ব়্যাগিং— শিক্ষাজগতে ফের একটা বড় প্রশ্ন উস্কে দিল

0

HnExpress অশোক সেনগুপ্ত, কলকাতা : ভারতের উত্তরপ্রদেশের আজমগঞ্জের মণীশ আর প্রায় ১৫৩১ কিলোমিটার দূরের এই বাংলার নদিয়ার বগুলার স্বপ্নদীপ, দুই কিশোর প্রায় একসঙ্গেই খবর হল নিজের জীবন খুঁইয়ে। দুজনেরই মৃত্যুই কিন্তু পুরোদস্তুর অস্বাভাবিক (????????? ?????)। স্বপ্নদীপ চলে গেল ৯ই আগস্ট গভীর রাতে, আর মণীশ ১১ই আগস্ট।

যাদবপুরে সদ্য পড়তে আসা স্বপ্নদীপকে নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা বাংলা। নির্দোষ ছেলেটির মৃত্যুর জন্য ব়্যাগিং (???????), প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ই এক সদ্য প্রাক্তন পড়ুয়া সৌরভ চোধুরী অর্থাৎ ‘দাদা’ -কে। আর অন্যদিকে, মণীশ পড়ত রাজস্থানের কোটায়, ইঞ্জিনিয়ার তৈরির এক আধুনিক পাঠশালায়। তার বাবা ওই দিনই ছেলের সঙ্গে হোস্টেলে দেখা করতে এসেছিলেন।

ফিরে যাওয়ার পথে হঠাৎ কি মনে করে ছেলেকে ফোন করেন। কেউ ফোন না ধরায় প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীকে ছেলের ঘরে খোঁজ নিতে অনুরোধ করেন। সেই কর্মী মণীশকে দেখেন বেডকভারে গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে। কোটার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবছর নাকি ১৯ জন পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু (????????? ?????) হয়েছে। এর সবকটি হত্যা বা আত্মহত্যায় বাধ্য করা— তার বিশদ খবর এ রাজ্যে আসেনি। তবে স্বপ্নদীপকে নিয়ে হইচইয়ের সঙ্গত কারণ আছে বই কী!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে সিঙ্গুরের রানি রাসমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব সামলিয়েছেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানি ডঃ আশুতোষ ঘোষ। ২০১৫-‘১৬ তে তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (???? ??????????)। এদিন আমাদের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আমি গত প্রায় এক দশক প্রশাসক হিসাবে আমার বিভাগে কোথাও ব়্যাগিংয়ের সমস্যা দেখিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে যখন ছিলাম হোস্টেল সুপারকে আবেদন করেছিলাম এদিকটায় কড়া নজর রাখতে এবং প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।”

আশুতোষবাবুর মতে, “এই নজরদারি এবং চটজলদি ব্যবস্থা নেওয়াটা খুবই দরকার। পুলিশ জেনেছে স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুর (????????? ?????) আগে তাঁর ব্যাপারে অন্তত বার দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরমহলে ফোন গিয়েছিল। বিভিন্ন মহলে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কেন ডিন এবং সুপার দ্রুত এর ব্যবস্থা নিলেন না? নিলে হয়ত এই নৃশংস অত্যাচার করে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাকে এড়ানো যেত।”

এই প্রশ্নের উত্তর এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন আর এক প্রাক্তন উপাচার্য, একটি বেসরকারি নামী প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা ডঃ বাসব চৌধুরী। ১৪ বছর তিনি এই রাজ্যের একাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (?????????? ?? ??????????) উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। তিনিও বিশ্বাস করেন, “স্বপ্নদীপের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষর তৎপর হওয়া উচিত ছিল। ছাত্র রাজনীতি এই প্রতিষ্ঠানের সর্বনাশ করেছে। প্রশাসনের কর্তারা তাই অধিকাংশই ধরি পানি না ছুঁই জল নীতি নেওয়ার চেষ্টা করেন।”

২০২২ -এর নভেম্বর মাসে ব়্যাগিংয়ের (???????) অভিযোগে আগেও একবার সরগরম হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়! আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র দাবি করেন যে, তাঁকে নিউ ব্লক হোস্টেল এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদ্য প্রাক্তন এক ছাত্র মারধর করেছে। আর এমনকি কলার ধরে তাঁকে হোস্টেল থেকে বার করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল।

জানা গেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ওই ছাত্র বিশেষ ভাবে সক্ষম (????????? ????????) ছিলেন। সেই কারণেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর ‘রাইটার’ দরকার হয়। রাইটার খোঁজার জন্যই তিনি নিউ ব্লক হোস্টেলে গিয়েছিলেন বলে দাবি। সেখানেই ঘটেছে এই অপ্রীতিকর ঘটনা। প্রথমেই তাঁকে গালিগালাজ করার পরে চরম মারধর করা হয়েছে বলে দাবি।

ওই ছাত্র তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়ের কাছে এ বিষয় অভিযোগ জানান। অভিযোগ জানান ইউজিসি-র কাছেও। অভিযোগের পরেই হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই অভিযুক্ত ছাত্রকে।

বাসববাবুর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট, ইউজিসি— এরা যথেষ্ঠ কড়া সুপারিশ করেছে। ব়্যাগিংয় (???????) রোখার আইনও আছে এদের। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার সঙ্গে তার রূপায়ণের। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত পড়ুয়া যদি কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তাহলেই মুস্কিল। কেবল শাস্তি নয়, ছাত্র সংগঠনের আপত্তিতে কর্তৃপক্ষ নানা সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্তও রূপায়ণ করতে পারেনি।

কিছু উপাচার্য মনে করেন, “একগুচ্ছ সংগঠন আছে যাদবপুরে। কিছু হলেই পথ অবরোধ, মিছিল, ভাঙচুর চালায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম চিত্র দেখা যায় না। সরকারও সমঝোতার পথে হাঁটাটাই শ্রেয় বলে মনে করে।“ ডঃ আশুতোষ ঘোষও মনে করেন, “এদিক থেকে যাদবপুরে প্রশাসন বলে কিছু নেই। যা একটা সীমাহীন নির্লজ্জতায় পরিণত হয়েছে।” যাদবপুরে ব়্যাগিং (???????) নিয়ে বহু অভিযোগ নানা সময়েই উঠে আসে।

কিন্তু বেশিরভাগই ধামাচাপা পড়ে যায়। যেমন, ২০১৫-র আগস্ট মাসে দুই পড়ুয়া (অর্থনীতি, দ্বিতীয় বর্ষ ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) ব়্যাগিংয়ের (???????) প্রতিবাদ করায় তাঁদের লাঞ্ছিত হতে হয় বলে অভিযোগ। একদল ‘দাদা’ গোছের সিনিয়র তাঁদের মুখ বন্ধ করে রাখার কড়া নির্দেশ দেয়। এক উপাচার্য বলেন, “প্রচারমাধ্যম সরব হলেই ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষরা নড়েচড়ে বসে।

অন্যথায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়টি সম্পূর্ন ধামাচাপা পড়ে যায়।” ২০১৩-র ১১ই সেপ্টেম্বর দমদমের একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেনির এক ছাত্রীকে বাথরুমে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় এলাকায় প্রবল বিক্ষোভ দেখা দেয়। ব়্যাগিংয়ের (???????) অভিযোগ ওঠে। পড়ুয়াদের উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারায় ভাঙচুরের চেষ্টাও হয়। স্কুলের অধ্যক্ষা পদত্যাগে বাধ্য হন। তাঁকে সহ প্রায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আর সহমর্মিতা দেখাতে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র নিগৃহিতার বাড়িতেও যান। অধ্যক্ষা অবশ্য জামিন পেয়েই অক্টোবর মাসেই ফের সেই স্কুলেরই দায়িত্ব নেন। সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার এই শীর্ষ সংবাদ আজ আমাদের কারও মনে নেই হয়তো। ডঃ বাসব চৌধুরী বলেন, “সুশীল সমাজ আজ কোথায়? নেতারা কোথায়? দলমতের উর্দ্ধে উঠে যদি ব়্যাগিংয়ের প্রতিবাদ আমরা না করতে পারি, দৃষ্টান্তমূলক ২-৪টি কড়া শাস্তি যদি না দেওয়া যায়, অভিযুক্তকে বাঁচাতে ছাত্র সংগঠন যদি উদ্যোগী না হয়, প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা যদি সদিচ্ছা এবং তৎপরতা না দেখান, ব়্যাগিং (???????) কোনো দিন বন্ধ করা সম্ভব নয়, কোনো দিনই ৱ্যাগিং মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ে উঠবে না।”

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply