কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে আয়কর দপ্তরের বেহাল পোর্টাল ঠিক করার দাবিতে সামিল সারা রাজ্য
HnExpress অরুণ কুমার ঃ আয়করে পোর্টালে বিপত্তি, রিটার্ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না, ক্ষোভ সারা রাজ্যে আয়কর দপ্তরের নতুন পোর্টালকে ঘিরে। আর করদাতাদের হেনস্তার এই অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভে নেমেছে রাজ্যের আয়কর অ্যাডভোকেট ফোরাম। পুরাতন পোর্টালে দিব্যি কাজ চললেও পোর্টাল বদলে দিয়েই যত সমস্যার সৃষ্টি। কর দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন সমস্যার মুখে দেশের সাথে সাথে এই রাজ্যের করদাতারাও।
ফলস্বরূপ, আয়কর দপ্তরের নতুন পোর্টালকে ঘিরে করদাতাদের এরূপ হেনস্তার অভিযোগে বিক্ষোভে সামিল রাজ্যের অ্যাডভোকেটবৃন্দ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কর বিশেষজ্ঞদের একটি সংগঠনের উত্তরবঙ্গ শাখার তরফ থেকে গত ১৭ই অগাস্ট ও ১৩ই সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার আয়কর দপ্তরের সম্মুখে ও তারই পাশাপাশি সারা রাজ্য জুড়ে এই অবস্থান বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।
এছাড়াও আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, রায়গঞ্জ, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, মালদা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, বর্ধমান, আসানসোল, কৃষ্ণনগর, সিউড়ি, মেদিনীপুর, হলদিয়া, কলকাতা ইত্যাদি সমস্ত জায়গায় একসাথে এই দাবি পেশ করা হয়েছে। এই মর্মে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মারফত কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
এই কর্মসূচি বিষয়ে আয়কর আইনজীবীদের সংগঠন “ট্যাক্স অ্যাডভোকেটস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল” এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসকে তুলসীয়ান এবং সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের অনুরোধ করে। সেই সঙ্গে সারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা সহ শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতেও আয়কর কমিশনের কাছে তাদের দাবিপত্র পেশ করা হয়েছে সংগঠনের তরফে, এ কথা জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সঞ্জয় কুমার।
এই প্রসঙ্গে শ্রীকুমার আরও জানিয়েছেন, কর সংক্রান্ত কাজ করা আইনজীবীদের দাবি, বর্তমানে আইন অনুযায়ী প্রায় সমস্ত আয়কর দাতার রিটার্ন বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইন পদ্ধতিতে জমা করতে হয়। এই অবস্থায় আয়কর দপ্তরের অনলাইন পোর্টাল সঠিকভাবে কার্যকর না থাকলে রিটার্ন দেওয়া বা অন্যান্য কর সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহা হওয়া সম্ভব নয়। আগের পোর্টাল ঠিক মতোই কাজ করছিল কিন্তু পরে পোর্টাল বদলেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সঞ্জয় কুমার এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন, বিগত দীর্ঘ বছর ধরে আয়করের একটি পোর্টাল চলছিল। যা অত্যন্ত সফলভাবে কার্যকর এবং পরীক্ষিত ছিল। গত ৭ই জুন, ২০২১ সালে হঠাৎ করে কর দপ্তরের তরফ থেকে পূর্ববর্তী পোর্টালটির পরিবর্তে দেশ জুড়ে একটি নতুন পোর্টাল চালু করা হয়। সংসদে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে এই নতুন পোর্টালের জন্য মোট ৪,২৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
কিন্তু চালু করার পর প্রথম মাসে পোর্টালটি সম্পূর্ণ ভাবে অকার্যকর ছিল এবং বর্তমানে আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে। শ্রীকুমার আরও জানিয়েছেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে দু সপ্তাহের মধ্যে পোর্টালটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ দুমাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও দেখা যাচ্ছে যে সমস্যা এখনও কোনও ভাবেই মেটেনি। ফলে সারা দেশ জুড়ে করদাতারা ভয়ঙ্কর অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে প্রায় বহুমুখী ত্রুটি এই পোর্টালটিতে রয়ে গিয়েছে।
কি ধরণের সমস্যা বলতে গিয়ে জলপাইগুড়ির ট্যাক্সেশন বার এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল এর জেলা সম্পাদক সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, বহুমুখী এক ডজনের বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সব ধরনের রিটার্ন জমা হচ্ছে না। নতুন করদাতা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফর্গেট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাচ্ছে না। রিটার্ন জমার পর বাধ্যতামূলক ভাবে যে অনলাইনে তা ভেরিফিকেশন করতে হয় সেটা কখনো হচ্ছে, কখনো হচ্ছে না।
রিটার্ন জমার পর তার ভুল রিসিপ্ট বা ITRV বের হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে। তাতে জমার তারিখ থাকছে ২০২২ সালের। দ্বিতীয়ত, জমা করা করের চালানের তথ্যের সাথে অনলাইনে দেওয়া তথ্য মিলছে না। গত বছর জমা করা বৈধ রিটার্ন এর রিসিপ্ট ডাউনলোড করলেও ‘ইনভ্যালিড’ বলে উল্লেখ করা থাকছে, যা সংশোধন করার কোন সুযোগই দেওয়া নেই। তৃতীয়ত, কোন ভ্রম হলে আইনগতভাবে তা সংশোধন করার যে সুবিধা ছিল তা এখন নেই।
এরকম আরো অনেক ধরনের সমস্যা উঠে এসেছে, সেগুলি হল —কোন বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করার যে অপশন সেটা কার্যকর নেই।
কর বিবাদ সংক্রান্ত আবেদন করার অপশন কার্যকর নেই। শুধু তাই নয়, আরো বলার মত হল, প্রদেয় করের হিসাবের ক্ষেত্রে ভুল সুদ, বিলম্বজনিত শুল্ক ধার্য করছে পোর্টালটির মাধ্যমে। সহজে ও দ্রুত কর রিটার্ন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এতদিন ধরে দেশজুড়ে যে বেসরকারি সফটওয়্যার বা ASP গুলির সাহায্য কর বিশেষজ্ঞরা নিতেন তার কোনটাই এই পোর্টালে কার্যকর নয়।
এই সমস্যাগুলি সহ অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দেশব্যাপী করদাতাদের আজ নাজেহাল অবস্থা। এমনিতেই অতিমারির কারনে তাঁরা এতদিন কর রিটার্ন জমা করতে পারেননি, এখন যে করবেন তারও উপায় নেই। যদি বা কেউ করতে সফল হন, তবে ভুল রিসিপ্ট বের হওয়ায় সেটা নিয়ে বিভ্রাটে পড়ছেন। অতিমারির আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে যারা ঋণ নিতে চাইছেন তাদের ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা না করতে পারায় বা ভুল রিটার্ন হওয়ায় তারা ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এছাড়াও রিটার্ন জমার ধার্য সময় মাত্র দেড় মাস বাকি, এই স্বল্প সময়ে পোর্টাল খারাপ থাকলে করদাতা কি করবেন? এর মধ্যে রিটার্ন জমা না হলে করদাতাকে প্রচুর টাকা বিলম্বজনিত সুদ এবং পাঁচ হাজার পর্যন্ত বিলম্ব জনিত শুল্ক দিয়ে তবে ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা করতে হবে। সেটা না পারলে পরের বছর তার থেকে দ্বিগুন হারে টিডিএস বা কর কেটে নেওয়া হবে তার আয়ের সূত্র থেকে। এর সাথে রয়েছে নানা রকমের শাস্তি বা পেনাল্টির সম্ভাবনাও।
ফলত এই সমস্ত কারণে তাঁদের দাবি দ্রুততার সাথে পোর্টালটি ঠিক করতে হবে নইলে নতুন পোর্টাল বাতিল করে পুরানো পোর্টাল পুনরায় চালু করতে হবে। পোর্টালের ত্রুটির কারনে কোন ধরনের বাড়তি বিলম্ব জনিত সুদ, শুল্ক এবং পেনাল্টি করদাতার কাছ থেকে আদায় করা চলবে না। রিটার্ন জমার শেষ তারিখ ৩১ শে মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত বাড়াতে হবে। কর দপ্তরের ত্রুটির পরিণাম সাধারণ করদাতা ভুগবেন কেন? প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ট্যাক্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল অর্থাৎ ট্যাব
এই নিয়ে তাঁরা পরপর দু’বার বিক্ষোভ প্রতিবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের দাবি পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে দ্রুত এই পোর্টাল সারানোর জন্য। এখন দেখার বিষয় আগামী দিনে এই সমস্যার সমাধান কত দ্রুত হয় কিনা!