জীবন থেকে বিমুখ হয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে জেলা সাংবাদিকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু, কিন্তু এটাই কি সমস্যার সমাধান?

0

HnExpress রূপা বিশ্বাস, হাওড়া ঃ প্রতিনিয়ত আর্থিক অবস্থার অবনতি এবং নিদারুণ টানাপোড়েনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মত নিরর্থক পথ বেছে নিলেন “খবর ৩৬৫ দিন” কাগজের চিত্র সাংবাদিক অরিন্দম হাজরা। সবদিকে থেকে আর্থিক ভাবে দেনার দায়ে জর্জরিত, জীবন থেকে বিমুখ হয়ে অবশেষে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন হাওড়ার বাসিন্দা তথা চিত্র সাংবাদিক অরিন্দম বাবু। যদিও সেই ব্যাপার নিয়ে মাথা ব্যথা নেই পুলিশ_প্রশাসন বা সরকার, রাজনীতিবিদের।

এখন তো দেশের বুদ্ধিজীবীরাও নির্বাক দর্শক মাত্র। মূলত যেখানে কৃষক মজুরদের থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের সবার জন্য সব রকম প্রকল্প চালু করা হয়েছে বা প্রতিনিয়ত উন্নয়নের নামে চালু করা হচ্ছে, তাহলে সেখানে জীবন হাতে নিয়ে পুলিশের লাঠি চার্জ সহ্য করে, কাঁদানেগ্যাস এর চোখ জ্বলে পুড়ে যাওয়া ধোয়ার মধ্যে দিয়েও খবর করে সাধারণ মানুষ থেকে নেতা মন্ত্রী আমলাদের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর তান্ডব করা ঝড় ঝঞ্জা মাথায় নিয়েও খবর পরিবেশন করা অথবা খবর করতে গিয়ে নেতা মন্ত্রীর পোষা গুন্ডা – হার্মাদদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়া সাংবাদিকদের জন্য সরকার কেন কোনো প্রকল্প চালু করছেন না?

আর কেনইবা সেই সমস্ত মিডিয়া কোম্পানি গুলির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এবং তাদের বেতন বাড়ানো হয় না, যারা সাংবাদিকের তকমা লাগিয়ে দিয়ে মার্কেটে ছেড়ে দেয় নিজেরা ক্ষত বিক্ষত হয়েও হাউসের টিআরপি বাড়ানোর জন্য? এত কিছুর মাঝে প্রশ্ন একটাই আজকের তারিখে দাঁড়িয়ে পরিবারের মাথা, পরিবারের একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী অরিন্দম বাবুর আত্মহত্যার জন্য দায়ী কে বা কারা? কে দেবে এর সঠিক উত্তর? কে নেবে এরকম বহু চিত্র সাংবাদিক বা সাংবাদিকদের অকাল প্রয়াণের দায়িত্ব?

সমাজের যারা নাকি রক্ষক, আজ তাদের কাছে প্রতিবেদকের প্রশ্ন, এই পাপবোধ আপনাদের মস্তিষ্ক – মজ্জাংশু কুঁড়ে কুঁড়ে খাও না? কোথায় লুকিয়ে রাখবেন এই সমাজের চতুর্থস্তম্ভের দায়ভার এড়ানোর লজ্জা? অরিন্দম বাবু আত্মহত্যার পূর্বে একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে সত্যের বিচার চাইতে, আসুন তার লেখা সেই সুসাইড নোট সম্বন্ধে জানা যাক। তিনি লিখেছে ঃ- “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। দেনা আমার এই পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। আমার আত্মীয়রা যেন কোনোভাবেই আমার পরিবারের মধ্যে না আসে। আমার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলবো তুমি শক্ত হও।

জীবনে নিজের জন্য কিছু চাইনি। অনেক নেতা মন্ত্রীর স্বান্নিধ্যে ঘুরেছি। যেমন-অরুপ দা, শ্যামল দা, বিজন দা, নির্মল দা আরো অনেকে আছেন। তবে আমার মৃত্যুর পর নিজের জন্য চাইবো, দেবেন আমার স্ত্রীকে একটা চাকরি? যেটা থেকে আমার দুই মেয়ের ইংলিশ মিডিয়ার স্কুলের খরচ চালাতে পারে। আমি জানব আমার মৃত্যু সার্থক। এই বিষয়টিতে আমার পুলিশ বন্ধু ও মিডিয়ার বন্ধুদের সাহায্য চাইছি। সুমিতের কাছে অনুরোধ আমার ফ্ল্যাট আমার স্ত্রীর নামে করে দিও। বেলেঘাটার জয়দার কাছে অনুরোধ, সামনের মাসে যে টাকা পাওয়ার কথা তা আমার স্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন।”

“আমি যেন সেই বাতিওয়ালা/ যে সন্ধ্যের রাজ পথে পথে/ বাতি জ্বালিয়ে ফেরে/ অথচ নিজের ঘরেই নেই/ যার বাতি জ্বালাবার সামর্থ্য/ নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার” —সেই কত দিন আগে লিখেছিলেন কিশোর কবি সুকান্ত, তবে কথাগুলো যেন আজও ভারি জীবন্ত মনে হয়, অন্তত এই রাজ্যের অসংখ্য মিডিয়া কর্মীর জীবনে। কি করুণ আর হৃদয় স্পর্শ করা মর্মান্তিক এই চিঠির বয়ান। যেখানে নাকি সাংবাদিকতাকে বলা হয় সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ, সেখানে একজন সাংবাদিকের একি করুণ পরিনতি ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আর ঠিক এইভাবেই গত কয়েক মাস আগেই আর্থিক অনটনের হাত থেকে বাঁচার রাস্তা খুঁজে না পেয়ে মানসিক যন্ত্রণায় শেষ পর্যন্ত গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছিল বছর ৪১ র চিত্র সাংবাদিক প্রসেনজিৎ রায়। এই রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না হয়ে তো এখানকার অনেক সাংবাদিক ও আলোক চিত্রির জীবন কী মর্মান্তিক বেদনার। আর সেই চিত্র সাংবাদিকের বেদনাতুর ও অসহায় পরিবারের পাশে সরকার, প্রশাসন, নেতা-মন্ত্রী, আমলা, বুদ্ধিজীবীরা এসে না দাঁড়ালেও, এই অন্ধকার তিমিরে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গিকার নিয়েছেন “নির্ভীক উত্তর” ডিজিটাল মিডিয়ার এক্সিকিউটিভ এডিটর অনিন্দ্য চৌধুরী।

তিনি একজন একনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবে এই মর্মান্তিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বললেন, “অরিন্দম বাবু চিঠিতে লিখে গেছেন তাঁর স্ত্রীকে একটা চাকরি দেওয়ার কথা। ‘NirbhikUttor‘ এর তরফ থেকে, অরিন্দম বাবুর স্ত্রী’র সেই কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নিচ্ছি আমরা। অন্তত বাচ্চা দুটো যেন তাদের পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারে, আর আরেকটা সুইসাইড নোট যেন কোনো অসহায় সাংবাদিককে লিখতে না হয়।”

তবে অবশেষে একজন সাংবাদিক তথা এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক হিসেবে বলব, প্রসেনজিৎ হোক বা অরিন্দম বাবু বা অন্য কেউ, তাদের এই মৃত্যুকে অাত্মহত্যা না বলে বরং হত্যা বলাই বোধহয় ভাল। আর এই হত্যার জন্য দায়ী কিন্তু তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থা, সরকার ও মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত অামরা প্রায় সকলেই। Highlight News Express ডিজিটাল মিডিয়া এর পক্ষ থেকে এই সহযোদ্ধাদের প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনা।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply