লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে জালিয়াতি রুখতে কঠোর নবান্ন— থাকছে ‘গ্রিভেন্স সেল ও হেলপ ডেস্ক’
HnExpress অরুন কুমার, নবান্ন ঃ ১৬ই আগস্ট থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের শিবির। এই শিবিরে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তাদের জন্য। সেখানকার নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে যে ফর্ম পাওয়া যাবে তা পূরণ করে সেখানেই জমা দিতে হবে। গত বিধানসভা ভোটের আগে ইস্তাহারে মহিলাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে প্রতি মাসে পরিবারের মহিলাদের হাতখরচ দেবে রাজ্য সরকার। আর সেই মতোই তফসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের মাসে ১০০০ টাকা এবং অন্যান্য মহিলাদের মাসে ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। ১লা সেপ্টেম্বর থেকে মহিলাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে সেই ভাতা। ১৬ই আগস্ট থেকে বিভিন্ন দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে শুরু হয়েছে ফর্ম ফিলাপ।
দুয়ারে সরকার কর্মসূচির অধীনেই শুরু হয়েছে এই ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প। এবার সেই প্রকল্প নিয়ে সতর্ক নবান্ন। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে বেশ কিছু ঘোষণা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, “লক্ষীর ভান্ডার এর জন্য ফর্ম বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। কোন ট্যাক্স দিতে হবে না। তবে তা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকেই নিতে হবে। আর এই আবেদনপত্র নকল করা যাবে না। মূলত একটা ইউনিক computer-generated নম্বর থাকবে ওই আবেদন পত্রে।
একমাত্র দুয়ারে সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার এর কাউন্টার থেকেই এই আবেদন পত্র পূরণ করা যাবে। তবেই সেটা মান্যতা পাবে।” তবে সে ক্ষেত্রে লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে কোন অভিযোগ এলে সেই অভিযোগ জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে সরাসরি ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে বলে নবান্ন সুত্রের খবর। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে ১০৭০/২২১৪৩৫২৬ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। আর সেই অভিযোগের নিষ্পত্তিও করা হবে।”
ইতিমধ্যেই লক্ষীর ভান্ডার নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীর ভান্ডার এর আবেদন পত্র নিয়ে যদি কোনো নকল হয় সে নিয়েও সতর্ক করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, একটা ইউনিক নম্বর দেওয়া থাকবে সেই নম্বর নকল করে কেউ কিছু করতে পারবে না। বাইরে থেকে কেউ আবেদনপত্র নিয়ে এলে বা কোন এজেন্সিতে থেকে নিয়ে এলে ওই আবেদনপত্র গুলো কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন “যেভাবে আমরা দিদিকে বলো করেছিলাম সেভাবেই ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে।” লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প নিয়ে সতর্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন তিনি। মমতার কথায়, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্যে একেবারে বিনামূল্যে ফর্ম দেওয়া হবে। আর তা দেবেন সরকারি আধিকারিকরা। বাইরে থেকে কিংবা কেউ এই প্রকল্পের জন্যে ফর্ম দিলে তা গ্রাহ্য হবে না বলে এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মূলত রাজ্যে শিশু সুরক্ষা ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর মহিলাদের প্রত্যেক মাসে ৫০০ টাকা করে ও এসসি-এসটিদের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে। তবে সে ক্ষেত্রে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে সেখানে একাধিক নিয়মের কথা বলা হয়েছে। মূলত বয়স ২৫ থেকে ৬০ এর মধ্যে হতে হবে। আর এ রাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে। সরকারি কর্মচারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কেন্দ্রের ও রাজ্যের, কোন স্বশাসিত সংস্থা, সরকারি নিয়ন্ত্রিত কোন সংস্থা, পঞ্চায়েত, পৌরসভা, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, সরকারি স্কুল গুলির ক্ষেত্রে যদি কেউ নিয়মিত বেতন বা পেনশন পান তারা এই সুবিধা পাবেন না।
এক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর্থিক সুবিধা ট্রান্সফার করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আঁধার লিঙ্ক থাকতে হবে। এবিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব জেলাশাসকের নির্দেশ দিয়েছে লক্ষীর ভান্ডার নতুন প্রকল্প শুরু হচ্ছে তাই বিভিন্ন ক্যাম্পে মহিলাদের প্রচুর ভিড় হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোভিড নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেই বিষয়েও ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব নির্দেশ পাঠিয়েছেন জেলা শাসকদের বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।
জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীর ভান্ডারে আলাদা ক্যাম্প থাকছে। ফর্মের গায়ে থাকবে নাম্বার। দুর্নীতি রুখতেই সতর্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন যে, এই ক্যাম্প থেকে সরকারি আধিকারিকরা যে ফর্ম দেবেন তাতে একটি নম্বর থাকবে। সেই নম্বর সরকারের রেকর্ডেও লিপিবদ্ধ থাকবে। আধার কার্ড দেখিয়ে এই ফর্ম পাওয়া যাবে। অর্থাৎ বাইরে থেকে কেউ যদি ফর্ম নেয় তা জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবে। সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বারবার এই বিষয়ে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, লক্ষ্মীর ভান্ডারে ফর্ম নেওয়ার জন্যে কারোর সাহায্য নেবেন না।
এলাকার যেখানে ক্যাম্প বসছে সেখানে গিয়ে ফর্ম নিন আর সেখানেই জমা দিন। নবান্নের সাফ বার্তা, বাইরে থেকে এই ফর্ম কেনা যাবে না। কোনও সংগঠন যাতে এই ফর্ম নিয়ে বাইরে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করতে না পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা বলে দাবি রাজ্য প্রশাসনের।
আরও জানা গিয়েছে, কোনও তথ্য জমা দিতে লাগবে না। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্যে সরকারি কোনও রেকর্ড জমা রাখতে হবে না বলে জানিয়েছেন মমতা। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতা উদাহারণ সম্প্রতি এক ঘটনার উদাহারণ সামনে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, বুধবার একটি গ্রামে গুজব রটে যায় যে লক্ষ্মীর ভান্ডার সুবিধা পেতে গেলে বাড়ির ট্যাক্স আগে দিতে হবে। কিন্তু তেমনটা কখনই নয়। সমস্ত মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এজন্যে কিছু করতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও জানিয়েছেন, দুর্নীতি রূখতে খোলা হচ্ছে গ্রিভেন্স সেল। তিনি বলেন, দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষ ৯৯ শতাংশ উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু এরপরেও যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী দফতরে জানানো যাবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
এজন্যে এদিন দুটি টোল ফ্রি নম্বরও খুলে দিয়েছেন মমতা। নম্বর দু’টি হল-১০৭০/ ২২১৪-৩৫২৬। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম, কৃষক বন্ধু, স্বাস্থ্যসাথীর ফর্ম নিয়ে কারুর কোনও অভিযোগ থাকলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে সাধারণ মানুষ জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কোনভাবেই যাতে কোনো উপভোক্তা প্রতারিত না হন তার জন্য প্রতিটি ফর্মে কম্পিউটার জেনারেটেড ইউনিক নম্বর দেওয়া থাকছে। সেই নম্বর রাখা থাকবে সরকারি আধিকারিকের কাছেও।
নবান্ন সূত্রে খবর, বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে নির্দিষ্ট হেল্পলাইনে অভিযোগ আসছে যে টাকার বিনিময়ে ফর্ম বিক্রি হতে পারে। এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই উপভোক্তাদের সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা যেন কোনভাবেই কারো কথায় প্রতারিত না হন। কেবলমাত্র লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের শিবির থেকেই ফর্ম পাওয়া যাবে, অন্য কোনও ফ্রম গৃহীত হবে না। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই জেলাশাসকদের কড়া নজর রাখার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।