বাজেট পেশ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখোমুখি হলেন মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা পৌর প্রশাসক রথীন ঘোষ
HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বর্তমানে অসুস্থ। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বাড়িতেই বিশ্রাম নিচ্ছেন। যার ফলে মানুষের কল্যানে বাজেট পেশ করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। যদিওব তা নিয়ে বিরোধীরা কটূক্তি করতে ব্যাস্ত। কারন হিসাবে তাদের বক্তব্য ২১ এর ভোটের আগেই তাড়াহুড়োতে বাজেট পেশ করা মানে হলো ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর আসল উদ্দেশ্য।
কিন্তু এটা বলাই বাহুল্য যে, জরুরি ভিত্তিতে এই প্রথম বার এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বাংলার বাজেট পেশ করলেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে সম্প্রতি সেই বাজেট পেশ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখোমুখি হলেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত মধ্যমগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক তথা পৌর প্রশাসক রথীন ঘোষ এবং বারাসাত পৌরসভার পৌর প্রশাসক সুনীল মুখার্জী।
বারাসাত পৌরসভার পৌর প্রশাসক সুনীল মুখার্জী বলেন, ৫ই ফেব্রুয়ারী মুখ্যমন্ত্রী ২০২১- ২০২২ এর যে বাজেট পেশ করেছেন। সেই বাজেটের পরিমান হচ্ছে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এখানে ১০০ দিনের কাজ এর মধ্যে সারা ভারতে আমারা প্রথম। আনন্দের বিষয় যে ৫ বছরে ৪৬ বর্গ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হবে যা রাজ্য সরকের সাথে যুক্ত করা হবে। বিগত অর্থবর্ষের তুলনায় এই অর্থবর্ষে পরিকাঠামো ৯ পয়েন্ট ৩ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ ৬ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে ৫ পয়েন্ট ৬ গুন বৃদ্ধি পেয়েছ। রাজ্যের উন্নয়ন কতৃক ৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে একর পিছু অনুদান ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা করা হয়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তফশিলি জাতি, উপজাতি, জনজাতিদের জন্য অলচিকি ভাষায় স্কুল তৈরির প্রস্তাব, এবং নেপালি, কামতাপুলি, রাজবংশী ভাষাতেও স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে।
পর্যটন শিল্পে ১০ হাজার থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ, পার্ক সার্কাসে স্কাইওয়াকের ভাবনা, পরিবহণে লাইসেন্স রিন্যুউ দেরী হলে জরিমানা মকুব, বালুরঘাট, মালদহ, কোচবিহার থেকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ, সেচ কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, ব্যবসায়িক যাতায়াতে ৩০ জুন পর্যন্ত কর মকুব, অন্ডাল বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রুপে রূপায়নের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এছাড়াও তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রুবি থেকে কালিকাপুর উড়ালপথ, উল্টোডাঙা থেকে পোস্তা বাজার উড়ালপথ, চিংড়িঘাটা থেকে নিউটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল, পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত উড়ালপথ, উড়ালপথ নির্মাণে ২,৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘যুবশক্তি’ নামে নতুন প্রকল্পে যুবকদের ইন্টার্ন হিসেবে নেওয়া হবে। ইন্টার্নশিপ শেষে চাকরি দেওয়া হবে। রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হওয়ার ফলে নগদ জমা ছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বললেন, নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন এর জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী প্রদানের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, মাতৃবন্দনা নামে নতুন প্রকল্পের জন্য ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কোভিডের জন্য ৪৫ হাজার শ্রমিককে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। মাদ্রাসাগুলিকে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
আইটি প্রতিষ্ঠান গুলিকে শিল্পের জন্য জমি দেওয়া হয়েছে। রাস্তাতে ধুলা নিবারন এর জন্য প্রায় ৪০ টি জল ছেটানোর গাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এরপর মধ্যমগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক তথা পৌর প্রশাসক রথীন ঘোষ ছোট্ট করে বক্তব্য রাখেন। রথীন ঘোষ বলেন ২০১০- ১১ সালে বাজেট ছিলো ৮৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, ২০২১-২২ সালে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ তা তিন গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়ন পরিকাঠামোতে ২০১০-১১ তে ছিলো ১৭৫৯ কোটি টাকা, ২১- ২২ তে বেড়ে ৯৮১৬ কোটি টাকা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যের স্যোসাল সেক্টারে ২১- ২২ এ বেড়ে ৬২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা হয়েছে। নতুন যে সংযোজন হয়েছে তা হলো ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ও ৮ বছরে ঊর্ধ্বে সমস্ত মানুষের জন্য পেনশনের জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নেতাজীর নামে যে জয় হিন্দ ভবন চালু হয়েছে তার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তিনি আরো বলেন যে বাজেট পেশ ভোটের আবহে পেশ করা হলেও তা কিন্তু বাজেট এর জন্যেই এই টাকা আগে থেকেই পরিকল্পনা মাফিক বরাদ্দ করে রাখা আছে।
সাংবাদিকদের তরফ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে বিজেপি এই বাজেট বয়কট করে, তার উত্তরে তিনি বলেন যে, শুধু বিজেপি নয় সাথে বামপন্থিরাও বয়কট করেছেন। কিন্তু রাজ্যপাল এর অনুমোদন নিয়েই এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় রাজ্যপালকে আগে ভাষণ না দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে, তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার উত্তরে রথীন ঘোষ বলেন যে, বিধানসভার কনভেনশন অনুযায়ীই এটা করা হয়েছে৷ তা বলে রাজ্যপালকে বয়কট করা হয়নি। হলে তিনি বাজেট পেশকে অনুমোদন দিতেন না।