না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ আলোর উৎসব কালীপুজোর রাতে নক্ষত্র পতন রাজনৈতিক মহলে। ডাক্তারদের সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কালীপুজোর সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
পুজোর পর থেকেই সামান্য অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিন্তু গত ২৫শে অক্টোবর শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে হৃদযন্ত্রের সমস্যার দরুন উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল বলে হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে। সেদিন থেকেই কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে চিকিত্সা চলছিল বর্ষীয়ান নেতার। আর সেইমত শুক্রবার তাঁর হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
সেই খবর পেয়েই নিজের বাড়ির কালীপুজো ছেড়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছুটি তিনি পেলেন ঠিকই, কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হলো না। রাত নটা ২২ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দীপাবলির দিনে তাঁর প্রয়াণের খবরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এমন আলোর দিনে অন্ধকার নেমে আসবে ভাবতেও পারিনি, আমি সুব্রতদার মরদেহ দেখতে পারব না।’’ জানা গিয়েছে, বর্ষীয়ান নেতার মরদেহ এদিন রাখা থাকবে এসএসকেএম -এর কার্ডিওলজি বিভাগেই।
শুক্রবার সকালে সেখান থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পিস ওয়ার্ল্ডে। আর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্র সদনে। সেখানেই তাঁজে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সকলে। তারপর কিছুক্ষণের জন্য মরদেহ যাবে বাড়িতে। এরপর তাঁর দেহ থাকবে তাঁরই নিজের প্রিয় ক্লাব একডালিয়া এভারগ্রিনে। তারপরেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে সুত্রের খবর। কিন্তু সেই শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন না তৃণমূল সুপ্রিমো, এতটাই মর্মাহত ও শোকসন্তপ্ত তিনি। তাঁর কথায়, ‘বিরাট অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল দেশ তথা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।’
তিনি এদিন তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “সুব্রতদা ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং স্বনিযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করে গেছেন। হাসিমুখে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে আমাদের সরকারের কাজে অতুলনীয় অবদান রেখে গেছেন। এছাড়াও অতীতে কলকাতার মেয়র হিসাবেও কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা স্মরণীয়। সুব্রতদা, ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তাঁর নেতৃত্বেই বড় হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং শারদীয়া দুর্গাপূজার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সুব্রতদার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন। আজ তাঁর অকাল প্রয়াণ আমার কাছে এক বিরাট ক্ষতিই শুধু নয়, রাজ্যের তথা দেশের রাজনৈতিক জগতে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি। আমি ছন্দবাণী-বৌদি সহ সুব্রতদা’র পরিবার-পরিজন ও তাঁর অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”