ক্যান্সার আক্রান্ত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়ালো মানবিকতার ‘পার্পেল’
HnExpress ৪ঠা ফেব্রুয়ারী, নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ঃ বাংলা তথা ভারতবর্ষে অসহায় দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা আজকের যুগের মানুষের মধ্যে প্রায় নেই বলেই চলে। তবে এর ঠিক উল্টোটাই আজকে আমরা দেখলাম, যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস যোগ্য নয়। তবে মানুষের সেবা করাই যে পরম ধর্ম সেটা বুঝিয়ে দিলেন পার্পলের কর্ণধার ডক্টর যোষিতা ঘোষাল, মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্বরূপ অসহায় ক্যান্সার আক্রান্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে।
ডাক্তারদের প্রতি কিছু মানুষের খারাপ ধারনা বা অভিজ্ঞতা আছে ঠিকই, কিন্তু ডাক্তার মানে যে ভগবানের পরের স্থানও হতে পারে সেটা প্রমাণ করিয়ে দিচ্ছেন ডঃ যোষিতা ঘোষাল। ছোট থেকে মানুষের জন্য সেবার ধর্ম দেখতেই অভ্যস্ত তিনি। কারণ তার বাপের বাড়ি সহ মামার বাড়ির ফ্যামিলি এবং শ্বশুরবাড়ির প্রায় সবাই ডক্টর। আর মূলত বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসা করতে করতে তিনি এটা আরও বেশি করে অনুভব করেছিলেন। যে একজন অসহায় মানুষ রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে মানসিক দিক দিয়েও আরো কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে।
তাই শুধু চিকিৎসা নয়, এর সাথে সাথে মানসিক আনন্দ, মমত্ববোধ ও ব্যায়ামের অভ্যাস করলে হয়তো মানুষটা আরেকটু বেশি সুস্থ থাকতে পারবে। ডক্টর যোষিতা নিজেই মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের সাহায্যার্থে। আর অসহায়-দুস্থ বৃদ্ধ ক্যান্সার রোগীদের কাছে তিনি তো আজ ভগবান তুল্য ব্যক্তি। তারই ফল স্বরূপ সমস্ত অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের নিয়ে যোধপুর পার্কে শুরু করলেন নারী সেবা কেন্দ্র “পার্পেল” এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। আর এদিন এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বয়স্কদের নিয়ে এক মনোঙ্গ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
তাদের নিবেদনে ছিল —”নব আনন্দে জাগো”, যার সঙ্গে পরিচালনায় ছিলেন জয়িতা ঘোষাল, এছাড়াও ছিলেন মনিকা বর্ধন, জয়িতা বসু, সঙ্গীতা পাল ও অরুনাভ বর্ধন প্রমুখ। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু করা হয় সঙ্গীত শিল্পী মৌষুমী রায়ের উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠান ৬০এর ঊর্ধে বয়স্করা গান, শ্রুতিনাটক ও নৃত্যের তালে তাল দিয়ে অংশগ্রহণ করলেন, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে গান ও নাচের ফিজিক্যাল থেরাপি। গান গাইলেন ৮৫ বছর বয়স্কা হাঁসি ঘোষ আর জয়ন্ত কুমার ঘোষাল।
গানের সাথে নৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিলেন প্রায় ১৬ জন বয়স্কা মহিলা। এদিন তাঁদের উৎসাহ আর আনন্দের ছটা ছিল চোখে মুখে। পার্পেলের তরফ থেকে এই সমগ্র অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা সহ কোরিওগ্রাফিতে সহযোগিতা করলেন ডাঃ যোশিতা ঘোষাল ব্যানার্জি স্বয়ং। তাঁকে নৃত্য পরিচালনায় সহযোগিতা করলেন শকুন্তলা ঘোষ হাজরা, অম্বালিকা রায় ও অর্পিতা দত্ত। এদিন মূল্যবান কিছু বক্তব্য রাখলেন বড়িষ্ঠ নাগরিক মঞ্চের সেক্রেটারি ও বয়স্কদের প্রতিষ্ঠান দিনান্তের প্রতিষ্ঠাতা শান্তি রঞ্জন চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষিত হলো পার্পেল সংগঠনের অগ্রগতির পথে সাহায্যকারী বিশিষ্ট গুনীজন ও উপস্থিত চিকিৎসকদের স্বশ্রদ্ধ সম্বর্ধনা জানিয়ে। তাদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট অর্থোপেডিক চিকিৎসক মিস্তুন ব্যানার্জি , অঞ্জলি ফাউন্ডেশনের কর্ণধার রণধীশ চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট এন্ড অল এডিটর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় সরদার, আসিয়ানের জাতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সমীর দাস।
প্রসঙ্গত বয়স্ক মানুষদের জীবনধারার বিভিন্ন সমস্যার কথা ভেবেই পার্পেল আত্মপ্রকাশ করেছে অঞ্জলি ফাউন্ডেশন এর হাত ধরে। বয়স্ক হওয়া মানে শুধুমাত্র একটা বয়সের সংখ্যা। তার জন্য হয়তো কিছু শারীরিক সমস্যা থাকবে, কিন্তু তার চেয়ে মানসিক সমস্যাগুলি বয়স্কদের বেশি বিব্রত করে। একাকিত্বতা, বিষন্নতা আর অবহেলার বিভিন্ন দিক তাঁদের জীবনকে আরও বেশি দুর্বিসহ করে তোলে।
তাই পার্পেল বয়স্কদের জীবনের এই দুটো দিক, অর্থাৎ শারীরিক ও মানসিক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার জন্য যেমন প্রতি মাসে স্বাস্থ্য শিবির ও ডিমেনশিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিহ্নিতকরণের (dementia screening) প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বয়স্কদের জীবনকে আনন্দে রাঙ্গিয়ে দেওয়ার জন্যে রয়েছে নবতম প্রয়াসের নানা ধরনের উদ্যোগ।