অতিমারীকে পরাজিত করে হস্তশিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য উদ্যোগ “মাটির মেলা”
শতাধিক হস্তশিল্পীর সৃজনশীল প্রতিভার সাক্ষর ছড়িয়ে থাকবে মাটির মেলা জুড়ে
HnExpress নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসাত ঃ চলতে থাকা অতিমারীকে পরাজিত করে হস্তশিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য উদ্যোগ “মাটির মেলা”। আজ বারাসাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে মেলা’র উদ্বোধন করলেন খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার তথা বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল এবং জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত শিল্পী তীর্থ ভট্টাচার্য। এবছর দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করলো এই মাটির মেলা, যেখানে সারা বাংলা থেকে হস্তশিল্পীরা উপস্থিত হয়েছেন তাঁদের পসরা সাজিয়ে। গত বছর চার দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মাটির মেলা। আর এ বছর এই অভিনব মেলাটি ৪১টি স্টলে নানা পসরা সাজিয়ে ১০ দিন ব্যাপি চলবে। অর্থাৎ ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২১ থেকে ২রা জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত।
এদিন মাটির মেলার মূল স্থপতি সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য বলেন যে, “বাংলার হস্তকলা ও অভিনব সৃজনের সঙ্গে যুক্ত সেই সব অপরিচিত মুখগুলিকে জনসমক্ষে খুঁজে আনতে ও তাঁদের অসামান্য সব সৃষ্টিকে উন্মোচিত করার উদ্দেশ্যেই আমরা গত বছর থেকে এই মেলার আয়োজন করছি। তাই আমাদের বিশ্বাস মাটির মেলা এই শিল্পীদের ও শিল্পের গুণগ্রাহীদের এক মিলন তীর্থ ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা অতিমারী আমাদের সবার জীবনে গভীর ছাপ রেখে চলেছে। ফলে এই হস্তশিল্পীদেরও অতিমারীর প্রভাবে খুবই করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই তাঁদের আর্থ-সামাজিক জীবন যদি এই মাটির মেলার মাধ্যমে সামান্য বদলাতে পারি তবেই এই আয়োজন সার্থকতা লাভ করবে বলে আমরা মনে করি। আর এভাবেই বাংলার অনবদ্য সব হস্তকলার অগ্রগতিতে মাটির মেলা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে থাকবে”।
মাটির মেলায় মাটির তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম এর মধ্যে থাকছে পাটের তৈরি সামগ্রী, হ্যান্ডমেড পেপারের পণ্য, গাছ, শীতল পাটি, হাতে তৈরি সুগন্ধী, খাদির পোশাক, শাড়ি, হাতে তৈরি গয়না ইত্যাদি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। এই শীতে মেলায় পিঠে-পুলির স্টলও খাদ্যরসিকদের নজর কাড়বে তা বলাই বাহুল্য। তিনি আরও জানান, “অতিমারীর অভিঘাত আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আর এই অতিমারী পর্বে যে মানুষেরা সামনে থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় লড়াই করেছেন মেলা প্রাঙ্গণে এমন ১০ জন চিকিৎসককে আমরা সম্মান জানাবো। বারাসাত স্টেশন, বাস টার্মিনাস সহ বিভিন্ন স্থানে যে সমস্ত দরিদ্র প্রান্তিক মানুষ এই শৈত্য প্রবাহের সঙ্গে লড়াই করছেন তাদের হাতে কম্বল ও শাড়ি তুলে দেব আমরা।”
এছাড়াও মেলায় দশ দিন ধরে থাকছে নানান মনোগ্রাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলার মাটির সুর গুঞ্জরিত হবে মেলা প্রাঙ্গনে বাউল ও ছৌ শিল্পীদের উপস্থাপনায়। বারাসাতের অভিনব গানের দল ‘গাছের জন্য গান’ থাকছে এই মেলায়। যারা গান গেয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে মেনগ্রোভ বৃক্ষ রোপণ করে। মেলার প্রথম দিনই আগত অতিথিদের মাতিয়ে দিতে থাকবেন লোকশিল্পী তীর্থ ভট্টাচার্য। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শ্রাবণী সেন ও ইন্দ্রানী সেন। এছাড়াও থাকবে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যর স্মৃতি বিজড়িত দোহার গানের দলেরও উপস্থাপনা। গ্রুপ থিয়েটারের দল লোককৃষ্টিও একটি নাটক পরিবেশন করবে। সব মিলিয়ে মাটির টানেই মাটির মেলা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সদরে এক ভিন্ন মাত্রার আয়োজন করেছে।