বর্ধিত মিনিমাম চার্জ এবং স্মার্ট মিটার প্রত্যহারের দাবিতে স্মারকলিপি জমা কাস্টমার কেয়ারে
HnExpress মোমিন আলি লস্কর, জয়নগর : পশ্চিমবঙ্গ একটি প্রধান রাজ্য এবং মুলত প্রাম্ভিক চাষী। কেন্দ্রীয় সরকার রিভ্যাস্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম (আর ডি এস) প্রোজেক্ট ২০২১ অনুযায়ী ইলেকট্রিসিটি রুল ২০২২ ও রুল ২০২৩ জারি করে নির্দেশ দিয়েছে যে, সমস্থ স্তরের বিদ্যুৎ গ্ৰাহকদের স্মার্ট প্রিপেড মিটার লাগাতে হবে এবং টিওডি (টাইম অব ডে) সিস্টেমে বিল জমা করতে হবে।
অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে স্মার্ট মিটার এবং ইলেট্রিকের বিলের বিভিন্ন চার্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩রা অক্টোবর মঙ্গলবার জয়নগর থানার অধীনে এক নম্বর ব্লকের জয়নগর ডিভিশনের অন্তর্গত দক্ষিণ বারাসাতের কাস্টমার কেয়ারের ইলেকট্রিক অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান মোল্লা ও দক্ষিন ২৪ পরগনার জেলার অ্যাবেকার সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু মুখ্যার্জী সহ ইন্ডারস্টিয়াল কনজ্যুমারগণের উপস্থিতে ইলেকট্রিসিটি সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবিদাওয়া এবং স্মার্ট মিটার যাতে বসানো না হয় তার জন্য গ্ৰাহকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি জমা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আলোচনা সাপেক্ষে মাহমুদুল হাসান মোল্লা বেলা ৩টের সময় স্মারক লিপি জমা নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং অবশেষে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্ৰাহকদের কাছ থেকে স্মারক লিপি জমাও নিলেন। এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার অ্যাবেকার সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু মুখ্যার্জী বলেন, বর্তমানে গ্ৰাহকদের বাড়িতে বসানো ডিজিটাল মিটারগুলো ভালো অস্থায় সুক্ষভাবে বিদ্যুৎতের খরচ পরিমাপ করতে পারা সত্ত্বেও সেগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে আবার কোটি কোটি টাকা খরচ করে স্মার্ট প্রিপেড মিটার লাগানোর কোন প্রয়োজন নেই বলেই আমি মনে করি।
কারন এই মিটারের টাকা তো বিদ্যুৎতের দাম বাড়িয়ে সেই গ্ৰাহকদের কাছে থেকেই আদায় করা হবে। গ্ৰাহকদের কাছে থেকে টাকা দিয়ে সেই টাকাতেই বন্টন কোম্পানি ব্যবসা করবে, যেটা অন্যায় ও অনৈতিক। স্মার্ট মিটার খারাপ হলে তা পরিবর্তন করা ও খারাপ মিটারের ভুতুড়ে বিল সংশোধন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। মিটার রিডার সহ শত শত কর্মচারীরাও কাজ হারাবে। বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর ৫৬ নং ধারা মতে গ্ৰাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হলে কোম্পানিকে কমপক্ষে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়।
কিন্তু এই স্মার্ট মিটারের টাকা শেষ হলে অটোমেটিক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হবে, যা বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ অনুযায়ী সঠিক নয়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (কৃত্রিম মেধা) বা উন্নত প্রযুক্তির সুপার কম্পিউটারের কন্ট্রোলে এই মিটার গুলো থাকবে, যার মধ্য দিয়ে গ্ৰাহকদের টাকা লুট করার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে।সর্বোপরি, এই স্মার্ট প্রিপেড মিটার ব্যবস্থা রাজ্য সরকারের অধীনস্ত বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানিগুলোকে ব্যক্তি পুঁজিপতিদের হাতে সমর্পণ করতে গতি আনবে।
এর মাধ্যমে সহজেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ শিল্পকে বেসরকারীকরনের উদ্দেশ্য রচিত জনবিরোধী বিদ্যুৎ বিল ২০২২-কে বাস্তবায়িত করার পথে বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থাকে বেসরকারীকরন করা যাবে। এইভাবে সরকার জনগণকে বিদ্যুৎতের মত পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব অস্বীকার করতে সক্ষম হবে। এই কারণেই স্মার্ট মিটার বা প্রিপেড মিটার গ্ৰাহকদের স্বার্থ বিরোধী একটি অপপ্রচেষ্টা। টিওডি সিস্টেমে বিল করার মাধ্যমে গ্ৰাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের (অ্যাবেকা) পক্ষ থেকে ১৯টি দাবীদাবা নিয়ে ২৭শে সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ভবনে স্মারক জমা করা হয়। এবং জয়নগর ডিভিশানে এই স্মারক লিপি ও প্রতিটি কাষ্টমার কেয়ারেও জমা করা হয়। একদিকে যেমন বেকারত্বের অভিশাপে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমজীবী মানুষেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে ভবঘুরে হয়ে বেড়াছে। ঠিক সেই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মানুষ তার কাজ হারাতে চলেছে।
কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হতে চলেছে এই স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ। বর্তমানে স্মার্ট মিটার বসানোর পর মিটার রিড়িং ম্যানের কোনো কাজই আর থাকবে না। এই মিটার লাগানো পর কয়েক হাজার রিড়িং ম্যানের কাজ চলে যাবে। তাহাদের পরিবারগুলি আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে পড়ে যাবে। অ্যাবেকার সহ-সভাপতির পক্ষ থেকে প্রথমে জয়নগর ডিভিশনের ১৯ দফার দাবি নিয়ে স্মারক লিপি জমা করা হয়। এরপর বিদ্যুৎ ভবন থেকে বলা হয়েছে, আপনাদেরকে এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। এমনই আশ্বাসবাণী দিয়েছেন ভবনের কর্মকর্তারা।