নিম্নচাপের ভ্রুকুটিতে জলমগ্ন মহানগরী, ‘একাধিক জেলায় প্রবল বর্ষণের সর্তকতা’
HnExpress অরুণ কুমার, ওয়েদার রিপোর্ট ঃ রবিবাসর রাতে যে বর্ষণ প্রথমে সুখদায়ী হয়েছিল, রাত বাড়তেই তা যেন ভয়াল চেহারা নিতে শুরু করে। অঝরে বর্ষণ রাতভর। বৃষ্টি যেন আর থামার নাম নিচ্ছে না। ১৯শে সেপ্টেম্বরের রাতে কলকাতা শহর জুড়ে যে বর্ষণ শুরু হয়েছিল, তার জেরে কল্লোলিনী তিলোত্তমার বহু জায়গায় জল জমতে শুরু করেছে। মধ্যরাতের পর ভোররাতে সূর্যের আলো ফুটতেই তা কালো মেঘের আস্তরণে ঢেকে যায়।
শুধু রবিবারই নয় সপ্তাহের প্রথম দিন অর্থাৎ সোমবার সহ পরিবর্তী দিনগুলো একই অবস্থায় থাকতে পারে রাজ্যে বিভিন্ন জেলা। এমনটাই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক, সোমবার থেকে আবহাওয়ার গতিবিধি নিয়ে পূর্বাভাস কী কী বলছে! আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে,
জোড়া ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখা। ফলে বৃষ্টির হাত থেকে এখনই রেহাই পাচ্ছে না বঙ্গবাসী।
দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউনের পালা যে সময় থেকে শুরু হওয়ার কথা, ঠিক সেই সময় থেকে প্রবল বর্ষণ সহ কালো মেঘে আকাশ ঢেকেছে। স্বভাবতই বিরক্ত মহানগরবাসী। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, জোড়া ঘূর্ণাবর্ত ও সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখায় ভর করে প্রবল বর্ষণের পালা সবে শুরু হয়েছে। এরপর রয়েছে আরো বর্ষণের সম্ভাবনা। ফলে সোমবারের পরও প্রবল বর্ষণ আসন্ন বলে জানা গিয়েছে।
এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের আকাশ মেঘলা থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। দক্ষিণবঙ্গ যেখানে কার্যত বানভাসী, সেখানে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে কোনও কোনও জায়গায় ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে সোমবার বিকেলের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে। শুধু সোমবারই নয়, মঙ্গলবার সকালেও বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস তেমনভাবে কিছু নেই উত্তরবঙ্গে। সেখানকার তাপমাত্রার কোনও পরিবর্তন হবে না বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০° ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে, আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫° ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছেই ঘোরাফেরা করছে। এদিকে, রবিবার রাতের প্রবল বর্ষণের জেরে শহর কলকাতায় জল-জট শুরু হয়েছে। সল্টলেক, ইএম বাইপাস, মুকুন্দ পুর মেন রোড, পাটুলির একাংশে প্রবল বর্ষণের জেরে জল দাঁড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, জলমগ্ন দক্ষিণ কলকাতার খিদিরপুর, বেহালা, ঢাকুরিয়া, মুদিয়ালি, টালিগঞ্জ, কসবা, সার্দান এভিনিউ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। অন্যদিকে, সোমবার সারাদিনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। রবিবার রাতের বর্ষণের রেশ ধরে সোমবার সকালেও বহু জায়গায় বর্ষণ হয়েছে। আজ গোটা দিন শহরে বৃষ্টির দাপট অব্যাহত থাকবে। জানা গিয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগের একটি ঘূর্ণাবর্ত ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে ওড়িশার দিকে যাচ্ছে। আগামী ২ থেকে ৩ দিনে তা আরও এগিয়ে যাবে। আরও একটি ঘূর্ণাবর্তের অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায়। এদিকে বিহার ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখা। সব মিলিয়ে তার প্রভাবেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত ভাসছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে এই জানানো হয়েছে যে, আগামী কয়েকদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য সর্তকতা জারি থাকবে দক্ষিণবঙ্গে।
সোমবার দুপুরের পর থেকেই আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সন্ধের পর থেকেই ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। ভারী বৃষ্টি চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। ফলে বৃহস্পতিবার অব্দি মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দীঘা, মন্দারমনি, সাগরদ্বীপ-সহ সম সমুদ্রসৈকতে জারি সর্তকতা। উপকূলের জেলাগুলিতে ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে।
৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে কলকাতা সহ হাওড়া, হুগলিতে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বইবে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে,
উত্তর বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তা আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। মূলত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যা উপকূলের সাগরে এই নিম্নচাপের অবস্থান রয়েছে।
মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি সব জেলাতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে বলে সুত্রের খবর। যদিও দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টির সর্তকতাও রয়েছে। সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট বাড়বে পশ্চিমের বেশকিছু জেলাতেও। অতিভারী বৃষ্টির সর্তকতা রয়েছে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে।
দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও হালকা মাঝারি বৃষ্টি, দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। বৃহস্পতিবারে পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি চলবে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টির সর্তকতা থাকছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। উত্তরবঙ্গে বুধবারে দার্জিলিং সহ উপরের দিকের পাঁচ জেলায় দু-এক পশলা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতায় মেঘলা আকাশ থাকবে। দফায় দফায় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।