এক গভীরতম সঙ্কটের মুখোমুখি উত্তরবঙ্গের চা শিল্প
HnExpress ৫ই মে, অরুণ কুমার, উত্তরবঙ্গ ঃ দেশ তথা রাজ্য জুড়ে যেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চলছে লকডাউন প্রক্রিয়া, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হলো চা শিল্প। সেখানে কিন্তু লকডাউনের ফলে দারুণ ভাবে প্রভাবিত এই চা শিল্প। যা আগামী দিনে গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে।
এ বিষয় নিয়ে জানিয়েছেন ‘টি’ এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গ শাখার সচিব ড: রাম অবতার শর্মা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘টি’ অ্যাডভাইজারি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান বিশিষ্ট চা শিল্পপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী। এরা দুজনেই উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে অভিজ্ঞ। এই সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চা শিল্প সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য কি? চলুন দেখা যাক কি এ নিয়ে বলেছেন তাঁরা।
মুলত উত্তরবঙ্গের চা শিল্প পূর্ব ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের উত্তর বঙ্গীয় অঞ্চলে অবস্থিত চা উৎপাদন এলাকা ও চা উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি শিল্প। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর এবং কুচবিহার জেলায় চা বাগান ও চা উৎপাদনের অনেক সুবিধা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্স অঞ্চলে প্রায় ৩৫০টিরও বেশি চা বাগান রয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সাড়ে ছয় লক্ষ শ্রমিক ও তাদের পরিবার।
সারা দেশে যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনের মধ্যে দিয়ে চলছে। তখন এই ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পও এক গভীর সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়ালো। এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গের দুই চা বিশেষজ্ঞ তাদের অভিমত দিয়েছেন। ‘টি’ এসোসিয়েশন ওফ ইন্ডিয়া উত্তরবঙ্গ শাখার সচিব ড: রাম অবতার শর্মা যিনি চা বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত, তাঁর মতে বিগত ১০০ বছরে চা শিল্প ওঠানামা হয়েছে, কিন্তু এবারের যে এমন লক্ষণীয় পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি তা সামলে ওঠা সত্যিই কঠিন হবে আগামী দিনগুলিতে।
আর সেই জন্য তারা চাইছেন কেন্দ্র সরকার তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, ঠিক তারই পাশাপাশি চা শিল্পের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে তাদের ২৫% এখন আমরা কাজ করতে পারছি। যেটা ৫০% নিয়ে যেতে হবে এবং তার পরবর্তী কালে আরো এটাকে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। তা না হলে কিন্তু চা শিল্প একটা বড় ধরনের ধাক্কা খাবে, বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে তারা ভারত সরকার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এবং ‘টি’ বোর্ডের কাছে, এই আবেদন করেছেন যে আগামী দিনগুলোতে লক ডাউন চলাকালীন শ্রমিকদের অংশগ্রহণ শিল্পের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবে উত্তরবঙ্গে চা শিল্প। অপরদিকে ‘টি’ অ্যাডভাইজারি বোর্ড (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে গঠিত হয়েছে) এর ভাইস চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মতে, চা শিল্প হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বান্ধব শিল্প অর্থাৎ এখানে এত বড় জায়গা জুড়ে যে শিল্প রয়েছে সেই শিল্পে শ্রমিকদের কাজ করতে গিয়ে কোনো অসুবিধা হয় না।
তারা যথারীতি সামাজিক দূরত্ব এবং শারীরিক দূরত্ব মেনেই কাজগুলো করছেন। সেই সঙ্গে চা বাগান কর্তৃপক্ষও শ্রমিকদের যথেষ্ট স্যানিটাইজ বিধি আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে এখানে চা শিল্পের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে এটা কেন্দ্র সরকারকে বুঝতে হবে। সুতরাং এখানে প্রথমে ২৫%, এরপরে ৫প% অংশগ্রহণ আনতে হবে এবং ক্রমশ ১০০% শ্রমিকদেরকে নিয়োজিত করতে হবে কাজের ক্ষেত্রে, এমনটা না হলে আগামী দিনে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
এর পতন রোধ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ সারাদেশের যে লকডাউন চলেছে এবং ফলে অনেক শিল্প বন্ধ রয়েছে। কিন্তু চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম শিল্প হতে পারে বলে মনে হয়েছে এই দুই চা বিশেষজ্ঞ এর অভিমত অনুযায়ী। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। আগামী দিনে দেখতে হবে তাঁরা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন এই শিল্পকে বাঁচাতে। তবে এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে সেই দুই সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর।