খুন না আত্মহত্যা নাকি নিছকই দূর্ঘটনা? কলকাতা শহরের বুকে ঘটছে একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যু
HnExpress জয় গুহ, কলকাতা ঃ কিছু দিন ধরেই একের পর এক অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে শহরে, এবার ঘটনাটি ঘটেছে টালিগঞ্জে। গত শুক্রবার সকালে টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি টাওয়ার আবাসনের আটতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ৫৪ বছর বয়সের প্রমোদ জালানের। নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ওই দিন সকাল সাতটা নাগাদ পড়ে যান তিনি। সেই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী এবং অন্যান্য সদস্যরা ছুটে আসেন ভারী কিছু পড়ার শব্দ শুনে।
আসার পরে তারাই প্রথম রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন প্রমোদ জালানকে। যদিও সুত্রের খবর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। খবর পেয়ে হরিদেবপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন এবং দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান। তবে এই রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের দানা বাঁধতে শুরু করেছে, ঘটনাটি আত্মহত্যার কিনা তার সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাচ্ছে না পুলিশ। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না কিছুই।
সূত্রের খবর, স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে বহুদিন ধরেই ওই আবাসনে থাকতেন প্রমদ জালান, বছরখানেক আগে এক গাড়ির দুর্ঘটনায় প্যারালাইসিস হয়ে যান তার স্ত্রী। তারপর থেকেই নাকি তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। এই মৃত্যুর পিছনে আর অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা সেটা নিয়েও রয়েছে রহস্যের বেড়াজাল।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পা পিছলেও পড়ে যেতে পারেন ঐ ব্যক্তি, তবে সত্যতা যাচাই এর জন্য সিসিটিভি ফুটেজের খোঁজ করা হচ্ছে ওই আবাসনের।
যদিও ওই চার নম্বর টাওয়ারের সিসিটিভি ক্যামেরা দু-বছর ধরে খারাপ বলেই পুলিশকে জানিয়েছে আবাসন কর্তৃপক্ষ। ওই দিন ওই ব্যাক্তির সঙ্গে আর কেউ ছিলেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, থানায় এক এক করে পরিবারের লোকজনকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। পরিকল্পিত খুন, কিংবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা, নাকি নিছকই দুর্ঘটনা? আর এতসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ প্রশাসন।
যে কোনো রকমের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন।
আবার অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গরে এক প্রৌঢ়ার রহস্য মৃত্যু ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে, ঘর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত মৃত দেহ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নেতাজি নগরের বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনার সঠিক কিনারা এখনো হয়নি। আর এরই মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানের ভেতর দক্ষিণ কলকাতায় দু-দুটো রহস্য মৃত্যুকে ঘিরে এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য এর সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মায়া দত্ত নামে এক প্রৌঢ়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ তার বিজয়গরের নিজস্ব বাসভবন থেকে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেছে ওই বাড়িতে স্বামীর সঙ্গেই থাকতেন মায়া দত্ত, আর ব্যাঙ্গালুরুতে থাকতো তাদের একমাত্র ছেলে। মায়া দেবীর স্বামীর বক্তব্য যে তিনি ওই ঘটনার সময় বাজারে গেছিলেন, ঐদিন সন্ধ্যে সাতটার সময় তিনি বাজারেই ছিলেন। বাজার থেকেই আধঘন্টা পর ফিরে এসে তিনি দেখেন ঘরের দরজা-জানালা ভেতর থেকে বন্ধ, দরজা খুলে যায় ঠেলা দিতেই।
ভিতরে ঢুকেই দেখতে পান সিলিং দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে মায়াদেবীর ঝুলন্ত দেহ, তখনই তিনি খবর দেন পুলিশে। প্রৌঢ়ার মৃত্যুকে ঘিরে একাধিক রহস্যের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই, জানা গেছে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসুস্থতার কারণে বহুদিন ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে তা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে আধঘণ্টার মধ্যে সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন, সেখানেই সন্দেহের দানা বাঁধছে। এদিকে মৃতদেহের পাশ থেকে পুলিশ কোনো সুইসাইড নোটও উদ্ধার করতে পারিনি, সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধোঁয়াশা।
যদিও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পাওয়া যায়, বেশ কিছুদিন ধরেই স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী মায়াদেবীর খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না। তাই সন্দেহের তালিকায় মৃতার স্বামীকেও বাদ দেয়নি পুলিশ। আর তাই এই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতার স্বামী ও ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ, এখন আপাতত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মৃতার স্বামীকে প্রৌঢ়ার পরলৌকিক ক্রিয়া কাজ শেষ করার জন্য।
তবে আবার হেফাজতে নিয়ে মৃতার স্বামী ও ছেলেকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে বলে পুলিশ মনে করছেন, সেদিন ঠিক কি কারণে মারা গেলেন তিনি তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে বা মৃত্যুর পিছনে কার হাতে আছে সেটাও জানা সম্ভব হবে।