প্রতিকূলতা সত্বেও বিশ্ব সম্প্রীতির নজির রাখল HN EXPRESS

0


HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধিHN Express-এর (হাইলাইট নিউজ এক্সপ্রেস) উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এই বছরেও আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান, ২০২২ এর পুজো পরিক্রমা। আর তারই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ২৩শে নভেম্বর ২০২২ মধ্যমগ্রাম নজরুল শতবার্ষিকী ভবনে। অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য মধ্যমগ্রাম ও বারাসাত অঞ্চলের দীপাবলি সম্মান ও এলাকার মধ্যে সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা।

শুধু মাত্র কথার কথাই নয়, সৌজন্য ও সৌভাতৃত্বের অনন্য নজীর হয়ে রইল এদিনের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ। যেখানে প্রত্যেকদিন খবরের শিরোনামে থাকে শাসক ও বিরোধীদের রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়ার চেষ্টা, সেখানে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার পুরপ্রধান ও সেই পুরসভার বিরোধী দল নেতা এক মঞ্চে শুধু বসলেনই না, চায়ের চুমুকে চললো দেদার গল্প। সব কিছুর পরেও এখানেই অনুষ্ঠানের সার্থকতা।


এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দালপুর বিলিভার ইস্টার্ন চার্চের মহা যাজক শম্ভু দাস, মধ্যমগ্রাম পৌরসভার পৌরপ্রধান নিমাই ঘোষ, সিআইসি তথা চ্যানেলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অরবিন্দ মিত্র, মধ্যমগ্রাম পৌরসভার অন্তর্গত ১৯ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি তথা বিরোধী দলনেতা অলোক সাহা, ১১ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা অন্তরা মজুমদার, শিক্ষিকা ঝর্না বর্মন, অধ্যাপক অশোক বর্মন।

এছাড়াও বিচারকমন্ডলীর দিব্যেন্দু ঘোষ (সিনিয়র জার্নালিস্ট, জি ২৪ ঘন্টা), বরিষ্ঠ সাংবাদিক অশোক সেনগুপ্ত (কনসাল্টিং এডিটর হিন্দুস্তান সমাচার), মিডিয়া পার্টনার বিশ্ব দর্পণ এর সাংবাদিক হিরক মুখোপাধ্যায়, বিএনই নিউজের সাংবাদিক অর্পিতা ঘোষ, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সুনন্দন শিকদার, কার্ডিওলজিস্ট, ডাঃ অভ্রদীপ দাস, চেস্ট স্পেশালিষ্টসহ বহু বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গকে। তাঁদেরকে একই মঞ্চ থেকে প্রশান্ত কুমার সেনগুপ্ত স্মৃতি সম্মাননা “গৌরবরত্ন ২০২২ এ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হয়।



HN Express -এর কর্ণধার ইন্দ্রাণী সেনগুপ্তের কথায়, “বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান” হলো একটি অন্য ধরনের ও অন্য স্বাদের অনুষ্ঠান। যার মূল উদ্দেশ্য, মানুষের মাঝে মানবতার প্রকাশ ঘটানো। আমরা জানি যে, দীপাবলি মূলত আলোর উৎসব। দীপাবলি বা কালীপুজোর মধ্য দিয়ে অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে মানব জীবনকে আলোকিত করে তোলার উৎসব।

এই ক-দিন চারিদিক আলোয় ঝলমল করে। কিন্তু বর্তমানে চারিদিকে মানুষের সাথে মানুষের হিংসা, বিদ্বেষ, ধর্মীয় হানাহানি, রাজনৈতিক রেষারেষি চলছেই। ফলে শুধু এই উৎসবের ক’দিন ঘরে ঘরে প্রদীপ বা টুনি লাইট জ্বালিয়ে আলোকিত করে মনের কালীমা মোচন করা যায় না। মনের কালীমা মোচন করতে গেলে দরকার মনুষ্যত্বের আলো।


তাই আমরা এই উৎসব উপলক্ষে পুজো কমিটি গুলির মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই মানবতার বার্তা, সম্প্রীতির বার্তা, ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের বার্তা। আর তাই আমরা এই পরিক্রমার নামকরণ করেছি “বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান” অর্থাৎ রাজ্য, দেশ তথা বিশ্বের মানুষের মনে সম্প্রীতির আলো ছড়িয়ে দেওয়ার একটা সামান্য প্রচেষ্টা।



আমাদের এই বার্তা যদি একটি মানুষের মনেও সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যের আলো জ্বালাতে সক্ষম হয় তবেই আমাদের এই প্রচেষ্টা তার স্বার্থকতা খুঁজে পাবে। আর এর জন্য আমরা সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে প্রত্যেক বছর এই কর্মকাণ্ডে ব্রতী হবো। অন্তত একটি মানুষের মনে সম্প্রীতির আলো জ্বেলে দেবো আমরা”।



শুধু বড় বাজেটের পুজো হিসাবে নয় বা অর্থের বিনিময়ে অর্জিত সম্মান নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রধান মাপকাঠি ছিল বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান ২০২২ এর প্রধান লক্ষ্য। প্রায় ১৩টি ক্যাটাগরিতে ছিল পুরস্কার। যেখানে সেরার সেরা, সেরা প্রতিমা, সেরা মণ্ডপসজ্জা, সেরা আলোকসজ্জা, সেরা ভাবনা, সার্বিক প্রথম, সার্বিক দ্বিতীয়’র পাশাপাশি ছিল সেরা পরিবেশবান্ধব, সেরা মানবিক, সেরা সমাজ-সংগঠন, সেরা নারীশক্তি, সেরা ব্যবস্থাপনার মত ভিন্ন ধরনের পুরস্কারও।



এবার এক নজরে দেখে নেবো, কোন কোন পূজা কমিটির হাতে উঠলো বিশ্ব সম্প্রীতি আলোক সম্মান ২০২২-এর পুরস্কার:-

১l সেরার সেরা মধ্যমগ্রাম ঃ পূর্বাশা যুব পরিষদ, মধ্যমগ্রাম
২l সার্বিক প্রথম ঃ শতদল, বারাসাত
৩l সার্বিক দ্বিতীয় ঃ নবপল্লী এ্যাসোসিয়েশন, বারাসাত
৪l সেরা প্রতিমা ঃ রবীন্দ্রপল্লী এ্যথলেটিক ক্লাব, মধ্যমগ্রাম
৫l সেরা মণ্ডপসজ্জা ঃ উদয়রাজপুর মেঘদূত শক্তি সংঘ, মধ্যমগ্রাম
৬l সেরা আলোকসজ্জা ঃ চন্ডীগড় ইউনাইটেড এ্যথলেটিক ক্লাব, মধ্যমগ্রাম
৭l সেরা ভাবনা ঃ নবীন সংঘ, মধ্যমগ্রাম


৮l সেরা মানবিক ঃ বসুনগর প্রতাপ সংঘ, মধ্যমগ্রাম
৯l সেরা সমাজ-সংগঠন ঃ নিবেদিতা সরণি শ্যামাপূজা কমিটি, মধ্যমগ্রাম
১০l সেরা সম্প্রীতি ঃ ন’পাড়া ক্ষুদিরামপল্লী, মধ্যমগ্রাম
১১l সেরা ব্যবস্থাপনা ঃ বিধানপল্লী বারোয়ারীতলা শ্যামাপূজা কমিটি, মধ্যমগ্রাম
১২l সেরা নারী শক্তি ঃ আমরা সবাই মহিলা সমিতি, মধ্যমগ্রাম
১৩l সেরা পরিবেশ বান্ধব ঃ তরুছায়া, বারাসাত

বুধবারের পুরস্কার মঞ্চ হয়ে উঠেছিল সুস্থ সংস্কৃতির অঙ্গন। মনোজ্ঞ গান, নাচ ও শ্রুতিনাটকের মাধ্যমে দর্শকের মন নির্মল আনন্দে ভরে ওঠে। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছাবার্তা দেন বিলিভার্স ইস্টান চার্চের ফাদার রেভারেন্ড শম্ভু দাস। তাঁর নেতৃত্বে পরিবেশিত হয় ‘বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু’ প্রার্থনা সঙ্গীত। অন্যদিকে, কৃষ্ণা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় সঞ্চার নামক এক কার্ডিয়াক ম্যাসাজ ওয়ার্কশপ। যেখানে ঘরে বাইরে আচমকা কারও হৃদযন্ত্র নিস্ক্রিয় হয়ে পড়লে কীভাবে দ্রুত তাঁর বুকে নির্দিষ্টভাবে চাপের মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে তোলা যায়,


হাতেকলমে সংক্ষেপে সিপিআর-এর সেই প্রক্রিয়াও মঞ্চে উপস্থাপন করে দেখান দুই বিশিষ্ট চিকিৎসক সুনন্দ শিকদার ও অভ্রদীপ দাস এবং তাঁদের সহযোগী টেকনিশিয়ানরা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনার ভিত্তিতে স্বরচিত শ্রুতিনাটক ‘গোপনচারিনী’ পরিবেশন করেন পারমিতা সান্যাল ও অভিষেক চ্যাটার্জী। নৃত্য পরিবেশন করেন মধুছন্দা চক্রবর্তী।

সমবেত সঙ্গীতে ছিলেন চলন্তিকা সব পেয়েছির আসরের শিল্পীরা। মানুষকে আনন্দ দিতে গেলে ও একটি নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে নানান বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন যেমন হতে হয়, এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। নানান প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করেই সম্প্রীতির বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার যে চ্যালেঞ্জ এতদিন HN EXPRESS যেভাবে নিয়ে এসেছে, ভবিষ্যতেও তার ধারা অব্যাহত থাকবে এমনই দাবি HN EXPRESS-এর গোটা টিমের। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন জয় সরকার।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply