দীর্ঘ সম্পর্কের পরে বিয়ে, কিন্তু বাধ সাধলো নেশা— দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু মদ্যপ বরের, সোশ্যাল মিডিয়াতে ডাইনি আখ্যা শোকার্ত স্ত্রীকে

0

HnExpress ১৩ই ডিসেম্বর, প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ কথায় আছে, “জন্ম মৃত্যু বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে।” সম্প্রতি কলকাতার বাঘাযতীন এর বাসিন্দা নীলাদ্রি চক্রবর্তীর বিয়ে হয়, কিন্তু বৌভাতের সকালেই আকস্মিক মৃত্যু হল তাঁর। ঘটনাটি ঘটে বাঘাযতীন নেতাজী নগর থানা এলাকাতে। বয়স মাত্র ছাব্বিশ বছর। দীর্ঘ সম্পর্কের পরে প্রেমিকার সাথেই বিয়ে হয় গত ১০ই ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। এরপর বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন তিনি। ফেসবুকেও বেশ আনন্দ সহকারেই বিয়ের কিছু ছবিও শেয়ার করে নীলাদ্রি।

বৌভাত হওয়ার কথা ছিল গতকাল, অর্থাৎ ১২ই ডিসেম্বর। বাড়ির সামনে মাঠে বেশ বড় করেই প্যান্ডেল বাধা হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের আনন্দে এদিন বন্ধুদের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করেন তিনি। মদের নেশার সাথে সিগারেটেরও নেশা ছিলো। বৌভাতের আগের দিন মদ্যপ অবস্থাতে রাত্রে ঘরে ফিরে সিগারেট হাতেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। এদিকে জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন থেকে ধিকে ধিকে বালিশে আগুন লেগে যায়। দরজা-জানলা বন্ধ থাকার কারণে ঘর ধোঁয়াতে ভরে যায়।

সুত্রের খবর, এদিকে প্রচুর পরিমানে মদ পানের জন্য ওঠার অবস্থাতে ছিলেন না তিনি, ফলে ওই অচেতন অবস্থায় বদ্ধ ঘরেই ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় তাঁর। পরদিন ভোরে তাঁর বাবা ছেলেকে ডাকতে এসে অচৈতন্য অবস্থায় দেখেন। খবর দেওয়া হয় নেতাজী নগর থানাতে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে। পুলিশ সূত্রের খবর, গ্যাসট্রিক আলসারে ভুগছিলেন তিনি, তাছাড়া ছিল লিভারের সমস্যাও। আর তার সাথে শরীরে ধোঁয়া থেকে উৎপ্নন অতিরিক্ত কার্বন মনােক্সাইড প্রবেশ করাতেই মৃত্যু হয়েছে নীলাদ্রির।

আনন্দ, হট্টগোলের বদলে শোকের ছায়া নেমে আসে দুই পরিবারেই। তবে এটা বলাই বাহুল্য যে, এই দূর্ঘটনা কিন্তু ধূমপান ও মদ্যপান এর ফল স্বরূপ ঘটে গেছে। কারণ সতর্কীকরনে থাকা সত্বেও বেশিরভাগই মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে মদ পান করে থাকেন, যার ফল স্বরূপ মাত্র ২৬ বছরের নীলাদ্রির জীবন শেষ হয়ে গেলো আর নববধূর জীবনে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া। আসলে মানুষ এই সুরাসক্তিকে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যা দেয়, তো আবার কেউ একে দুঃখ ভোলার মহাঔষধ মনে করে তা লিমিট ছাড়িয়ে পান করে যায়।

মৃত্যুর আগে ফেসবুকে নীলাদ্রি নিজের বিয়ের আগে ও পরের বহু ছবি আপডেট করে ছিলেন। এদিকে আত্মীয় স্বজনদের মারফত নীলাদ্রি মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পরে সেই সোশ্যাল মিডিয়াতেই। আর ২০২০’র যুগে দাঁড়িয়েও সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে থাকা নেটিজেন থেকে শুরু করে কিছু বিকৃত মনস্ক মানুষের দল বিয়ের পরের দিনই স্বামীকে হারিয়ে সদ্য বিধবা হওয়া অনিন্দিতাকে ডাইনি আখ্যা দিতে থাকে। যাদের বিবেচনাহীন মন্তব্য করাটাই হলো মূল উদ্দ্যেশ্য। ঠিক-বেঠিক এর পরিমাপ করার ক্ষমতা তাদের থাকে না।

আসলে নীলাদ্রির মদ্যপ অবস্থাকে আড়াল করার জন্যই অনিন্দিতাকে অপয়া, রাক্ষুসি, অলক্ষী বলে নামকরন করে ফেলে, যেখানে মেয়েটি সদ্য স্বামীহারা, এমনটাই মনে করছে নেটিজেনদের একাংশ। বর্তমানে আমরা ২০২০তে দাঁড়িয়ে। তবে এই ভুলটা ২০২০তে দাঁড়াবার জন্য নয়, ভুলটা হলো আধুনিক শিক্ষাতে শিক্ষিত হয়েও আমাদেরই সমাজে এমন কিছু ব্যাক্তি আছেন, যারা আজও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। স্মার্ট ফোন এর যুগেও তারা বিশ্বাস করে ডাইনির মতো অলীক কল্পনার গল্পকে।

এর থেকে বোধহয় আদিম যুগে ফিরে যাওয়াই ভালো। আর কিছু না হোক শিক্ষিত সমাজের ভীড়ে লুকিয়ে থাকা অশিক্ষিতদের মুখ থেকে অন্তত ডাইনি অপবাদ তো আর শুনতে হবে না আজকের শোকস্তদ্ধ অনিন্দিতাদের। যারা স্বপ্নের জাল বুনে ভালোবেসে আলোর পথে পা রেখেও অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তাদের হাহাকার এই তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ শুনেও শুনতে পায় না।

তথ্যসূত্র ও চিত্র ঃ সোশ্যাল মিডিয়া।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply