সুদীপ্তের পর এবার আরও এক প্রান কেড়ে নিলো পুলিশের লাঠিচার্জ, সোমবার সকালে এক নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় DYFI যুব নেতা মইদুলের
HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ নাম আর বয়েসেই যা ফাঁরাক। এক জনের ছিল ২২, আর একজন এর সবে ৩১। ২রা এপ্রিল ২০১৩-তে কলকাতায় একটি বিক্ষোভে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে মাথাতে লাঠির আঘাতে আহত হন সুদীপ্ত। পরে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীনই মারা গিয়ে ছিলেন SFI কর্মী সুদীপ্ত গুপ্ত। আর অন্যদিকে এদিন, নবান্ন অভিযানে আহত হয় যুব নেতা DYFI যুব নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যা।
গুরুতর আহত হয় পুলিশের এলোপাথাড়ি লাঠির আঘাতে। আজ সোমবার সকালে এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর জখম হন বলে অভিযোগ উঠেছিল বাম সংগঠনের তরফে। পেশায় চিকিৎসক ও DYFI নেতা ফুয়াদ আলিম বলেন যে “১৩ তারিখ সকালে জানা যায় তাঁর কিডনি ফেলিওর হয়েছে। পুলিসের লাঠির আঘাত পেশির উপর পড়ায় পেশি ফেটে যায়।
তিনি আরও বলেন, সেখান থেকে যে প্রোটিন বের হয়, তা কিডনিকে ব্লক করে দেয়। প্রথম দিন থেকেই মিদ্যা চিকিৎসকদের তদারকিতে ছিলেন। রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারা যায়, সোডিয়াম নেমে গিয়েছে এবং পটাশিয়াম বেড়ে গিয়ে ছিল। ১৪ তারিখ তাঁর শারীরিক আরও অবনতি ঘটে। রবিবার রাত্রে সামান্য ভাল হয়েছিল। কিন্তু ফুসফুসে জল জমতে শুরু করে। কিন্তু আজ ১৫ তারিখ সকালেই লড়াই শেষ করেন মইদুল ইসলাম মিদ্যা”।
বাম যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযানের দিন অর্থাৎ ১১ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার পুলিশের সাথে বাম সমর্থকদের ধুন্ধুমার চলে। কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল ডোরিনা ক্রসিংয়ে আসতেই পুলিস বাধা দেয়। তারই জেরে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয় মিছিল করে আসা বিক্ষোভকারীদের, ফলে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ডোরিনা ক্রসিং। এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেওয়ার সময়ে লাঠির আঘাতে DYFI যুব নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যা আহত হন। পড়ে জান রাস্তাতেই।
লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয় এবং জলকামানও ছোঁড়া হয়। হাওড়াতেই মোট ৬টা জায়গায় ব্যারিকেড করে পুলিস।ঘটনা প্রসঙ্গে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা ঠান্ডা মাথায় করা একটা খুন। বাঁকুড়া জেলার এক গ্রামের ছেলে চাকরি চাইতে এসে ছিলেন। তাঁকে বুক-পিঠ লক্ষ্য করে মেরেছে। সরকার তার ইতরামীর সীমা ছাড়িয়েছে। খুনি সরকার। মানুষের কথা শোনার মতো কোনও সুযোগই রাখে না এই সরকার”।
DYFI নেতা কলতন দাশগুপ্ত বলেন যে, “এটা জালিয়ান ওয়ালাবাগের মতো ঘটনা। চাকরি চাইতে গিয়ে কলকাতার রাস্তায় খুন হতে হয়েছে প্রশাসনের হাতে”। এইদিনের অভিযানের পর বিমান বসু বলেন, ‘গতকাল যা ঘটেছে তা ঘটা উচিত ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে পুলিসের পক্ষ থেকে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হল যেন এটা যুদ্ধক্ষেত্র। খানিকটা যেন প্রতীকী জানিয়ানওয়ালাবাগ। নির্মম ভাবে কয়েকশো ছাত্র-যুবর উপর হামলা করা হল। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।”
অন্যান্য বাম দল, বাম ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল এবং কংগ্রেস সকলের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দ্রুত প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই।’ প্রতিটা ঘন্টার শেষে পেরিয়ে যাবে দিন, সপ্তাহ, মাস আর তারপরে বছর। চাকরির জন্য ন্যায্য দাবীর মিছিলে মৃত্যু হলো সুদীপ্তর মতোই আরও একটি যুবকের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ৮ বছর আগে শ্রীরামপুর কলেজের এসএফআই কর্মীরা সুদীপ্তর স্মরণে কলেজ সংলগ্ন চত্বরেই অস্থায়ী বেদি তৈরি করে সুদীপ্তর ছবি লাগিয়ে ছিল।
কিন্তু অভিযোগ, কলেজের টিএমসি নেতৃত্ব সেই ছবি ছিঁড়ে ফেলে দেন নর্দমায়। ভেঙে দেওয়া হয় সেই অস্থায়ী বেদিও। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের টিএমসি নেতৃত্ব। শেষ একটাই প্রশ্ন থেকে যায়, যে কোনো রাজনৈতিক দলই হোক না কেন, সেই ব্যাক্তির মৃত্যু বেদনাদায়ক। আর সেখানে এসএফআই কর্মী সুদীপ্ত গুপ্ত রেহাই পায়নি মৃত্যুর পরেও।