বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের মৃত্যু রহস্যের বেড়াজালে, মৃতদেহ উদ্ধার হলো শৌচাগারে

0

HnExpress ১৮ই সেপ্টেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ করোনা আবহের ফ্যাশন তথা ফিল্ম জগতে মধ্যেই আবারও এক নক্ষত্রপতন। গতকাল রাতে মাত্র ৬৩ বছর বয়সেই অমৃতলোকে চলে গেলেন বিখ্যাত লিজেন্ড ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত। যিনি ফ্যাশন জগতে মেয়েদের পোশাকের পাশাপাশি পুরুষদের পোশাকেও এনেছিলেন অভিনবত্বে ঘেরা আভিজাত্যের ছোঁয়া। বলাই বাহুল্য যে, বাঙালির প্রাচীন ধুতি পরিধেয়কে তিনি গোটা দেশে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। আর সেই সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে রহস্যের বেড়াজাল।

সুত্রের খবর, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১.৩০ টা নাগাদ কটেয়া থানার অন্তর্গত ব্রড স্ট্রিটের নিজের বাড়ির বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় শর্বরী দত্তের মৃতদেহ। পরিবারের সদস্যরাই তাঁকে বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখেন। সাথে সাথে তলব করা হয় তাদের পারিবারিক বন্ধু তথা বিশিষ্ট চিকিত্‍সক অমল ভট্টাচার্যকে। ঘটনার খবর পেয়েই অকুস্থলে এসে পৌঁছায় কড়েয়া থানা ও কলকাতা পুলিসের হোমিসাইড শাখা। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর পাশাপাশি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাও দায়ের করা হয়।

কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার দুঁদে অফিসারদের তত্ত্বাবধানে চলছে তদন্ত। তবে শর্বরী দত্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে দানা বাঁধছে সন্দেহ। পুলিশ এর কাছে মৃতার ছেলে অমলিন দত্ত জানিয়েছেন যে, “মাকে ১৭ তারিখ থেকে আর সারাদিন দেখতে পাইনি। আমরা ভেবে ছিলাম তিনি হয়তো বাইরে কোথাও গেছেন। কারণ ১৬ তারিখ তিনি সারাদিনই বাইরে ছিলেন। সেদিন রাতের শেষ খাবারটা নিতে দেখেছিলাম তাঁকে। কিন্তু ১৭ তারিখ রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই বাথরুমে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ঠিক তার আগের দিনই ডিনারে মায়ের সাথে শেষ দেখা হয় আমার। তার পরেই এই মর্মান্তিক ঘটনার সুত্রপাত।” এদিন গভীর রাতে দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় দেহ। জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই নানা ধরনের ওষুধ খেতেন শর্বরী দত্ত। তবে তাঁর পারিবারিক চিকিত্‍সক জানিয়েছেন, বাথরুমে তার দেহের পাশে রক্ত পড়ে ছিল। আর শুধু তাই নয়, কানের পাশে ও পায়ের গোড়ালিতে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলেও জানিয়েছন চিকিত্‍সক। তবে তিনি যে কতক্ষণ সেখানে এইভাবে পড়ে আছেন তা জানা যায়নি এখনো। তবে ডাক্তারের মন্তব্য অনুযায়ী শর্বরী দত্তের পূত্রবধু দাবি করেন, তাঁর শ্বাশুড়ি দীর্ঘদিন ধরে হরমোনের ওষুধ খাচ্ছিলেন। যার ফলে পিরিয়ড-এর মতো তার রক্তস্রাব হত।

বাথরুমে পড়ে থাকা রক্ত যে সেই কারণেও হতে পারে বলে দাবি পূত্রবধুর। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সময় ধরেই দেশ-বিদেশে ফ্যাশন ডিজানিং এর সাথে যুক্ত ছিলেন শর্বরী দত্ত। মূলত নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফ্যাশন দুনিয়ায় পুরুষদের পোশাক নিয়ে এক অভিনব ধারায় কাজ শুরু করেন। কারণ ভারতে তখনও পুরুষদের ফ্যাশন নিয়ে সে ভাবে কেউ ভাবত না। ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এক উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে আসেন শর্বরী দত্ত। ধুতির ফ্যাশনে সারা দুনিয়ায় পরিচিত লাভ করেন তিনি।

চোখের নিচে পুরু কাজল। কানে, গলায় ভারী রুপোর গহনা, নাকে পেল্লাই নথ। আঙুলে বেশ কয়েকটি আংটি। ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্ত বলতে এক নজরে এই চেহারাটাই ভেসে ওঠে চোখের তারায়। রঙিন ধুতির পাড়ে কাঁথা স্টিচ বা রাজস্থানী প্রিন্ট, এসব ছিল তাঁরই অনবদ্য সব সৃষ্টি। নানা সময় বিভিন্ন দেশের মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির পোশাকে দারুণ মোহময়ী রূপ প্রদান করতে পারতেন তিনি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল মিশরীয় সভ্যতা। ২০০৮ সালে ধুতি, পাঞ্জাবির উপর ইজিপ্ট ঘরানার কারুকার্য করে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।

টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির একাধিক অভিনেতা তাঁর ডিজাইন করা পোশাকেই সেরেছেন তাদের বিবাহ বাসর। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েডিং কস্টিউমও তিনিই তৈরি করে ছিলেন। কয়েক বছর আগে নিজস্ব একটি ফ্যাশন স্টোরও উদ্বোধন করেন তিনি। যার নাম দিয়েছিলেন ‘শূন্য’। মূলত ফ্যাশন নিয়ে কাজ করেছেন টলিউডের টপ হিরো প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় অভিনেতা, অভিনেত্রীদের সঙ্গে। পুরুষদের ট্রাডিশনাল পোশাক ডিজাইনিং এর জন্য সারা ভারতবর্ষে সফল ডিজাইনার হিসেবে খ্যাতির শিখড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।

এছাড়াও শর্বরী দত্তের ডিজাইন করা পোশাক পরেছেন জগজিত্‍ সিং, অভিষেক বচ্চন, বিজয় মাল্য, লিয়েন্ডার পেজ, কপিল দেব, পাকিস্তান এর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ক্রিকেট তারকা সচিন তেণ্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শোয়েব আখতার, বাইচুং ভুটিয়া সহ বহু বিশিষ্ট ব্যাক্তি বর্গ। তবে ফ্যাশন ডিজাইনিং ছাড়াও আরো একটি পরিচয় রয়েছে তাঁর। তিনি হলেন বাংলার কবি অজিত দত্তের মেয়ে। ফলে শৈশব থেকেই কবিতা, গান, নাচ,‌ শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছিলেন শর্বরী দত্ত। বেশ জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ ফ্যাশন দুনিয়া সহ গোটা বিনোদন জগত্‍।

FacebookTwitterShare

Leave a Reply Cancel reply