পুজোর আগেই বাংলা জুড়ে বর্ষণের প্রবল আশঙ্কা, একাধিক জেলায় জারি কমলা সতর্কতা
HnExpress অরুন কুমার, ওয়েদার রিপোর্ট ঃ পুজোর আগেই বাংলা জুড়ে বর্ষণের প্রবল আশঙ্কা। নিম্নচাপের ভ্রুকুটি সরিয়ে শুক্রবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার ও শনিবার কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ ছেড়ে এবার উত্তরবঙ্গের পথে অগ্রসর নিম্নচাপ! ফলে বানভাসী হওয়ার সম্ভাবনায় জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা। এদিকে শনিবার সকালেই বজ্রবিদ্যুত্ সহ বৃষ্টিতে সতর্কতা জারি করে আলিপুর হাওয়া দফতর।
আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝেপে বৃষ্টি আসছে পূর্ব বর্ধমান সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।
তবে এদিন মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় যেমন দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টির কথা আগেই জানিয়েছিল হাওয়া অফিস। এছাড়াও বীরভূম, মুর্শিদাবাদেও ফের বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর সুত্রের পূর্বাভাস।
অন্যদিকে, লাগামহীন ডিভিসির ছাড়া জলে রাজ্যের একাধিক জায়গা প্লাবিত হয়েছে অজয় নদের রোষানলে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ১ লক্ষ্য ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আর এছাড়াও, মাইথন থেকে ৮০ হাজার কিউসেক ও পাঞ্চেত থেকে ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যদিও ডিভিসির সূত্রে জানানো হয়েছে, ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টির কারণেই ছাড়া হয়েছে এই জল। আর বৃষ্টি না হলে জল ছাড়ার পরিমান কমানো হতে পারে। যদিও এই জল ছাড়াকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ডিভিসিকে তোপ দাগিয়ে বলেন, এটা ম্যান মেড বন্যা। যাকে ম্যান মেড ক্রাইমও বলা যায়।
তবে এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসের
তথ্য অনুযায়ী, গত ৪১ বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দেশে বর্ষা ফিরে যেতে এতটা দেরি করছে। আর তার জন্য কার্যত পুজোর আগেই মেঘলা আকাশ দেখা যেতে শুরু করেছে রাজ্য জুড়ে। নিম্নচাপের সংকটে কার্যত জল থইথই পরিস্থিতি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। আসন্ন শারদোৎসবের সময়ে দুর্যোগের মেঘের ভ্রূকুটি রীতিমতো শঙ্কায় রেখেছে রাজ্য প্রশাসনকে।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদেও রয়েছে ভারী বর্ষণের আশঙ্কা।
অপরদিকে, দুর্যোগের ঘন কালো মেঘ এবার উত্তরবঙ্গের মাথায়। শুক্রবার থেকেই প্রবল বর্ষণের সতর্কতা আগেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। প্রবল বিপর্যয়ের আশঙ্কায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসন তরফে। এছাড়াও ২রা অক্টোবর শনিবারও উত্তরবঙ্গের সবকটি জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয়েছে। এরপর সপ্তাহান্ত থেকে পর পর কয়েকদিনই বেশ ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, উত্তরবঙ্গের তিন জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। রবিবার থেকে কোচবিহার ও আলিপুর দুয়ারে প্রবল বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এদিকে, ঝডা়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির জেরে ডিভিসি ফের জল ছাড়ার পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে দামোদর অববিবাহিকার নদী সংলগ্ন এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চল ভেসে যেতে পারে। যার মধ্যে আছে হুগলি, বীরভূম, বর্ধমানে একটি বড় এলাকা।
এই পরিস্থিতি দেখতে শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্লাবিত এলাকায় কপ্টারে চেপে পরিদর্শন করতে যান। নবান্ন থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে কোন অবস্থার পরিপেক্ষিতে সিভিল ডিফেন্স ও প্রশাসনকে তৈরি রাখা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এদিকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে যে, এই বছর স্বাভাবিক বর্ষণ নেমেছে। তবে বর্ষার বিলম্ব করে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সাধারণত, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করে। তবে এবার সেভাবে ফেরার মেজাজে নেই বর্ষারানী। অক্টোবরের শুরুতেও বর্ষার বিদায় নেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে এতটা বিলম্বিত বর্ষা বিদায় ৪১ বছরে দ্বিতীয়বার বলে জানিয়েছে আইএমডি। সারা দেশে বর্ষার জেরে ৯৯ শতাংশ বর্ষণ হয়েছে।
জানা গিয়েছে ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আকাশে মেঘ থাকছে। ফলে পুজোর মুখেই বৃষ্টির প্রবল প্রভাব থাকছে বলে মনে করছেন আবহবিদরা। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বর্ষণ হয়। এদিকে, আসানসোল ও মেদিনীপুরের মতো জায়গায় তো প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। আপাতত সেই নিম্নচাপ সরে গিয়ে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের ওপরে অবস্থান করছে। এই নিম্নচাপ এলাহাবাদ এবং বিহারের উত্তরাংশ হয়ে হিমালয় সংলগ্ন এলাকার দিকে সরে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তার ফলেই হবে বর্ষণ। আগামী বেশ কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।