বাংলার দিকে ধেয়ে আসছে ‘ঘূর্ণিঝড়’ কোম্পাসু, গরমের দাপট কমলেও দূর্যোগের আশঙ্কায় রাজ্যবাসী
HnExpress অরুণ কুমার, ওয়েদার রিপোর্ট ঃ পুজো শেষ হতে না হতেই বাংলার দিকে ধেয়ে আসছে ‘ঘূর্ণিঝড়’কোম্পাসু। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এলেও কবে গরমের দাপট যে ৩০ ডিগ্রির কাছাকাছি আসবে সেদিকে তাকিয়ে ছিল সকলেই। তাপমাত্রা বর্তমানে ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৩৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও সাধারণ মানুষকে প্রবল অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে আর্দ্রতা। যার জেরে কয়েকগুণ বেশি ভুগতে হচ্ছে রাজ্যবাসীকে। তবে গতকাল শনিবার রাত থেকে আন্দামান-নিকোবর সহ রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ভ্যাপসা গরম থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে রাজ্যবাসী।
আবহাওয়া অফিসের রিপোর্ট বলছে, শনিবার রাত থেকে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে বেশকিছু জায়গায়। একই সঙ্গে বজ্রপাতও হয়েছে অনেক জায়গায়। আবহাওয়া দফতরের বার্তা অনুযায়ী, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায় বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে আজ রবিবার। বইতে পারে ৬০ কিলোমিটার বেগে হাওয়াও। এছাড়া ওড়িশারও একাধিক জায়গায় রয়েছে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।
অন্যদিকে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহারেরও কয়েকটি জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া রিপোর্ট। মৌসুমী বায়ু উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলি থেকে বিদায় নেওয়ার পথে, ফলে শুষ্ক আবহাওয়া তৈরি হবে এই রাজ্যগুলিতে। দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলির মতোই সকালের দিকে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া রয়েছে কলকাতার। তবে কিছু কিছু জায়গায় পরে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই এখনো। তবে কয়েকদিনের তুলনায় শহরে গরমের দাপট কমতে পারে। তবে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় থাকবে।
অপরদিকে, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদা, দুই দিনাজপুর প্রভৃতি জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে সামনের সপ্তাহ থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার সহ দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের বিভিন্ন স্থানে। আর সেই সঙ্গে তাপমাত্রাও হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছে হাওয়া দপ্তর। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বর্ষা ইতিমধ্যেই বিদায় নিলেও, এবার অসহ্য গরমে জেরবার হয়ে রাজ্যবাসীকে পুজোর দিনগুলো কাটাতে হয়েছে। এর মধ্যে ফের একবার তৈরি হল নিম্নচাপ এবং সেই সঙ্গে ঝড়, বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টির আশঙ্কা।
কারণ আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা দক্ষিণ চীন সাগরে তৈরি হওয়া ট্রপিক্যাল ঘূর্ণিঝড় ‘কোম্পাসু’ ধেয়ে আসতে পারে বঙ্গোপসাগরে। আর তার জেরেই প্রভাব পড়তে পারে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সহ উপকূলবর্তী এলাকা গুলিতেও। জানা গিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড় ‘কোম্পাসু’ কার্যত এখন হংকং এলাকার দক্ষিণ পূর্বে ও ম্যানিলা এলাকার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার গতিবেগে ক্রমশ তা এগিয়ে আসছে স্থলভাগের দিকে। তবে স্থলভাগ আছড়ে পড়ার সাথে সাথেই ঝড়ের গতিবেগ ভীষণরকম বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুযায়ী, স্থলভাগের আছড়ে পড়ার সাথে সাথেই এর সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিমি। এ বিষয়ে উল্লেখ করতে হয় যে, ইতিমধ্যেই কোম্পাসুকে ক্যাটাগরি-১ হ্যারিকেন হিসেবে মান্যতা দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। যদিও এর মূল তাণ্ডবের আশঙ্কা রয়েছে হংকংয়েই। আর ইতিমধ্যেই সেখানে সতর্কতা হিসেবে অফিস, স্কুল, কলেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে ভারতেও। ভারতে মূলত এর প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টি এবং নিম্নচাপের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুসারে জানা গিয়েছে, একদিকে যেমন চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ চালাবে এই কোম্পাসু, তেমনি টোনকিন উপসাগরে পৌঁছানোর পর ক্রমশ গতিবেগ বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এই ঝড়। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, শুক্রবার থেকেই এই ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে পশ্চিমের দক্ষিণ ভিয়েতনামের দিকে এগিয়ে যাবে।
অন্যদিকে আজ, রবিবার সকাল থেকে হাল্কা রোদ দেখা গেলেও দুপুর থেকে বাংলাতেও শুরু হয়েছে ঝড়-বৃষ্টির দাপট। গতকাল শনিবার, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রির আশেপাশে এবং একই সঙ্গে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতার পরিমাণ ছিল ৭০ শতাংশ। একই সঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে রবিবার সহ পরবর্তী গোটা সপ্তাহ জুড়ে। তবে পুজো শেষ হতে না হতেই বাংলার দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ কোম্পাসু। যার প্রভাবে দূর্যোগের ঘনঘটার আশঙ্কায় রয়েছে রাজ্যবাসী।