করোনার করুণা আমাদের জন্য নয়, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার আবেদন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির

0

HnExpress ২৬শে মার্চ, অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ঃ করোনার করুণা আমাদের জন্য নয়, এবারে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার আবেদন জানাচ্ছেন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আজ যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, বুম-ক্যামেরা ছাড়াই একজন সাংবাদিককে কিভাবে চিনবেন? প্রশ্নের উত্তরটা যদি অজানা থাকে, তাহলে জেনে নিন, কোনো বাড়িতে আগুন লাগলে যে মানুষগুলো দমকলের সাথে জীবন বিপন্ন করেও সেই বাড়িতে ঢোকে, শুধুমাত্র আপনার ড্রয়িংরুমে বা আপনার বেডরুমে খবরটা পৌঁছে দেবে বলে, তারাই সাংবাদিক।

তারা কোথাও সৈন্য বাহিনীর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আজ ‘মিডিয়া গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ এমন সব ভারী কথা বলে পরিবেশ গম্ভীর করব না। তবে কিছু কথা এই কঠিন আবহে বলাটা হয়ত খুবই দরকার, নইলে মানুষের কাছে ‘মানবিক’ শব্দের কোন দাম থাকবে না বা বলা ভাল মানুষের ‘মান’ শব্দের অমর্যাদা হবে।অনেকে বলেন, এখন খবর জানার ধরণটাই বদলে গেছে। সকালবেলা আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজের পাতা উল্টানো বাঙ্গালী আজ অভ্যস্ত ‘লাইভ’, ‘গ্রাউন্ড জিরো’, ‘ব্রেকিং’ ‘প্রাইম নিউজ’ ইত্যাদি শব্দে।

একটি ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা হোক বা বিপদজনক ভাঙা ব্রিজ, রেল দুর্ঘটনা হোক বা হোক মহামারী, সরকারের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের পাশে সব সময় দেখতে পাওয়া যায় একজন নিরলস নিরপেক্ষ সাংবাদিককেই। হ্যাঁ, একজন সাংবাদিক দিন-রাত এক করে দিয়ে আপনাদের জন্য কাজ করে চলে সঠিক খবর পরিবেশনের আশায়। যাতে আপনারা বাড়িতে বা অফিসে, ঠান্ডা ঘরে বসে হোক বা পাড়ার চায়ের দোকানে, যে কোন বিষয়ে তর্কে ঝড় তুলতে পারেন।

 

 

কিন্তু সেই মানুষগুলোর নিরাপত্তার কথা কি আমরা কোনদিনও ভেবেছি? বুকে হাত রেখে বলুন তো, সরকার হোক বা মিডিয়া হাউস, কতটুকু প্রতিদান দিতে পেরেছে গনতন্ত্রের এই বুনিয়াদী স্তম্ভকে! উল্টে তাদের সহ্য করতে হয়েছে সকলের রক্ত চক্ষু, এমনকি অনেক সময় সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধও করা হয়েছে, আজও হচ্ছে। এবার মূল কথায় আসা যাক, করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিদান ছিল ‘জনতা কার্ফু’।

তার সাথে উপরি হিসাবে ছিল, বিকেল পাঁচটায় এই ভাইরাস মোকাবিলায় কর্মরত সকলের জন্য সন্মান প্রদর্শন করতে হাততালি, কাঁসর-ঘন্টা, শাঁক বাজানো। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সাংবাদিকরা সারাটা বছর জরুরী ভিত্তিতেই কাজ করে চলে প্রশংসার প্রত্যাশা না করেই। অনেকে সোস্যাল মিডিয়ায় বলছেন, মৃত্য মিছিলে ইতালীর মতো ছোট দেশের অবস্থা দেখে যদি শিউরে ওঠেন, তাহলে আমাদের ১৩০ কোটির পোড়া দেশ সেই রোগেরই ‘সিনেমা’ অনায়াসেই দেখাতে পারে। সেই তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর সুচিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে আমরা জানি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ‘ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দার’।

তবু আমরা বুক চিতিয়ে লড়ছি। আর যারা সেই লড়াইয়ের সামনের সারির যোদ্ধা, যারা ঘটনার সামনে দাঁড়িয়ে সমস্যা তুলে ধরছেন, তাদের কতটা সুরক্ষা দিতে পারছি আমরা? সরকারের কাছে তাই আমাদের এটা ভিক্ষা নয়, মানবিক আবেদন, নুন্যতম সুরক্ষা চাই আমাদেরও। এই প্রসঙ্গে সুরুক্ষার দাবী তোলা এক সাংবাদিক ইন্দ্রাণী সেনগুপ্তের কথায়, “আমরা যারা রাস্তায় নেমে কাজ করি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, তাদের খবরের স্বার্থে সব সময় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা সম্ভব হয় না।

 

 

পর্যাপ্ত মাস্ক বা স্যানেটাইজার সাধারণ মানুষের কাছে যেখানে দুর্লভ, সেখানে আমাদের বারংবার হাত ধোয়ার সাবান বা স্যানেটাইজার সেটা অনেক সময় বিলাসিতাই মনে হয়। এছাড়া একই জামা, কাপড়, জুতো পড়ে বাইরের অ্যাসাইনমেন্ট করা ও অফিসে ঘোরায় অনেক সময় বিপদের ঝুঁকি থেকে যায় বৈকি! সরকার আমাদের এই দিকটা দেখলে কাজের সুবিধা হয়”। যদিও চিকিৎসকদের নিদান, মানুষের সাথে নুন্যতম দুই মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।

কিন্তু ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় কি সেই দূরত্ব থাকে? এছাড়া মাঝে মাঝে বুম, ক্যামেরা ও ট্রাই পডকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, যা সব সময় রাস্তায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অসম্ভব। মাস্ক ও গ্লাভস পরার আগে ও পরে পরিস্কার করে নিতে হবে মাস্ক ও গ্লাভস, বেশিক্ষণ এক মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করাও যাবে না। সেই ক্ষেত্রে সারাদিন কাজের মাঝে কিভাবে মানা যাবে স্বাস্থ্য বিধি! যা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় অধিকাংশ সাংবাদিক। আর কর্মের স্থান যদি হয় সংক্রামিত এলাকায় হয়, সেই ক্ষেত্রে অনেকটাই জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়, এমনই মতামত বিশেষজ্ঞদের।

তবে অসুখের যে কোন সংক্রমণ দেখা দিলেই ঊর্ধ্বতনকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত মিডিয়া হাউজকেই। ডাক্তারদের মত, এই সময় তেল মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে হাল্কা খাবারই খাওয়া উচিৎ। চিকিৎসকদের দেওয়া স্বাস্থ্য বিধির সাথে কর্মের দায়িত্ববোধ, এই দুইয়ের মিশেলে নীরবে নিজের কাজ করে চলা সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এবার সরকার একটু নজর দিক, এমনটাই আশা জীবন বিমার আওতা থেকে বঞ্চিত সাংবাদিকদের। আর এরই পাশাপাশি সরকারের সাথে সারা রাজ্যের সমস্ত জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারাও যদি মানবিকতার স্বার্থে এই বিষয়ে নজর দেন, তবেই সর্বাত্মকভাবে করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেতে লড়বে ও জিতবে এক ঐক্যবদ্ধ নতুন ভারত।

 

 

 

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply