কর্মসংস্থান ও শিল্পের দাবীতে নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জ, বাংলায় বিজেপিকে আটকাতেই কি এই নব্য পন্থা?
HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ কর্মসংস্থান ও শিল্পের দাবীতে নবান্ন অভিযানে চলল পুলিশের লাঠিচার্জ। এদিনের ঘটনাতে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, বাদশা, ওয়াসিমদের মতো ব্যাক্তিত্বরা নিন্দা প্রকাশ করল সোশ্যাল মিডিয়াতে। বাংলায় বিজেপিকে আটকাতেই কি এই নব্য পন্থা? একদিকে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের ওপরে হামলা, আর অন্য দিকে বাংলাতে কর্মসংস্থান ও শিল্পের দাবীতে নবান্ন অভিযানে বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতা এবং কর্মীকেদের ওপরে পুলিশি অত্যাচার।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কয়েক বছর আগেও বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের গণতন্ত্রের দাবী হাতে পথে নেমেছিল সুদীপ্ত সহ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও যুব সমাজ। কিন্তু মানুষের স্বার্থে আন্দোলন করতে গিয়ে শাসকদলের লাঠি পেটায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল সুদীপ্ত গুপ্ত। এস এফ আই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এদিন নবান্ন অভিযানের চিত্রটা এমনই ছিল— গলায় বাঁশি, পায়ে বল, হাতে লাল কার্ড আর মুখে স্লোগান ‘খেলা হবে, খেলা হবে’।
প্রথমেই গণ্ডগোল বাঁধে, তারপর আচমকাই একেবারে নবান্নের সামনে চলে আসেন বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের বেশকিছু কর্মী। ওখানে দাঁড়িয়েই তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে, পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে তাঁদের আটকায় এবং সেখানেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তারপরেই আন্দোলনকারীদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয়। এদিন একাধিক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বচসা বাঁধে বিক্ষোভকারীদের।
এদিকে, বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের কর্মীদের অভিযোগ বিনা কারণেই লাঠি চার্জ করা হয় তাদের ওপরে। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এর রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র বলেন, ‘‘আগের হুঁশিয়ারির পরে আমাদের চিঠি পুলিশ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনও প্রস্তাবই পুলিশ মানতে রাজি হয়নি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, নবান্নে যাওয়া এবং এই সরকারকে ‘রিলিজ় অর্ডার’ দেওয়া। কিন্তু তাতে বাধা পেলে যা পরিস্থিতি হবে, তার দায় পুলিশ-প্রশাসনের’।
সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, এর আগেও কর্মপ্রার্থীদের প্রতীকী দরখাস্ত নিয়ে বাম যুব ও ছাত্রদের নবান্ন অভিযানে এই রকমই গন্ডগোল বেঁধে ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি ও জলকামান চালায় পুলিশ। আহত হয়ে ছিলেন অনেকেই। মূলত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দাবিতে বামেদের আজকের এই নবান্ন অভিযান ছিল। ন্যায্য দাবীর এই মিছিলে পুলিশের অত্যাচারের ঘটনাকে নিন্দা করেন সমাজের বিশিষ্টজনরা। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলেন যে “ওরা তাে স্কুল-কলেজ খােলা, শিল্প-কারখানা খােলার দাবি নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিল।
তাহলে শাসক দলের এত ভয় কিসের সে বিষয় আলােচনা করতে? তার জন্য পুলিশ লেলিয়ে দিতে হল? তবে আজকে ছাত্র-যুবরা প্রমাণ করল যে, আগামীর চ্যালেঞ্জ নিতে তারা আজও প্রস্তুত”। খেলোয়াড় ওয়াসিম কাপুরও তীব্র নিন্দা প্রকাশ কথা করেন এই ঘটনাতে। তিনি বলেন “যা হয়েছে, তা খুবই খারাপ হয়েছে। এটা অমানবিক ঘটনা বলা চলে। পুলিশ যেভাবে ব্যারিকেড করে আন্দোলন রােখার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, তাতে এরকম যে হতে পারে তার আঁচ মিলে ছিল। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিন্দার ভাষা নেই”।
বাম মনস্ক অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন “দিল্লির কৃষক আন্দোলন দমিয়ে দেওয়া হলো যেভাবে, তারই ছােট সংস্করণ হলাে এদিনের বর্বরােচিত এই ঘটনা। তবে নৃশংসতা যত বাড়বে, ততই বাম আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নরেন্দ্র মােদী আর মমতা ব্যানার্জি যদি আন্দোলন দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে আগামী দিনে”। এই ঘটনা নিন্দানীয় হলেও ভোট নামক খেলার মোড় ঘোরাতেই কি নব্য পন্থা? বিজেপির বাংলার আগ্রাসন নিয়ে চিন্তিত বহু রাজনৈতিক মহল। পালাবদলের ঘোরে জনসাধারনের একাংশ বিজেপিকে ভোট দিতে প্রস্তুত।
সেখানে বাম ছাত্র যুবকে পিটিয়ে কি বামের ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর এটাই নয়া পন্থা হতে চলেছে? নাকি বামেদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েই বিজেপিতে ভোট না গিয়ে বামেদের ভাড়ারে জমা হবে ভোট? ফলত যেখানে ২১ এর ভোটের পর বিরোধী হিসাবে বাম থাকলেও অন্তত সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে রোখা যাবে। কৃষক আন্দলন দমনে কেন্দ্রীয় সরকারের যে নোংরামি দেখেছে তাতে চিন্তিত রাজনৈতিক থেকে শুরু করে বহু মহল।
কারন বাংলা হলো হিন্দু-মুসলিম-শিখ-ইসাহীর একক ঐতিহ্যময় সোনার বাংলা। কবির লেখা গানটি মনে করিয়ে দেয় “মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ”। সেই বাংলাতে সাম্প্রদায়িক দল যদি রাজ করে, ২১ এর ভোটের পর তার প্রভাব কতটা সুখকর হবে সে বিষয় চিন্তিত প্রায় সবাই।