ভারত বন্ধের শুরুতেই আটক করা হয় সুজনকে, চলে বাস ভাঙচুর অবরোধ
HnExpress ৮ই জানুয়ারী, জয় গুহ, কলকাতা : সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ২৪ ঘঃ বন্ধ সমর্থকরা অবরোধ করেন যাদবপুর স্টেশন। আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ফলে ভারত বনধের শুরুতেই আটক করা হয় সুজন চক্রবর্তী সহ একাধিক বাম নেতাকে। আগরপাড়া ও মধ্যমগ্রামে অবরোধের কারণে শিয়ালদহ থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ট্রেন ছাড়েনি।
এদিন সকালে হৃদয়পুর স্টেশনে রেলের ট্র্যাকের ওপরে একটি সন্দেহজনক বস্তু দেখতে পান চালক। তা দেখেই ট্রেন থামিয়ে দেন তিনি। পরে দেখা যায় লাইনে পড়ে রয়েছে ৩টি তাজা বোমা। দুটি বোমা সরিয়ে নেওয়া হলেও তৃতীয়টিকে সরানো যায়নি। অন্যদিকে দমদম মেট্রো স্টেশনে ঢুকে অবরোধ করার চেষ্টা করেন বন্ধ সমর্থকরা।
বাম কংগ্রেসের ডাকা বনধের জেরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বেশ কিছু জায়গা। বিভিন্ন এলাকাতে এই বনধ ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনার খবর সামনে এসেছে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে সকাল থেকে বনধের সমর্থনে পথে নামেন বাম নেতা-কর্মীরা৷ ওদিকে কোচবিহারের বাসে ভাঙচুরের ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জগামী একটি বাসে আক্রমণ করেন ধর্মঘটীরা।
চলন্ত বাসে পাথর ছোঁড়ার ফলে আতঙ্কে নেমে গিয়েছেন বাসের যাত্রীরা। তবে জানা গিয়েছে এই ঘটনায় যুক্ত ২ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে চাঁপাডালি মোড়ে হয় পথ অবরোধ৷ পথ অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসা হয় ধর্মঘটীদের৷ পরে হেলাবটতলায় কৌটো বোমা উদ্ধার করে পুলিশ৷ তড়িঘড়ি তা নিস্ক্রিয় করা হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের একাধারে বিরুদ্ধে একসঙ্গে এদিন পথে নেমেছেন বাম এবং কংগ্রেস। আর সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত ঘটনার চিত্র সামনে এসেছে। বনধের কারণে বেশ কয়েক জায়গাতে ব্যহত হয়েছে রেল পরিষেবা। অশোকনগরেও রেল অবরোধ শুরু করেন ধর্মঘটীরা৷
সকালের দিকে ট্রেন চললেও অবরোধের জেরে ফের বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল৷ ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম, আগরপাড়াতেও৷ এছাড়াও শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডায়মন্ড হারবার, চম্পাহাটিতেও হয়েছে অবরোধ। ওভারহেডের তারে কলাপাতা ফেলে শুরু অবরোধ৷ এছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর, হৃদয়পুরে রেল অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা৷
আর জানা গিয়েছে যাদবপুর ৮ বি বাস স্ট্যান্ডের সামনে থেকে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করার পর থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ ওই জায়গার দখল নিয়েছিল। বাস ও পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুরের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যাদবপুর এলাকার পরিস্থিতি। এদিন আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ জানাচ্ছিলেন ধর্মঘটীরা।
জানা গিয়েছে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। তার পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিলতর। মারমুখী ধর্মঘটীদের সরানোর জন্য লাঠি চার্জ করা হয়েছে বলেও বিশেষ সুত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়া জানা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এদিন। সাথে জানা গিয়েছে বেশ কয়েক জায়গাতে জোর করে বন্ধ করা হয়েছে দোকানপাট।
বাম সহ কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বুধবারের সাধারণ ধর্মঘট বানচাল করে দিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেভাবে ধর্মঘটের প্রভাব নেই মধ্য কলকাতায়। যদিও জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেছিল ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের কর্মস্থলে যাওয়ার উৎসাহ দেখে হতাশ হয়েছে ধর্মঘট সমর্থনকারীরাও। আকাশছোয়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নাগরিকপঞ্জী, নাগরিকত্ব আইন সহ একাধিক ইস্যুতে বাম ও বিরোধীদের ডাকা ভারত বন্ধে দফায় দফায় অবরোধ বিক্ষোভ হয়েছে গোটা রাজ্যে।
রেললাইনে বসে, ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে বহু জায়গায় থামিয়ে দেওয়া হয় ট্রেন। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। সাতসকালেই বেলঘরিয়ায় রেললাইনে দাঁডিয়ে পড়েন বন্ধ সমর্থকরা। অবরোধ করা হয় ইছাপুর, কাঁচড়াপাড়াতেও। চুঁচুড়ায় লাইনে কলাপাতা ফেলে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, সকালে কলকাতার চিংড়িঘাটা, ভিআইপি বাজারে অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকরা। তাদের সরিয়েও দেয় পুলিশ।
অন্যদিকে হাওড়া দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চেঙ্গাইল ও ভোগপুর স্টেশনেও অবরোধ হয়। প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। আর খড়গপুর–টাটানগর শাখার সরডিহা স্টেশনেও অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকরা। আটকে যায় স্টিল এক্সপ্রেস। অবরোধ করা হয় তমলুক স্টেশনও। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সমস্ত অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
উত্তরবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি বাস ভাঙচুর করা হয়। বাসের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন জায়গায় জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবুও সাধারণ মানুষকে দমানো যায়নি। সরকারি অফিসে হাজিরা স্বাভাবিক। বেসরকারী ক্ষেত্রেও স্বতস্ফূর্ততার সঙ্গে মানুষ কাজে যোগ দিয়েছেন।