আকাশে উড়তে চান আত্ম প্রত্যয়ী পৌলমী—
HnExpress ৪ঠা জুলাই, অশোক সেনগুপ্ত, কলকাতা ঃ ডানাখানা থাকলেই হয়ত খোলা আকাশেই বেড়িয়ে পড়তেন। পাখির চোখের মত একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন লক্ষ্যভেদে। আকাশে উড়তে চান আত্মপ্রত্যয়ী পৌলমী। যদিও এখন উড়ছেন বৈমানিক হিসাবেই। কৃতিত্বের সম্মান হিসাবে পেলেন ‘স্ত্রীশক্তি’ শিরোপা। নির্দিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শীতার জন্য সম্প্রতি এই স্বীকৃতি দিয়েছে ’ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড এডুকেশনিস্ট ফ্র্যাটারনিটি’।
তাঁর সাফল্য ও উত্তরণের ধারা বোঝাতে গিয়ে এই প্রতিবেদককে পৌলমী মুখার্জি জানালেন, আধুনিক সমাজে আজকের প্রযুক্তিতে নারীদের আর দুর্বল বলে ভাবা উচিত নয়। বরং সমস্ত রকমের নারীত্বকে সম্মান করা উচিত। শৈশব থেকেই, আমি বিশ্বাস করতাম ক্যারিয়ারের অগ্রগতির বাধাদানকারী সমস্ত প্রতিকূলতাকে নিজের মত করে মানিয়ে নিতে পারব। বিশ্বাসের প্রতি উচ্চতর লক্ষ্য রাখি।
আমার স্বপ্ন এবং সিদ্ধান্তের শেষ রেখা দেখতে শৈলের মতো অটুট ছিলাম। আমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছিলাম। ‘না’ কথাটা শুনতে আমি কখনও আগ্রহী ছিলাম না। এই প্রত্যয়ই আজ আমাকে এগিয়ে যাওয়ার ইন্ধন জুগিয়েছে।” সেন্ট ফ্রান্সিস হায়দরাবাদ থেকে বায়োটেকের স্নাতক হয়ে ২০০৭-এ কেবিন ক্রু হিসাবে এয়ার ইন্ডিয়াতে যোগ দেন পৌলমী। বুঝতে পারেন যে আকাশে ওড়ার কাজটাই সর্বদা করতে চান তিনি।
কেবিনে ওঠার বা ককপিটে বসার সময় আগ্রহ বিকাশিত হত। সেই আগ্রহ হয়ে ওঠে তাঁর স্বপ্ন, যেন দিবারাত্রির কাব্য। এরপর তিনি ক্যাপ্টেন আদর্শকুমারের (কমান্ডার-এআইআর ইন্ডিয়া) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরেও নিজের লক্ষে স্থির ছিলেন তিনি। তারপরে ২০১৫ সালে ছেলে হয়। পৌলমীর কথায়, “লোকেরা জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গ্রাউন্ড জব করার জন্য রাজি করায়। তবে এটির মানে আকাশ থেকে নামা আমার কখনও লক্ষ্য ছিলনা।
স্বামীকে বলেছিলাম যে আমি কেবল উড়তে চাই। তিনি আমার সেই স্বপ্নকে দৃঢ় করার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমার যাত্রা শুরু হয়। আমি আমার সমস্ত কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের (সিপিএল) পরীক্ষা প্রায় নয় মাসের কোলের বাচ্চাকে নিয়েই ক্লিয়ার করি। আমি সিএএ ফ্লাইং ক্লাবে আমার ফ্লাইট ট্রেনিং করতে গিয়েছিলাম, মধ্যপ্রদেশের সাগর-এ। ভোপাল থেকে প্রায় পাঁচ ঘন্টার পথ।
এর নাম অনেক লোক ঠিক করে শোনেননি। আসল লড়াই শুরু হয় এরপর থেকে। এক বছরের অভয়নকে নিয়ে সাগর-এর মত এক অচেনা জায়গায় ২০০ ঘণ্টা ফ্লাইং কমপ্লিট করার লক্ষ্যে। কিন্তু শেষমেশ এ লড়াই করে আমার সিপিএল এবং আমার রেটিংও সম্পন্ন করি।” লাইসেন্স পাওয়ার পরে পৌলমী গো এয়ার এবং ইন্ডিগো-তে ডাক পান। এখন কলকাতা বেসে গো এয়ার-এর ফার্স্ট অফিসার হিসাবে বিমান চালাচ্ছেন।
স্বামী থাকেন দিল্লিতে। ঘর-বাইর মিলে তাই এক কথায় সংগ্রাম। নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ পরিবারের কাছে। ‘উওম্যান ইন ইউনিফর্ম লিড বাই এক্সামপেলস’ শিরোপাও পেয়েছেন পৌলমী। প্রশ্ন, বর্তমান প্রজন্মকে কোনও বার্তা? পৌলমীর মতে, “আপনার সংকল্প যত বেশি হবে, আপনি তত উঁচুতে উঠতে পারেন। নিজেই যদি আপনার জীবনের নায়িকা হন তবে কখনো হারবেন না। বাস্তবে, নিজের জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও, আমি বুঝতে পেরেছি এটাই সরল সত্য।”