাদে ভুগছেন। তাদের অবসাদ তাড়াতে আপনি কি উপদেশ দেবেন?
উঃ হ্যাঁ অনেকেই বলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি হত, বিশেষত বিল গেটসের কোথায় শুনেছি, তাহলে সেটা কোন পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ হত না, সেটা কিন্তু ভাইরাস নিয়েই আক্রমণ হত। আর সেটা বিশ্বাস করার আগেই কিন্তু করোনা ভাইরাস আমাদের দেহে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা অবিশ্বাস্য যে আমরা সত্যিই আক্রান্ত। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়, বিজ্ঞান যেটা বলছে, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ‘খুশির সময়’ সব থেকে বেশি থাকছে।

আর এই মুহূর্তে অবসাদে যাওয়ার তো কিছু নেই। আমাদের সামনে তো একটা দিক খুলে গেল যে, আমরা বাড়িতে থেকেও কত কাজ করতে পারি। এবং বাড়িতে থেকেও কত কিছু করতাম না। আমাদের পরিবার আমাদের থেকে যে ইমোশনাল কোয়ালিটি সময়টা চাইত, সেটা আমরা তাদের দিতাম না। আমাদের মানুষের যে সময়ের মধ্যে কাজ হাসিল করে বাড়ি ফিরে আসার যে প্রবণতা, সেই জাঁতাকলে বোধ হয় আমরা আমাদের সাধারণ মনুষ্যত্বের ভাল দিকগুলো হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমরা মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতাম না, আমরা স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম।

 

 

আমরা সভ্য হয়েছি অসভ্য হওয়ার জন্য নয়। কিন্তু আমাদের সভ্যতার মোড়কে অসভ্যতাটাই কেমন যেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের গর্ব করা উচিৎ আমরা মানুষ, এবং মানুষ মানবতার সাথে আছে।
প্রঃ করোনার আতঙ্ক মোকাবিলায় ভারতের পদক্ষেপে কি আপনি সন্তুষ্ট?
উঃ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এই মুহূর্তে হাতে হাত রেখে কাজ করাটা একটা বিশাল বড় নিদর্শন। আসলে ক্ষমতা যখন হুমকিকে অনুভব করে, তখন সকলের মনে পড়ে আমরা সবাই একই শরীরের অংশ। আমার শরীরের হাত যদি পায়ের সাথে বিরোধ করে, চুল যদি চোখ বা মুখ যদি কানের সাথে বিরোধ করে, তাহলে তো সেটা মহা অসুবিধা।

আচ্ছা আমরা এখন কেনইবা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে ভাবছি। আজ সারা বিশ্ব তো এক। আমরা বিশ্বের সকলে তো একই সমস্যায় ভুগছি, তাই না! সেখানে মানবতাই আসল। এখন মানুষের কথা ভাবার সময় এসেছে। আমাদের কাছে এখন একটা বড় ধাক্কা এসেছে। এই ধাক্কা থেকে যদি আমরা কোন শিক্ষা না নিই, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। এইটা ভাবতে অবাক লাগে, আমরা কতটা নীচে নেমে গেছি, আমরা কতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, আমাদের চারপাশে ‘কুরুক্ষেত্র’-র মতো অবস্থা সব সময় দেখতে দেখতে। মানুষের জীবনটা কোথাও যেন আস্তাকুঁড় হয়ে গেছে। যা আবর্জনাময় কাজ হবে, সব মেনে নাও।

 

 

প্রঃ সাংবাদিকরা যারা মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করছেন, তারা অনেক সময় তাদের কাজের চাপে বা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছেন না, মাস্ক বা স্যানেটাইজার অমিল, এক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
উঃ আমি প্রথমের মন থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, ডাক্তার, পুলিশ এবং মিডিয়াদের। যারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কর্তব্য পালন করে চলেছেন স্বার্থপরতাকে ত্যাগ করে। নিজের জন্য না ভেবে, সমাজের জন্য ভাবছেন। তাদের কাজই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, তারা প্রকৃতই মানুষের প্রতিনিধি। এতদিন তারা ছিল তাদের কাজের প্রতিনিধি, আজকে তারা মানুষের হয়ে কাজ করছেন।

আজ কোথাও যেন তারা আরও বেশি করে ডাক্তার, আরও বেশি করে পুলিশ, আরও বেশি করে সাংবাদিক। কারণ, হয়ত আমরা এমন বিশ্বেরই স্বপ্ন দেখি, যেখানে সকলে একে অপরের হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করবে। আমার বক্তব্য সাংবাদিকরাও তো মানুষ, তাদেরও তো সুরক্ষার সাথে কাজ করতে হবে। তারা তাদের কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে, এবং সেখানে যদি তারা সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে বিপদটা আবার ঘুরে চলে আসবে। কিছুদিন আগে আমাকে একটা নিউজ চ্যানেল থেকে প্যানেলে ডেকেছিল, আমি যাইনি।

 

 

আমি জানি না আমার মধ্যে করোনা আছে কিনা। আমি সেখানে গিয়ে প্যানেল করে চলে আসব, কিন্তু যে উপস্থাপক ওখানে কাজ করছে রোজ, তার জীবনটা সমস্যায় ফেলে এলাম, তার চাকরীটাকে সমস্যায় ফেললাম, পুরো অফিসটাকে সমস্যায় ফেললাম। এটা তো আমি একজন অভিনেত্রী হয়ে করতে পারিনা, তাই না! আমাকে দেখে আমার অনেক সমকর্মীরাও প্যানেলে যেতে পারেন, সেখানেও সমস্যা হতে পারে। তাই আমি নিজে যতটা সচেতন থাকব বা আমার আশপাশের মানুষকে যতটা সচেতন রাখব এখন ততটাই মঙ্গল।

এই সময় আত্মকেন্দ্রিক ও স্টুপিড হওয়ার সময় নয়। আমি সমাজের একদিকটা দেখব, অন্য দিকটা উপেক্ষা করব, এমনটা বোধ হয় ঠিক নয়। মিডিয়াদের সুরক্ষা, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, সব দিক দিয়ে তাদেরকে দেখভাল করা কিন্তু সরকারেরই কর্তব্য। সরকারকে সেইদিকে নজর দিতেই হবে এবং দেওয়াটা উচিত। যদি এই নিয়ে কোন সচেতনতা করা হয়, আমি তাদের সব দিক থেকে সাহায্য করব। তাদের হয়ে আওয়াজ তোলার জন্য আমি আছি। আমার মনে হয়, এই ভয়ঙ্কর সময়ে এটা করা সবচেয়ে বেশি দরকার, কোন মিডিয়া হাউজে গিয়ে নিজের পাব্লিসিটি করার থেকে।

প্রঃ দিদি, এই কঠিন পরিবেশেও আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এটাই কামনা করি HN Express ডিজিটাল মিডিয়ার পক্ষ থেকে।
উঃ আপনারাও ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর যতটা পারেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার চেষ্টা করুন। আপনাদের এই যুদ্ধে আমি সর্বতোভাবে পাশে আছি।

 

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply