বিশ্বভারতীর মেলার মাঠে পাঁচিল নির্মাণকার্যকে ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড, থমথমে শান্তিনিকেতন
HnExpress ১৮ই অগাস্ট, ঝুম্পা দেবনাথ, বীরভূম ঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বীরভূম জেলার লাল মাটির শান্তিনিকেতনের মুক্ত বাতাসে পড়ুয়াদের সঠিক অধ্যায়নের তাগিদেই গড়ে তুলেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বকবির প্রাণের প্রিয় সেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আদালতের নির্দেশের পর পৌষ মেলার মাঠে চর্তুদিকে পাঁচিল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল শনিবার থেকে। গতকাল এই পাঁচিল নির্মাণকার্যকে ঘিরেই শুরু হয় ধুন্ধুমার কান্ড। রণক্ষেত্রের আকার নেয় শান্তিনিকেতন চত্বর। থমথমে গোটা পরিবেশ।
শনিবার থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভের মধ্যেই চলছিল পাঁচিল নির্মাণ। রবীন্দ্রনাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত অনেকেই মেলার মাঠে পাঁচিল নির্মাণকে অচলায়তনের সাথে তুলনা করে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। মূল গন্ডগোলের সূত্রপাত ঘটে সোমবার সকাল আটটা নাগাদ। বোলপুর ফায়ার স্টেশনের সামনেত রাস্তায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। ঘন্টাখানেক পর প্রায় চার হাজারেও বেশি মানুষ মিছিল করে “উপাচার্য গো ব্যাক” স্লোগান তুলে মেলার মাঠের দিকে এগিয়ে আসেন।
সব দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় মেলার মাঠটি। তারপরই শুরু হয় তান্ডব নৃত্য। পাঁচিল যতটা হয়েছিল তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে পুরোটাই। অস্থায়ী ক্যাম্প ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ঢালাই মেশিন তুলে গর্তে ফেলে দেয় উত্তেজিত জনতা। মাঠের মূল গেটের সামনে জেসিবি পে-লোডার আনে জনতা এবং তা দিয়ে কংক্রিটের পিলার এবং গেট ভেঙে ফেলে হুড়মুড়িয়ে লোক ডুকে পড়ে মেলার মাঠে। পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্ৰীও লুট হয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও বোলপুরের বাসিন্দা নরেশচন্দ্র বাউড়ি, বোলপুর পুরসভার অন্যতম প্রশাসক সুকান্ত হাজরা, বোলপুর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর অমর শেখ সহ অন্যান্যরা। আর এই
মিছিলের সামনের সারিতেই থাকা তৃণমূল বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি জানান, এই মিছিলে তাঁর উপস্থিতির সাথে রাজনৈতিক ভাবে কোন যোগাযোগ নেই এবং এটা কোন দলীয় কর্মসূচি নয়, জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী হিসাবে প্রতিবাদে এসেছিলাম এবং রবীন্দ্র আদর্শের বিরোধী কার্যকলাপ হলে আবারও আসব, এমনটাই জোরের সাথে জানালেন তৃণমূল বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি। এদিকে শান্তিনিকেতনে এই ধুন্ধুমার কান্ডকে ঘিরে বৈঠকে বসেন বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের পর কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে পাঁচিল নয়, ফেলিং তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, ফলত গেট থাকবে এবং প্রবেশে কারোর বাধাও থাকবে না।
তিনি আরও জানান যে, এদিন শান্তিনিকেতনে যা ঘটল তা অত্যন্ত নিন্দনীয়, বিশ্বভারতীর সম্পত্তিও বহিরাগতরা লুটপাট করল। তিনি অভিযোগ তুলেছেন যে, লুটপাট শুরু হতেই পুলিশ সুপারকে জানানো হলেও, পুলিশের সেই পুলিশি তৎপরতা বাস্তবিক ভাবে ছিল না। এমনই অভিযোগ তুলেছেন কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কর্মসমিতির সদস্যের এই অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ সুপার শ্যাম শিং। তিনি বলেন, যথাসময়েই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছে এবং এদিন ৮ জনকে গ্ৰেপ্তারও করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর রাজনীতির পারদ উঠেছে চরমে। শান্তিনিকেতনের এই পরিস্থিতিকে ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্যুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি ট্যুইটে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, বিশ্বভারতীতে দ্রুত আইন শৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ নেবেন। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিশ্বভারতী হল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তাই কোন মন্তব্য করবো না। তবে রাজ্যপাল ফোন করার পর জানতে পেরেছি যে, ওখানে নির্মাণ কাজ হচ্ছিল, তাই কিছু বহিরাগত ছাত্ররা এসে প্রতিবাদ জানায়।
জেলাশাসকে জানিয়েছি, উপাচার্যদের সাথে পড়ুয়া ও স্থানীয়দের আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদর্শকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, বিশ্বকবি প্রকৃতির কোলে পড়ুয়াদের অধ্যায়ন করানোর জন্যই তৈরি করেছিলেন বিশ্বভারতী। নির্মাণ কাজ মানেই যে তা সৌন্দর্য বাড়ায় তা কিন্তু নয়। বিশ্বভারতীর গৌরব ও ঐতিহ্য যাতে নষ্ট না হয়, তাও কিন্তু আমাদেরই দেখা উচিৎ।
অন্যদিকে সোমবার রাতেই বিশ্বভারতীর তরফ থেকে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়। এবং আচার্যকে জানানোর পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছেও আবেদন জানানো হয়, যাতে কোন সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বভারতীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। বিশ্বভারতীর ব্যারিকেডও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।