December 9, 2024

রবিবারের বৈঠকী আড্ডা ঃ পঞ্চদশ ভাগ

0
Inshot 20190916 002621602.jpg
Advertisements

HnExpress এক ভিন্ন স্বাদের আড্ডা, নূপুর সাহা ঃ

লাভ এন্ড পিস

~~~*~~~*~~~*~~~

পূজোর আর মাত্র হাতে গোনা কটা দিন বাকি, অগ্নির এখন নিঃশ্বাস ফেলারই জো নেই। তাল পুকুর সার্বজনীনে প্রতি বছরই নতুনত্বের ছোঁয়া থাকে, তা অবশ্য অগ্নির মস্তিষ্ক প্রসূত হয় বলেই। এর সাথে ওদের নব অগ্ৰণী সংঘের সদস্যরাও থাকে বলেই এতো বড় কর্ম কান্ড সফল হয়। আর এবার পূজোয় ওদের থিম ” লাভ এন্ড পিস” অর্থাৎ “ভালোবাসা ও শান্তি”।

চাকরি চাকরি করে যখন যুব সমাজের ঘুম নেই, সমাজের একটা অংশের যুবকরা যখন লটারি- জুয়া খেলে বেড়ায়ে, নেশা করে সময় কাটাতে মগ্ন, ঠিক তখন ওদের সংগঠনের ছেলে মেয়েদের ব্যস্ততার অন্ত নেই। পয়সা হয়তো ওদের হাতে সব মাসে সমান আসে না, তা যাই হোক ওরা তো আর পয়সার নেশায় কেউ এ কাজ করে না। করে ভালোবেসে,তাই ওদের মনে কোন খেদ নেই, লোভ নেই।

যে কারণে সারা বছরই ওদের কম বেশি কাজ থাকে, কারন ওরা জুতা সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবেতেই ওস্তাদ। বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশন, পৈতে, পূজা সবকিছুতেই ওদের ডাক পড়ে। আর পড়বে নাই বা কেন! ওদের দলে কে না নেই সেটাই ভাবার, সিঙ্গার, গিটারিস্ট থেকে শুরু করে প্লেআর্টিষ্ট সব সব। যখন যেমন প্রয়োজন তখন তেমন ভাবেই অনুষ্ঠান সাজায় ওরা। কলেজ জীবন থেকেই ওদের এই নেশা আজ পেশায় পরিনত হয়েছে।

অবশ্য ওদের থিম ম্যানেজমেন্টার হিসেবে অগ্নির স্থান সবার ওপরেই। দূর্গা পূজোর প্রস্তুতি নিয়ে ওদের এখন ফুরসৎ নেই, চারিদিকে অশান্ত পরিবেশে মানুষকে, সমাজকে এক বার্তা দিতেই অগ্নি এবারের পূজায় তার এই ভাবনা ও পরিকল্পনাকে এক অনন্যরূপ দিয়েছে। আর
নাটকের রিয়ার্সালের জন্য অগ্নির বাড়িটাকেই সবার খুব পছন্দ।

একতলার হলরুমটা ফাঁকা পড়ে থাকে তাই বিকেলে ওরা সব জড়ো হয়েছে। তৃষা, দিশা, আবির, সাগ্নিক সবাই এসেছে এবার ভোম্বল এলেই শুরু হবে আসল কাজ। অগ্নির ঠাকুমা আশির কাছে বয়স, বাতের ব্যথায় কাবু, তবু ছেলে মেয়েদের আওয়াজ পেলে লাঠি ভর দিয়ে হেঁটে ওদের কাছে এসে বসে। বয়স হলেও ঠাকুমার চোখ কান এখনো সজাগ। ওরাও ঠাকুমাকে নিয়ে বেশ মজা করে কেউ বলে, “ঠাকুমা আমায় বিয়ে করবে”, কেউ আবার গাল টিপে বলে পুরো ‘আলু সেদ্ধ’, ঘি, মাখন কতো খেয়েছো, যে এতো তুলতুলে! ঠাকুমার এসব খুব ভালোই লাগে, মেয়েদের বলেন, ‘নাত জামাই কবে দেখবো রে’?

ওদিকে ভোম্বল সিঙারা নিয়ে আসলে সবাই হো হো করে ওঠে, এর মাঝেই বিন্দা মাসিও চা দিয়ে গেছে, খেয়েদেয়ে ওরা সব এবার নাটকে মন দেয়। নাটকের ডায়ালগে “লাভ এন্ড পিস” কথাটুকু বার বার শুনতে পেয়ে ঠাকুমা বলে ওঠেন কিসের জন্য কত লাভ হবে তোদের? আর পিস শুনে বলেন, ‘কিসের পিস রে, মাছের না জামার?’ ঠাকুমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। তখন তৃষা ঠাম্মাকে বুঝিয়ে বলে লাভ মানে ভালোবাসা আর ইংরেজিতে শান্তিকে পিস বলে।

তারপর হটাৎই জিজ্ঞেস করে আচ্ছা, ঠাম্মা ঠাকুরদা তোমায় ভালোবাসতো? বলো না কেমন আর কতোটা ভালোবাসতো? ঠাম্মা বুঝতে পেরে বলে ,’ এবার বুঝেছি, শোন্ তবে ‘সবাই ঠাকুমার পায়ের কাছে বসে পড়লো। ঠাম্মা শুরু করলো, “তখন আমার বয়স নয় দশ বছর হবে, কিছু কিছু মনে আছে, পূজার সময় বাবা আমাদের জন্য যেমন জামা কাপড় আনতেন ঠিক তেমনি বাড়ির নিবারণ কাকা, নায়েব মশাই রান্নার ঠাকুরদের ছেলে মেয়েদের জন্যও একই রকম ছিট কাপড়ের জামা বানিয়ে আনতেন।

আমরা একসাথে সবাই মিলে ভোগ খেতে বসতাম, একই সাথে খেলতাম ঠাকুর দালানে। মা কখনোই ওদের সাথে আমাদের ভেদাভেদ করেননি। পূজার নাড়ু, ফল, মিষ্টিটা বরঞ্চ ওদের পাতেই বেশি পড়তো, আর এই নিয়ে কিছু বললে মা বলতো তোমরা তো পরে খেতেই পারবে। ছোটবেলা থেকেই মা এর এমন অন্নপূর্ণার মতো রূপ দেখে বড় হয়েছি। পাড়ার কেউ কোন বিপদে পড়লেই মায়ের কাছেই আগে আসতো, মা ও তার সাধ্যমতো ব্যবস্থা করে দিতেন। এ

কবার গয়নার অভাবে পাড়ার আন্না দিদির বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে দেখে মা তার গায়ের গয়না খুলে দিয়ে বললেন, তার গয়না যদি কোন মেয়ের ঘর গড়তে কাজে লাগে তবে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। এমন সকলের প্রতি ভালোবাসা দেখেই আমরা বড় হয়েছি।
সাত গায়ের লোক মন্দির, মসজিদে গিয়ে আমার বাবা মায়ের নামে পূজা দিতো দেখেছি। তারা বলতো, “বড় মা বড় ঠাকুর বেঁচে থাকলে আমরা ও বাঁচবো”।

ভালোবাসা আর শান্তি কাকে বলে আমরা তো পরিবার থেকেই শিখেছি রে, আরে ঘরে শান্তি, ভালোবাসা থাকলেই তো তবে জগতে তার বিতরণ করা যায়। আসলে কি বলতো আমাদের বেশি চাহিদা ছিল না, অল্পতেই আমরা খুশি হতাম। আর তাই শান্তি, ভালোবাসা ও ছিল সকলের মধ্যেই। ‌ ওরা সকলে একসাথে বলে উঠল হ্যা ঠাকুমা তুমি একদম ঠিক কথা বলেছো‌। গুরুজনদের ভক্তি শ্রদ্ধা করতে পারলেই তো ছোটরা ভালোও বাসতে পারবে তাই না‌!

হ্যা তাহলে আমরা এবারের পূজা তোমাদের মতো ঠাম্মা দাদুদের উৎস্বর্গ করবো। তোমাদের কথা ভেবেই আমাদের জলসা হবে, আর তোমাদেরকে পূজা পরিক্রমা করানোর ব্যবস্থা করবো, সাথে তোমাদের কিছু পছন্দের খাবার রাখার চেষ্টা করবো। আর থাকবে ছোটদের সাথে তোমাদের কিছু মজার খেলা। এর থেকে ছোটরাও যাতে মজার মাধ্যমে ভালো কিছু যেন শিখতে পারে, কি বল? অগ্নি বললো। এর জন্য না হয়ে আমরা আরও একটু বেশি স্পনসর তুলব, কি বল? সবাই তখন সাধু সাধু বলে উঠল।।

Advertisements

Leave a Reply