December 11, 2024

আজ তীব্র অনৈতিকতায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্থিত “বেহালার ফুসফুস”র অস্তিত্ব সংকটে

0
Received 2355035804610615.jpeg
Advertisements

HnExpress নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা ঃ “শরাবী হবো মসজিদে বসে, নইলে এমন জায়গা বলো যেথা খোদা নাই” — মির্জা গালিভের একটা ঊর্দু শায়েরির মোটামুটি বাংলা অনুবাদ এই বোঝায় যে, দুনিয়ার সর্বত্রই খোদার বা ঈশ্বরের সিংহাসন, সেটা ধর্মস্থান হোক বা অন্য জায়গা। ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবানকে জ্ঞানীরা এক জানেন ও মানেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এত বিভেদ আসলো কোথা থেকে! এমনই কিছু অনৈতিক কাজের শিকার হয়েছে “বেহালার ফুসফুস” অর্থাৎ সিএনআই চার্চ দ্য অক্সফোর্ড মিশন (অক্সফোর্ড মিশন ট্রাস্ট অ্যাসোশিয়েসন, কোম্পানি আইনের ১৯৫৬ ধারায় নথিভুক্ত)।

আজকাল ধর্মের ব্যবসায়ীরা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে নিজের ঈমান, বিশ্বাস, ধর্মজ্ঞানবোধ সব কিছু যখন বিকিয়ে দিচ্ছে অনায়াসে, আর এসব ধর্মগুরু যখন অধর্ম শুরু করে নির্লজ্জের মতো, ঈশ্বরকে ভয় না পেয়ে তাঁকেও বেচতে শুরু করে তখন আর বোধহয় সমাজের ভালো কিছু হয় না।

আজকাল আবার সাধারণ মানুষ অপেক্ষা বিভিন্ন ধর্মগুরুগণ অধর্ম করে খবরের শিরোনামে আসার জন্য লজ্জাজনক ভাবে বেশি স্থান দখল করছেন। সুত্রের খবর অনুযায়ী বিশপ ক্যানিংও নাকি এমনই একজন মানুষ যিনি শুধু অধর্ম করেননি, বরং ঈশ্বরের সম্পত্তি, এমনকি পারলে ঈশ্বরকেও বেচে দিতে সার্বিক ব্যবস্থা করে বসে আছেন। এমনটাই দাবী করছেন অক্সফোর্ড মিশনের বহু সদস্য এবং প্রায় সমস্ত মন্ডলীর সভ্যরা।

যদিও ভারতীয় আইন অনুযায়ী ধর্মস্থান এর সম্পত্তি সেই সংশ্লিষ্ট ধর্মস্থান কর্তৃপক্ষ দেখ ভাল করতে পারেন মাত্র। তবে সেই জায়গার প্রকৃত মালিক ঈশ্বর নিজেই। তাই কোনো অবস্থাতেই ধর্মস্থানের সম্পত্তি বিক্রি করা বা বন্দক রাখার অনুমতি নেই। কিন্তু বেহালার অক্সফোর্ড মিশনের তত্ত্বাবধায়ক বিশপ ক্যানিং ১৮ বিঘা জমির মধ্যে ১১ বিঘা জমিই প্রমোটরদের হাতে তুলে দিলেন প্রায় ৩৮ কোটি টাকার বিনিময়ে।

প্রসঙ্গত, ১৯১২ ও ১৯১৪ সালে Oxford Mission কয়েক দফায় মোট ১৮ বিঘা ১ কাঠা ১২ ছটাক জমি ক্রয় করে এই মিশন গড়ে তোলা হয়, যা আজ এই এলাকার আবেগ। আর সেই Oxford Mission কে আজ NGO তে পরিণত করা হয়েছে বলে রীতিমতো সোরগোল পরে গিয়েছে খ্রীষ্টিয় সমাজে। মহামান্য বিশপ পরিতোষ ক্যানিং (যিনি মিশনেরই পিতৃছায়ায় ও মাতৃকোলে শুধু বেড়েই ওঠেননি; কর্মসৃত্র ও জীবিকা নির্বাহ খুঁজে পেয়েছেন।

যদিও প্রতিদানে সেই মাতৃসম মিশনকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করতে পিছপা হননি) ও সুবীর ঘোষ মিলে, ডাঃ সুবীর চৌধুরী ও মহেশ পাশারী‘র কোম্পানি “সরভেসা কনস্ট্রাকশন ও সম্পূর্ণা ইনফ্রা”-র সাথে ৩ বিঘা ১২ কাঠা ও ৮ বিঘা ২ কাঠা ১৪ ছটাক জমির বিনিময়ে যথাক্রমে — ৬ কোটি ও ৩২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ফ্ল্যাট করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

এবারে বাকি জমি দেওয়ার পালা আর সেজন্যই দিল্লি থেকে জমির বিশেষজ্ঞ সিং সাহেবকে এই ট্রাস্টি বোর্ডে আনা হচ্ছে বলে বিস্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। তবে মিশনারিদের এই স্বেচ্ছা ত্যাগে গড়ে তোলা এই জনহিতকর প্রয়াসকে কি ব্যক্তি স্বার্থে ধংস হতে দেওয়া উচিত? প্রশ্ন আম জনতা থেকে সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর।

যেখানে পবিত্র বাইবেলে ঈশ্বরের বাক্য বলছে, “১২. এরপর যীশু মন্দির চত্বরে ঢুকলেন; আর যাঁরা সেই মন্দির চত্বরের মধ্যে বেচাকেনা করছিল, তাদের তাড়িয়ে দিলেন। যাঁরা টাকা বদল করে দেবার জন্য টেবিল সাজিয়ে বসেছিল ও যাঁরা ডালায় করে পায়রা বিক্রি করছিল তিনি তাদের টেবিল ও ডালা উল্টে দিলেন।


১৩. যীশু তাদের বললেন, ‘শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমার গৃহ হবে প্রার্থনা গৃহ।’কিন্তু তোমরা তা দস্যুদের আস্তানায় পরিণত করেছ।’ মথি ২১:১২-১৩। বর্তমানে সেটাই দেখা যাচ্ছে ঈশ্বরের পবিত্র গৃহে, ঈশ্বরেরই দাসের মাধ্যমে যাকে পাদ্রী বাবু বা বিশপ বলে সম্মানিত করা হয়। কোথায় গেল সেই ঈশ্বরের ক্রোধাগ্নির ভয়?

আর যে মিশন এখনো এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়, সবুজ ঘেরা পরিবেশে খেলার প্রশিক্ষণ, অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানের মাথা যে এত সংঘাতিক ভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়াতে সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসী সহ বেহালাবাসীরা ক্ষিপ্ত ও মিশনের ভবিষ্যৎ বিষয়ে তাঁরা যথেষ্ট চিন্তিত। গতকাল সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল চার্চের সামনে এই নিয়ে নিরব প্রতিবাদ জানায় খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা।

Advertisements

Leave a Reply