December 13, 2024

৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনেই নিভে গেলো ২২ বছরের মনিকার জীবন প্রদীপ

0
Img 20200128 163024.jpg
Advertisements

HnExpress ২৮শে জানুয়ারী, ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত , মধ্যমগ্রাম ঃ গত ২৬শে জানুয়ারীর দিন মধ্যমগ্রাম থানার অন্তর্গত এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে মহাসমারোহে পালিত হলো ৭১তম প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র দিবস। আবার সেদিনই ঠিক তার উল্টো দিকে মধ্যমগ্রাম থানার অন্তর্গত শ্রীনগর ৩নং গেট এলাকার শিবতলা দূর্গা মন্ডপ অঞ্চলে একটি ২২ বছরের মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিল। যে কিনা সবে কৈশোর ছেড়ে যৌবনে পা দিয়েছিল, হটাৎই নিভে গেলো তাঁর জীবন প্রদীপ। মৃতার নাম মনিকা পাল (২২)।

নিজস্ব চিত্র

কেন তাঁর এই অল্প বয়সে এমন করুণ পরিণতি? এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী জানা গেল যে, তাঁর বাবা রবীন পাল (৪৭) প্রায়ইসই নাকি কারণে অকারণে মেয়ে মনিকা এবং তৎসহ তার দাদা শুভ পাল (গেঞ্জি কারখানায় কর্মরত) ও মা কমলা পাল যে কিনা এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন তাদের প্রত্যেকই নিদারুণ নির্যাতন দিতেন ও মারধোর করতেন। ২৬ শে জানুয়ারীর দিনও মেয়ে মনিকাকে বেধড়ক মারধোর করেন বাবা রবীন পাল।

শবযানে শায়িত মনিকা পাল

তার কারণ জিজ্ঞেস করায় প্রতিবেশিরা জানান যে, মেয়েটি সেদিন ঘরধোর মোছামুছি করছিল। ঠিক সেই সময় তার বাবা জুতো পরেই মোছা অংশের উপর দিয়ে জুতো পায়ে হেটে ঘরে ঢোকে। আর সেই নিয়ে বাবাকে ঘরে ঢুকতে আপত্তি জানায় মেয়ে, ফলে যা হওয়ার তাই হয়। বাবা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে হাতের কাছে থাকা বাঁশ দিয়ে মেয়েটির মাথায় সজোরে আঘাত করে।

মৃতার বাবা রবীন পাল

ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে মেয়েটি, এবং বাবার এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তার পাশের বাড়ির লোকজনদেরকে জানায়। ফল স্বরূপ তার বাবা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটিকে বেধড়ক মারধোর করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। এদিকে সেদিন তার মা নাগের বাজারে নিজের বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, মৃতার পরিবার বহু দিন ধরেই এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। বাবা মাঝেমধ্যে টুকটাক রঙের কাজ করত। তবে সেরকম কোনো আয় ছিল না, অভাবের সংসার। তার মধ্যে মায়ের শরীরে বাসা বেঁধেছে এক দুরারোগ্য ব্যাধি।

মৃতা মনিকা পাল (২২)

তাই মেয়েটি নিজের পড়াশোনা ও হাত খরচের জন্য কয়েকটি টিউশন পড়িয়ে রোজগারের পথ বেছে নিয়ে ছিল। মনিকা দমদম মোতিঝিল রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে কমার্স নিয়ে পাস কোর্সে পড়াশোনা করছিল, এটি তাঁর দ্বিতীয় বর্ষ চলছিল। সামনেই ছিল ফাইনাল ইয়ার মানে তাঁর এতদিনের কষ্টের স্বপ্ন পূরণের পালা। কিন্তু ভাগ্য সাথ দিল না সেই আত্মসম্মানবোধ অভিমানী মনিকাকে, ঠিক তার আগেই তাঁর এতদিনের লড়াই করে আসা অমূল্য জীবন প্রদীপ নিমেষের মধ্যে অতল অন্ধকারে মিশে গেল।

অসুস্থ অবস্থায় মৃতার মা কমলা পাল

এলাকাবাসীদের থেকে আরও জানা গেলো যে, সেদিন বাবা বেড়িয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই সে মাকে ফোন করে বাড়ি ফেরার জন্য ডেকেছিল, আর বলেছিল “বাবা আমাকে আজ রাস্তায় বহু মানুষের সামনে বিনা কারণে প্রচুর মারধোর করেছে। তুমি তাড়াতাড়ি আসো, নইলে আমি এবার আত্মহত্যা করব”। সে কথা শোনার পরেও নাকি বাবা তার মেয়েকে বলছিল যা পারিস কর গে, তবে মরতে তুই পারবি না। পারলে মরে দেখাস। ঠিক তারপরেই মেয়েটি ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের ওড়না দিয়ে চালের রডে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

নিজস্ব চিত্র

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানালেন, তারা তৎক্ষনাৎ তাঁকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে প্রথমেই দরজা ও পরে টিনের চাল খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু টিন খুলতে না পেরে কোনো রকমে দরজা ভেঙে মেয়েটিকে বের করতে বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে যায়। আর বের করেই তারা তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মনিকা। সেদিনই মধ্যমগ্রাম থানা গ্রেফতার করে মৃতার বাবাকে, কিন্তু তারপরের দিনই সে ছাড়াও পেয়ে যায়। এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি পিনাকী রায়কে জিগ্যেস করায় তিনি বললেন, প্রথমত মৃতার বাবার বিরুদ্ধে কোনো রকম কেস বা এফআইআর করেনি তাঁর পরিবার বা এলাকার প্রতক্ষ্যদর্শীরা। তাই আইন অনুযায়ী বিনা অভিযোগে কাউকে থানায় গ্রেফতার করে আটকে রাখা যায় না।

মনিকা পাল, নিজস্ব চিত্র

তিনি আরও বললেন যে, দ্বিতীয়ত বাবা মা সন্তানকে বকতে বা মারতেই পারে, কিন্তু তাই বলে আত্মহত্যা করতে হবে কেন? সব থেকে বড় কথা একটা শিক্ষিত মেয়ের কাছ থেকে এমন আচরণ আশাই করা যায় না। তবে তিনি এটাও বললেন যে, মেয়েটির বাবা মেয়েটির সাথে যেটা করেছে আমি সেটাকেও সমর্থন করছি না। কিন্তু অন্যদিকে সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান বলছে এই ধরনের কাজ শিক্ষিত-অশিক্ষিত’র প্রভাবে হয় না, মূলত এর জন্য দায়ী অসামাজিক আচরণ ও অপমানজনক ব্যবহারের ফলে অবসাদজনিত মানসিক চাপ। আর দিনের পর দিন সেই মানসিক চাপ আর সহ্য করতে না পারলেই যেকোনো মানুষ নিরুপায় হয়ে শেষমেশ বাধ্য হয় আত্মহননের পথ বেছে নিতে।

Advertisements

Leave a Reply