দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বহু নিরোপরাধীর আতঙ্কিত রাত্রি যাপন
HnExpress নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ঃ “জয় শ্রীরাম” ধ্বনিকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্থি থানার অন্তর্গত বিষ মদ কান্ড খ্যাত সংগ্রামপুরে। ঘটনার সূত্রপাত ১১ই আগস্ট, রবিবার অর্থাৎ ঈদ-উল-আযহা বা বকরি ঈদের আগের দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে কয়েকজন যুবক “জয় শ্রীরাম” ধ্বনি দিয়ে এক নিরপরাধ মুসলিম যুবকের উপর নিন্দনীয় আক্রমণ চালায়।
সারা ভারত জুড়ে দিনের পর দিন নিরপরাধ মুসলিমদের উপর “জয় শ্রীরাম” ধ্বনি দিয়ে বর্বরোচিত যেসব আক্রমণ করা হচ্ছে তা সম্প্রীতি, সংস্কৃতির পীঠস্থান, রবি ঠাকুর বা নজরুলের বাংলায় আছড়ে পড়তে অনেক বুদ্ধিজীবীও শঙ্কিত হয়ে আছেন। তাই এই জাতীয় ঘটনার প্রতিবাদ সহ সংগ্রামপুর রেল স্টেশন এর পরিষেবা কেন্দ্রিক উন্নতি, যাত্রী সুরক্ষা ও আরো বেশ কয়েকদফা দাবিতে গত ১৪ই আগস্ট অর্থাৎ বুধবার বেলা ১০টা থেকে সংগ্রামপুর স্টেশনে রেল অবরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করে সংগ্রামপুরের সপ্তগ্রামবাসী।
প্রাথমিক অবস্থায় এই আন্দোলন পরিচালনা করছিলেন কালিকাপোতা অঞ্চলের AIMIM দলের কিছু সমর্থক। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, — স্টেশনে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, মহিলা যাত্রী সহ সাধারণ সব যাত্রীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা, স্টেশনে শৌচালয় থাকলেও তা অনুপযোগী অবস্থায় ফেলে না রেখে যাত্রী সাধারণের ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়া, সেই সাথে সম্প্রীতির বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াতে চাওয়া ক্যানিং এর অপরাধীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি।
ঘন্টাখানেক আন্দোলন চলার ফলেই ট্রেন চলাচল অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে শিয়ালদহ থেকে ডায়মন্ড হারবার শাখায়। বেশ কয়েকটি ট্রেনও বাতিল হয়। তবে পরবর্তীতে শিয়ালদহ থেকে মগরাহাট পর্যন্ত অবশ্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। যাইহোক, ঘন্টাখানেক এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উস্থি থানার ওসি সহ আরো কয়েক গাড়ী পুলিশ। অন্যদিকে SDPO (ডায়মন্ড হারবার), GRP এর উচ্চপদস্থ অফিসারগণও এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।
যেকোনো রকমের খবর ও বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন।
এসময় বিক্ষোভকারীগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের দাবি সম্বলিত কাগজপত্র বা স্মারক জমা দেন, ও আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য এই সময় অবরোধকারীগণ প্লাটফর্মের পশ্চিমদিকে অবস্থান করছিলেন। অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে প্রশাসনের উপর সব ছেড়ে দিয়েছিলেন।
এইসময় হঠাৎ প্লাটফর্মের পূর্বদিকে কিছু সাধারণ মানুষ অজানা কারণে ট্রেনের ওভারহেড তারে কলাপাতা তুলে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়েছিল। এবং পুলিশের সাথে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ওই কালিকাপোতা গ্রামের পার্শ্ববর্তী রেল লাইনের ধারে। AIMIM পার্টির কর্মীরা এই বিষয়ের সাথে আর কেউ জড়িত ছিলো না বলে সুত্র থেকে জানা গেছে।
তবে ঘটনা জটিল হতে শুরু করলে কয়েকজন উত্তেজিত মানুষ পুলিশের গাড়ী ভাঙচুর করে।এরপর পুলিশও আক্রমনাত্মক ভূমিকা নেয়।স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন অর্থাৎ বুধবার অনেক এলাকাবাসীর বাড়ি সার্চ করেন পুলিশ।বৃহস্পতিবার অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের দিন ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তারি শুরু করে পুলিশ।মোবাইলে থাকা কিছু ফটো আর ভিডিও ফুটেজে যাদের যাদের চেনা যাচ্ছে তাদের সকলকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। পথচারী থেকে সাধারণ মানুষ যাকেই দেখা যাচ্ছে ওই ফটোতে তাকেই গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
ফলে বেশ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ জনেরও বেশী মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় সকলের ক্ষেত্রে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, খুনের প্রচেষ্টা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা এই রকম করে বহু কেস দেওয়া হচ্ছে নিরীহ মানুষদের নামেও। এলাকার বহু মানুষ এই ঘটনায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন। সব কিছুর উর্দ্ধে সকলের কাছে একটাই চাওয়া, বন্ধ হোক এই গ্রেপ্তারি, না হলে অনেক নিরাপরাধ মানুষকে ঘর বাড়ি ছেড়ে আরো বিনিদ্র নিশিযাপন করতে হবে। এলাকায় দ্রুত শান্তি ফিরুক এই কামনাই সবার।