খোলা আকাশের নিচে ‘কিচিরমিচিরের’ মজলিস
HnExpress ১৯শে ডিসেম্বর, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : অমিত গাঙ্গুলি, অমিত ঘোষ, দেবজ্যোতি সোম— এক লহমায় যেন সব ফিরে গিয়েছিল প্রায় পাঁচ দশকেরও আগের দিনগুলোয়। তখন ওরা ছিল ক্লাশ থ্রি-ফোরের ছাত্র। পড়ত সে সময়ের কলকাতার সেসার সেরা স্কুল বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টে। সত্যজিৎ রায়, শম্ভু মিত্র, রাহুল দেববর্মন প্রমুখ অসংখ্য বিখ্যাতের স্মৃতিধন্য প্রতিষ্ঠানে। অনেকদিন পরে আবার খোলা আকাশের নিচে বসল সেই ‘কিচিরমিচিরের’ মজলিস।
১৯৭৪-এ পুরনো পাঠ্যধাঁচের উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের নানা জায়গায়। সেদিনের সেই ছেলেগুলো এখন প্রৌঢ়। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ অধ্যাপক, কেউ সাংবাদিক, কেউ নাবিক, কেউ ব্যবসায়ী। বয়স ৬২-৬৩। কেউ অবসরপ্রাপ্ত। কেউ বা এখনও কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। বয়স বাড়লে বুঝি স্মৃতিমেদুরতার পোকা জ্বালাতে শুরু করে। হয়ত তারই তাড়নায় পুলক-বাবুল-অমিতরা উদ্যোগী হয়ে ক‘দিন আগে তৈরি করে ফেলল ‘কিচিরমিচির’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ।
ওঁদের সবাই যে পরস্পরের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, তা নয়। দু’চারজনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। খোঁজ করে বাকি সহপাঠীদের সামিল করে নিচ্ছে ‘কিচিরমিচিরে’। সামাজিক মাধ্যমের ঘেরাটোপ থেকে বেড়িয়ে রবিবার ওদের ১০ জন বসল খোলা আকাশের নিচে এক মজলিসে। দক্ষিণ কলকাতায় প্রশস্ত ফুটপাথে ১০টি টুল, আর মাঝে চা রাখার একটি বাড়তি টুল। কত কথা! খাকি হাফপ্যান্ট পড়ে ডাবের শুকনো খোলায় ফুটবল খেলা আর স্কুলের মাঠে জলে-কাদায় গড়াগড়ির গল্প, বিমলদা, হীরালালদার (এঁরা ছিলেন স্কুলবাসের চালক) হরেক কথা, বিশ্বপ্রিয়বাবু, বেঁটে সুনীল, জগবন্ধুবাবু— মানে স্যরেদের নানা গল্প।
শীতের নরম রোদ্দুরে ‘চিনে‘, ‘জাপানি’, ‘ব্যাঁকা’, ‘মামা’-র মত সেদিনের খুদে পড়ুয়াগুলো যে এ রকম কিচিরমিচির করবে, ওপরের পাখী গুলোরও যেন তা সহ্য হচ্ছিল না। গাছের ডালে বসে প্রাকৃতিক কাজের মাধ্যমে বার বার প্রতিবাদও জানালো ওগুলো। তাতেও থামে না নিচের কিচিরমিচির! ধীরে-সুস্থে এগোতে রাজি নয় বাল্যবন্ধুগুলো। সাউথ সিটি-র সুরম্য গগনচুম্বির ২৩ তলায় ১২ জানুয়ারি এর পরের সিটিং। ভাঁড়ের চা থেকে দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের পরিকল্পনা। ‘গিঁটু’, ‘পানি’— এঁদের কাছে মুঠিফোনে বার্তা চলে গেল, আজ আসিসনি! ওদিন কিন্তু আসতেই হবে!