গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে
তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে আগামী বিধানসভা নির্বাচন লড়তে চলেছেন বিমল গুরুং
HnExpress ২২শে অক্টোবর, অরুণ কুমার, কলকাতা ঃ সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রকাশ্যে এলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং। দাবি একটাই, “চাই গোর্খাল্যান্ড”।ছয় বছর ধরে এই দাবিতে লড়াই করে এসেছি এবং লড়াই করে যাবো। প্রকাশ্যে এসে এমনটাই জানালেন, পাহাড়ের হিরো। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর প্রকাশ্যে এলেন একদা পাহাড়ের বেতাজ বাদশা বিমল গুরুং। গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে আঁকড়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে আগামী ২১-র বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার কথা ঘোষণা করলেন।
করোনা আতঙ্ককে সরিয়ে পাহাড়ে নতুন উত্তাপ ছড়িয়ে দিলেন বিমল গুরুং। বুধবার পঞ্চমীর বিকালে কলকাতার সল্টলেকে গোর্খা ভবনের সামনে গাড়িতে করে হাজির হন বিমল গুরুং। পুলিশও মোতায়েন ছিল। কিন্তু গোর্খা ভবনের দরজা বিমল গুরুঙের জন্য খোলেনি। দীর্ঘ প্রায় ৪০মিনিট ঝাড়খন্ডের নম্বর প্লেট লাগানো একটি গাড়িতে বসে গোর্খা ভবনের গেটের বাইরেই অপেক্ষা করে ফিরে যান বিমল গুরুঙ। কাজেই গোর্খা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা থাকলেও তা করতে পারেননি তিনি।
পরে অবশ্য তিনি কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে পরিস্কার জানিয়ে দেন যে, ২১-এর বিধান সভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে লড়তে চান। সেই সঙ্গে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তোপ দাগতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রিতি ভঙ্গের অভিযোগ করেন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিমল গুরুং আরও জানান যে, তিনি কোনো মূল্যেই গোর্খাল্যান্ড এর দাবি থেকে সরছেন না।
তিনি স্পষ্ট বলেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে এক চুলও সরছি না। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে গোর্খাল্যান্ডের জন্য করবো করবো করেও কিছুই করেনি বিজেপি সরকার। মোদি-অমিত শাহরা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেননি। তবে যারাই গোর্খাল্যান্ডের জন্য কাজ করবেন তাদের সঙ্গে আমি আছি। ২০২১ এর নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বো। তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে লড়েই জবাব দেব। আমি দেশদ্রোহী নই, আমি রাজনীতিবিদ।
এদিকে তৃণমল রাজ্যভাগের চরম বিরোধী। কাজেই বিমল গুরুঙের এই বক্তব্যের পর তৃণমূল প্রকাশ্যে তাঁর সঙ্গে জোট করবে কি করবে না সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বিমল গুরুঙের প্রকাশ্যে আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এদিন বিকেল থেকে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে উঠে আসে নানা রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে বিমল গুরুঙের নতুন করে সমঝোতার দিকটি শুরুতেই দেখে ছিল রাজনৈতিক মহল।
কেননা তাদের ধারনা ২১-র বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ের পাশাপাশি তরাই, ডুয়ার্সে জেতার জন্য বিজেপিকে ঠেকাতে হলে বিমল গুরুঙকেই সামনে রেখে তৃণমূল ছক কষছে। এদিন বিমল গুরুং সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করার কথা প্রকাশ্যে আসায় সেই দিকটি জোরালো হয়ে উঠেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিমল গুরুঙের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে, তাঁকে হাতের সামনে পেয়েও পুলিশ গ্রেফতার না করল না কেন!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরি সংবাদ মাধ্যমকে হাতিয়ার করে সেই একই সুরেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য হলো, যার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী সহ একাধিক মামলা চলছে, যাকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বেরিয়ে না পেয়ে ফেরার আসামি বলে ঘোষণা করেছে, সেই বিমল গুরুং এর সঙ্গে তৃণমূল ভোটের রাজনীতি করার জন্য যদি হাত মেলাতে চায় তাহলে জনগণ কিন্তু তার সবটাই বুঝতে পারবে।
বিজেপি’র-রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ খবর পেয়েছি বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল বিমল গুরুংরা। কেন্দ্র সরকার পাহাড় সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ শুরু করেছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বৈঠকও ডেকেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার তাতে যায়নি। তারপরেও কেউ তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলালে কি করা যাবে।
গত তিন বছর আগে রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ছিলেন বিমল গুরুং। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০টি মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালের পর এই প্রথমবার বিমল গুরুং প্রকাশ্যে আসেন। গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে গত তিন বছর আত্মোগপন করে ছিলেন। তবে রাজনৈতিক কোনও বিষয় নিয়ে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।