নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের পাশে দাঁড়ালো জগৎপুরের ‘আনন্দধারা’
HnExpress ২৭শে এপ্রিল, অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া ঃ এদিকে মারণসম রোগ করোনার করাল থাবা, অন্যদিকে লকডাউনের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ার ফলে এক পা এক পা করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ। আর সেই জীবন-মৃত্যু খেলার মাঝেই নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের পাশে এসে দাঁড়ালো জগৎপুরের ‘আনন্দধারা’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উলুবেড়িয়ার ইতিহাসে একটা দিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে আছে। আর সেই দিনটি ছিল ৫ই মে ১৯৪০ সাল, যখন ভারতমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য উথাল-পাথাল সারা দেশ।
ঠিক সেই সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত মহাত্মা করমচাঁদ গান্ধী এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দু’টি ভিন্ন ভিন্ন পথে বিভক্ত হয়ে যায়। আর সেই সময় বাংলাতে নেতাজীর প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। ১৯৪০ সালের ৫ই মে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আসেন উলুবেড়িয়ায়। উদ্দেশ্য একটাই, মহাজাতি সদন নির্মান ও স্বহিংস পথে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য অর্থ সংগ্রহ। তিনি উলুবেড়িয়ায় এসে উলুবেড়িয়াবাসীকে মহাজাতি সদন নির্মান ও স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য অর্থ দানের আহ্বান জানান।
আর এই উপলক্ষে একটা বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয় উলুবেড়িয়ার ধাড়ার মিষ্টির দোকানের কাছ থেকে (যেটা আদতে বলা চলে নিষিদ্ধ পল্লী এলাকা)। নেতাজীর সেই আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হন উলুবেড়িয়ার কালীবাড়ীর কাছে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলারা। তাঁরা নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের কাছ থেকে নিজ নিজ সাধ্যমত অর্থ সংগ্রহ করে। শোভাযাত্রার শুরুর মুহুর্তে নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলারা তাদের সংগৃহীত সেই অর্থ দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে তুলে দেন।
নেতাজী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সেই অর্থ গ্ৰহণ করেন। নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের এই দান সেদিন এই হাওড়ার উলুবেড়িয়াবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।উলুবেড়িয়াবাসীরাও সেদিন তাদের সাধ্যমত অর্থ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে তুলে দিয়ে ছিলেন। বর্তমানে দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও তার মোকাবিলায় চলছে টানা লকডাউন। আর এই লকডাউনের ফলেই সেই উলুবেড়িয়ার নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের রোজগারে পরেছে ছেদ। তার ফলে তাঁরা না খেতে পেয়ে মরতে বসেছে। অনাহারে-অর্ধাহারে কোনো রকমে দিন কটাচ্ছিল তাদের।
ঠিক সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে উলুবেড়িয়ার জগৎপুরের ‘আনন্দধারা’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অতনু করাতী জানালেন, সম্প্রতি আমাদের কাছে নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের সেই অর্থহীন জীবনযাত্রা ও খাদ্যহীন সমস্যার কথা আসে। বিগত দিনে তাদের সেই অবদানের কথা মাথায় রেখে আমরা সংগঠনের সদস্য-সদস্যারা আলোচনা করে তৎক্ষণাৎ মানবিকতার খাতিরে সিদ্ধান্ত নিই যে, এখন সবার আগে ওদের পাশেই দাঁড়ানোটা উচিত আমাদের। তাই আমরা উলুবেড়িয়ার পৌরসভার দুই কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে নিষিদ্ধ পল্লী এলাকায় যাই।
তিনি আরও বললেন যে, এই নিষিদ্ধ পল্লীতে বসবাসকারীদের জন্য আমরা ভাত, ডাল, আলু-পটলের তরকারি, ডিমের তরকারি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিই। এদিন সংগঠনের অন্যতম সদস্য রঞ্জন বেরা বললেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে পেরে আমরা সত্যিই খুব খুশি। প্রথমে আমরা সংগঠনের কয়েকজন সদস্য-সদস্যা মিলে এই কাজ শুরু করলেও, বর্তমানে অনেক মানুষই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সহযোগিতা করার জন্য।
আজ আমাদের ছাব্বিশতম দিন। আজ ৩৫০ জন মানুষকে মধ্যাহ্নের ও রাতের আহার দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছা আছে সকলের সাহায্য এবং সহযোগিতায় আগামী দিনেও যেন প্রতিদিন ও প্রতিনিয়ত এই সংকটময় পরিস্থিতির শিকার অসহায় দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারি। আর লকডাউন উঠে গেলেও এদের আর্থিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এদের পাশেই থাকবো বলে জানিয়েছি, মূলত নিষিদ্ধ পল্লীর বসবাসকারীদের।