আবারও নির্ভয়াকান্ডে অভিযুক্ত চার নরপিশাচ আসামীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিল দিল্লীর উচ্চ আদালত
HnExpress ১লা ফেব্রুয়ারী, ওয়েবডেক্স নিউজ, নিউ দিল্লী ঃ আবারও পিছিয়ে গেলো সেই মর্মান্তিক নির্ভয়াকান্ডে অভিযুক্ত নরপিশাচ চার আসামীর মৃত্যুদণ্ড। যদিও উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ীই আজ শনিবারেই ভোর ৬ টা নাগাদ নির্ভয়া মামলার চার অভিযুক্ত আসামি মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় ঠাকুরের ফাঁসির দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ভয়ার ধর্ষক ও নির্মম হত্যাকারীদের ফাঁসি সাজা চুড়ান্ত হওয়ার পরেও প্রতিবারের মত এবারেও তা চুড়ান্ত রূপ পেল না। এদিকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে গোটা দেশের প্রতিবাদী মানুষেরা সেই চুড়ান্ত সাজার অপেক্ষাতেই দিন গুণ ছিল।
কিন্তু শুক্রবার বিকেলেই সেই ফাঁসির আদেশ স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিলেন দিল্লির উচ্চ আদালত। তবে আদতে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার জন্য এখনো অব্দি পরবর্তী নিদের্শ বা কোনো তারিখ ঠিক হয়েনি বলে অভিযোগ নির্ভয়ার মা’য়ের। এত কিছুর মধ্যেও তিন অভিযুক্তের এক ২৫ বছরের পবন গুপ্তা নির্ভয়াকান্ডের সময় সে নিতান্তই নাবালক ছিল বলে প্রমাণ করার জন্য বার বার আদালতে আবেদনপত্র জমা দেয়। কিন্তু প্রতিবারই তার সেই আবেদন বা আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত।
তারপরেও গত ২০শে জানুয়ারি পবনের উকিল মারফত জমা দেওয়া স্পেশাল লিভ পিটিশনও খারিজ করে দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দিল্লি হাইকোর্টও তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণার সময় এই বিষয়টি খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু এত কিছু স্বত্তেও সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামীর মৃত্যুদণ্ড বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্বভাবতই নির্ভয়ার মা সহ দেশের আম নাগরিকরা যথেষ্ট হতাশ ও ক্ষুব্ধ দেশের আইন ব্যবস্থার উপর।
যদিও এদিন মৃতার মা আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে দেশের জনসাধারণের সামনে সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে বললেন যে, আমি এখনো দেশের আইন ব্যবস্থার উপর ভরসা করি। তাই আদালত, প্রশাসন ও সরকারের কাছে আমার আর্জি —নয় দেশের আইন ব্যবস্থা ঠিক করে দোষীদের অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড দিন, নয়তো এই দেশের সংবিধানকেই আগুনে জ্বালিয়ে দিন।
তবে এবারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর বনুমথি মামলার এই দিকটি নিয়ে আর শুনানিতে সম্মত হননি। কারণ এভাবে একই বিষয় নিয়ে বারবার আবেদন করা যায় না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বস্তুতঃ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে আবারও আবেদন করেছিল নির্ভয়ার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের অন্যতম পবন গুপ্তা। নির্ভয়ার ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে গণধর্ষণের সময় সে নাবালক ছিল বলেই বারংবার দাবি করছে ২৫ বছরের পবন।
এদিন ফাঁসির দিনক্ষণ অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে জানান আইনজীবী এপি সিং। এদিন সেই অভিযুক্তদের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে নির্ভয়ার মা বললেন, “আমাকে এদেরই এক আইনজীবী আদালতে দাঁড়িয়ে আমাকে শাসিয়ে গেছেন যে, এই চারজন অভিযুক্তের কারোরই ফাঁসির প্রক্রিয়া আর কোনোদিন কার্যকর করা হবে না।”
তিনি আরও বললেন যে, “আমি কোনো অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসী নই, তাই অন্তিম দিন পর্যন্ত এ লড়াই চালিয়ে যাব।” নির্ভয়ার মা আশা দেবী দেশের আইনব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলে বললেন, দেশের আইনে যদি ধর্ষনের জন্য সত্যিই ফাঁসির নিয়ম থাকে তবেই ধর্ষণ কমবে। তবে দিনের পর দিন যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে “ভারতে ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়া হয় না, বরং তাদের জনসাধারণের টাকায় স্বযত্নে লালন পালন করা হয়।”