কামদুনির গণধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট
HnExpress ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত, কামদুনি : “বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে”। প্রায় দশ বছর অতিক্রান্ত করে অবশেষে শুক্রবার কামদুনির গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলির সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। নিম্ন আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী আমিন আলি দশ হাজার টাকা জরিমানার বদলে পেলো বেকসুর খালাস। অর্থাৎ গুরু পাপে লঘু দন্ড।
অন্যদিকে, নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেয়েছেন হাইকোর্ট থেকে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানান, ‘‘দোষীরা রায় চলাকালীন ১০ বছর জেল খেটেছে বলেই খালাস পেয়ে যাবে? এটা কী হতে পারে? কামদুনির সেই কলেজ ছাত্রীর উপর হওয়া এমন নৃশংস অত্যাচার, গণধর্ষণ ও অবশেষে খুনের আসামীদের এ কেমন সাজা?
একটা নিষ্পাপ মেয়ের এমন করুণ পরিণতির পরেও সে পেলো না তাঁর মৃত্যুর সঠিক বিচার! এমনই নানা অভিযোগের সুর ভিক্টিমের পরিবার থেকে প্রতিবেশি সবার মুখেই। রায় শুনতে এদিন কলকাতা উচ্চ আদালত চত্বরে হাজির হয়েছিল গোটা কামদুনি। কিন্তু রায় শোনা মাত্রই আদালতের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়লো মৌসুমি, টুম্পা কয়াল। এমন নৃশংসতার সুবিচারের আশায় এবার সুপ্রিমকোর্ট অর্থাৎ দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে তোড়জোড় শুরু করেছে গোটা কামদুনি।
কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদের নিরপেক্ষ ও অন্যতম মুখ হলেন ওই গ্রামেরই মেয়ে মৌসুমী কয়াল ও টুম্পা কয়াল। আজ রায় ঘোষণা হবে, তাই সাত সকালেই কলকাতা উচ্চ আদালত চত্বরে পৌঁছে যান তাঁরা। আসার আগে কামদুনি গ্রামে নির্যাতিতার মূর্তিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করে এসেছিলেন, এই আশায় যে আজ তাঁরা সুবিচার পাবেই। কিন্তু সেটা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ মৌসুমী বলেন, ‘‘এই রায় আমরা কেউ মানি না। আমরা খুব তাড়াতাড়ি শীর্ষ আদালতে যাব।
দরকারে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও দরবার করবো। কিন্তু দোষীদের সাজা আদায় না হওয়া অব্দি আমাদের এ লড়াই বন্ধ হবে না।’’ তাঁরা আরও বলেন যে, দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডের যিনি মূল আইনজীবী ছিলেন আমরা তাঁর কাছেও সাহায্য প্রার্থনা করবো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৭ই জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে উত্তর ২৪ পরগনার অন্তর্গত কামদুনির এক কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছিল।
সেই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। যার রেশ পৌঁছে গিয়েছিল ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও। দোষীদের চরম সাজার দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন শুরু করে গোটা কামদুনি গ্রাম। সে দিন গ্রামবাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরাই হলেন আজকে কান্নায় ভেঙে পড়া সেই মৌসুমী, টুম্পা। রায় শোনার পর তাঁরা নতুন করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন বলে জানালেন সংবাদমাধ্যমকে।