রাজ্য সরকারের তত্বাবধানেই কমতে চলেছে রেশনের বরাদ্দ খাদ্যদ্রব্য, কানাঘুষোয় অভিযোগ এর সুর বিরোধী মহলে
HnExpress ১৩ই অগাস্ট, ঝুম্পা দেবনাথ, কলকাতা ঃ রাজ্য সরকারের তত্বাবধানেই কমতে চলেছে রেশনের বরাদ্দ খাদ্যদ্রব্য সামগ্রী, কানাঘুষোয় অভিযোগ এর সুর বিরোধী মহলে। করোনার অভিশপ্ত আকাশে লকডাউনের জেরে প্রায় বেশিরভাগ মানুষের কাছে অন্নসংস্থানের শেষ ভরসা ছিল এই রেশনের বরাদ্দ সামান্য খাদ্যদ্রব্যজ। বস্তুতঃ করোনা ও আমফানের ঘনঘটায় পরিযায়ী শ্রমিক সহ বাংলার প্রায় বেশিরভাগ মানুষই রোজগার হারিয়ে অনাহারের দিনযাপনের হাত থেকে মুক্তি হিসাবে বেচে নিয়ে ছিলেন রেশনের খাদ্য সামগ্রীকেই।
আর এই রোজগার হারানো অসহায় মানুষের কথা ভেবেই করোনার আবহে ৩০শে জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এই সকল পরিযায়ী শ্রমিক সহ ভারতের রোজগার হারানো অসহায় মানুষের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশনে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, সামনেই দিপাবলী, ছটপুজো সহ অনেক পুজো পার্বণ আছে। ফলে পুজোর সময় উৎসবে মাতোয়ারা মানুষের খরচের বহর বেড়ে যায়।
এই পরিস্থিতিতেই তিনি সমস্ত ভারতবাসীকে জানিয়ে ছিলেন যে, প্রায় বিনামূল্যে রেশনের মাধ্যমে চাল ও ডাল দেওয়া হবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে দিনই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বাংলার সব মানুষ কেন্দ্রের এই সুবিধা পান না। তিনি আরও জানিয়ে ছিলেন, অনেকেই আটার রুটি খেতে ভালবাসেন তাই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার মানুষ পরের বছর জুন মাস পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর বিনামূল্যে রেশনে চাল ও গম পাবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে রেশন দান প্রতিযোগিতায় নামা রাজ্য সরকার ‘ক্ষমতায় এলে বাংলায় শিল্প গড়ে দেখাব’ এমনি প্রতিশ্রুতিকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল সরকার শুধু রেশন দানের মতো প্রতিযোগিতাকেই অস্ত্র করে নয়, প্রতিশ্রুতির মোড়কে ঢেকে ২১ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী পরবর্তী ভোটে ক্ষমতায় আসার বীজ রোপন করেছিলেন। তিনি ওই দিন একুশের বার্তায় বলেছিলেন, বাংলার মানুষ এক বছর বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছে, এমনটাই তীর্যকের তীর বিঁধচ্ছেন বিরোধী মহল।
তাদের বক্তব্য এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, আবার ক্ষমতায় এলে সারা জীবন বিনামূল্যে রেশন পাবেন সমস্ত মানুষ। কিন্তু রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো বাংলার মানুষ বিনামূল্যে রেশন পেলেও, কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে আগস্ট মাস থেকে রেশনের সেই বরাদ্দ খাদ্যবস্তু কমাবে রাজ্য সরকার। এক রেশন ডিলার জানান, আগের মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে আরকেএসওয়াই ওয়ান কার্ডে ৫ কেজি করে চাল এবং বিনামূল্যে আরকেএসওয়াই টু-কার্ডেও ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হত।
কিন্তু এই আগস্ট মাস থেকে বিনামূল্যে আরকেএসওয়াই ওয়ান কার্ডে ২ কিলো চাল ও ৩ কিলো গম এবং আরকেএসওয়াই টু-কার্ডে ১ কিলো চাল এবং ১ কিলো করে গম পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, এমনটাই দাবী রেশন দোকানের ডিলার এর। মালদা, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলায় আরকেএসওয়াই টু- কার্ডের গ্ৰাহক তথা দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিও সহ সকলেরই রেশনের বরাদ্দ কমানো নিয়ে সমস্যা পরেছেন বলেই অভিযোগ উঠছে।
আরকেএসওয়াই টু কার্ডের এক রেশন গ্ৰাহক স্বপন দাস জানান, তিনি আগে ৫ কেজি করে চাল পেতেন, এখন এ মাস থেকে ১ কিলো চাল পাচ্ছেন। এবং এই পরিস্থিতিতে তিনি কম চালে কিভাবে সংসার চালাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আবার অন্যদিকে খোদ কলকাতার বুকে মানিকতলার ফেয়ার প্রাইস সোপ নামক এক রেশন দোকানের ডিলারের বিরুদ্ধে এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জয় পাল জানান, তার বাবা অসুস্থ ছিলেন, ডাইলিসিস চলছে তাঁর, এই পরিস্থিতিতে সপ্তাহে দু-দিন করে এসেও ফিরে যাচ্ছেন কিন্তু রেশন দিচ্ছেন না ওই ডিলার।
একে এই করোনা পরিস্থিতিতে বাজারের দর অগ্নিমূল্য, তাতে আবার দোসর হল রেশনের কম বরাদ্দ খাদ্যদ্রব্য। এমতাবস্থায় কেন রেশনে বরাদ্দ কমালো রাজ্য সরকার? তাহলে কি বাংলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শস্য নেই? এমনি প্রশ্ন তুলে সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন বিরোধী মহল।
বাম পরিষসদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, এই সরকারের কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই, রেশন বিনামূল্যে দেওয়ার নাম করে বরাদ্দ কম দিচ্ছেন। এরই পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, শিল্প গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন এই সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন শিল্প তো গড়েই উঠল না, উঠলে মুখ্যমন্ত্রী চপ ভাজার দোকান ও সাইকেল সারাইয়ের দোকান খুলতে বলতেন না। স্পষ্ট কটাক্ষের সুর বামনেতা সুজন চক্রবর্তীর গলায়।
আবার অপর দিকে কথা উঠেছে যেখানে রাজ্য সরকার দলীয় মিটিংয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা খরচ করেন, সেখানে রেশনের জন্য বরাদ্দ চাল কমাছেন কেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তত্ত্বাবধানে দেশের সমস্ত কৃষক আর্থিক সুবিধা পাবে, শুধুমাত্র এই সরকারের জন্য বাংলার কৃষকেরা এই সুবিধা পাবেন না, কেন পাবেন না বাংলার কৃষকেরা এই সুযোগ? তাহলে কি মানুষের জীবন নিয়ে এই রাজ্য সরকারের কোন ভাবনা নেই? শুধু কি সব কিছুতেই রাজনীতির রঙ্গ দেখাই মূল উদ্দেশ্য! মানুষের জন্য কি কোন ভাবনাই নেই মাননীয়ার? বিরোধিতার ভঙ্গিতে কটাক্ষের তীক্ষ্ণ সুরে এমনই সব প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।