পরির্বতনের হাওয়ায় বোধহয় মানবিকতাও আজ ভাষাহীন
HnExpress ওয়েবডেক্স নিউজ, ইন্দ্রানী সেনগুপ্ত ঃ “শোনো বন্ধু শোনো প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা, ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় দারুণ মর্ম ব্যথা”। এখানে সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, এখনও পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিজীবী বা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের চোখে পরেনি এই অমানবিকতার দৃশ্যটি। আসুন এবারে জেনেনি ঠিক কি এমন ঘটেছে যা অমানবিকতার নির্দশন হয়ে দাঁড়িয়েছে পঙ্গু সমাজের কাছে। তবে যেখানে মানবিকতা আজ ভাষাহীন সেখানে, দেখে নেওয়া যাক এই মুহূর্তের পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন?
গত দুদিন ধরে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরের ৪নং প্ল্যাটফর্মের একদম সামনের দিকে বসার জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায় এক অজ্ঞাত পরিচয়ের সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধাকে। ভীত, বিধ্বস্ত ও কিছুটা বয়সের ভারে জুবুথুবু মানুষটির কাছ থেকে অতি কষ্টে তার এখানে বসে থাকার কারণ হিসেবে এইটুকুই জানা যায় যে, উনি আরামবাগে একজনের বাড়িতে থেকেই কাজ করতেন। আর সেই বাড়িরই লোকজন তাঁকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে কলকাতায় নিয়ে আসে। এবং এই শিয়ালদহ স্টেশনে তাঁর বোচকা প্যাটরা সহ তাঁকে বসিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
সুত্র অনুযায়ী জানা গেছে, ওঁনার এই দুনিয়ায় নিজের আপনজন বলতে কেউ নেই। একটি মাত্র ছেলে ছিল তাঁর, কিন্তু সেও আজ মৃত। স্টেশনে সেই সময় উপস্থিত এক স্বহৃদয় ব্যাক্তি (রনি দাস) সেখানকার জিআরপি কে ও স্টেশন মাস্টারকে পুরো বিষয়টি জানায়, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়েনি। তারাও নাকি এই মানবিক সমস্যার কোনো সমাধানই খুঁজে পাননি বলে জানা গেছে। রনি দাস নামের ব্যাক্তিটি তাঁর বেশ কিছু পরিচিত জায়গায় সাহায্যের আবেদন করে যোগাযোগ করেও শেষমেশ ব্যার্থ হন। শেষে তিনি বাধ্য হয়ে মানবিকতার স্বার্থে সোশ্যাল মিডিয়াতে সম্পূর্ণ বিষয়টি পোস্ট করে সাহায্যের আর্জি জানান এই অপরিচিত এক অসহায় বৃদ্ধা মায়ের জন্য।
তিনি তাঁকে তাঁর সাধ্যমতো কিছু খাওয়ার ও পানীয় কিনে দেন, কিন্তু তা কত দিন সেই মানুষটির ভরণপোষণের দায় বা তাঁর ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটাতে পারবে? সুত্রের খবরে, আজও তিনি সেই একই পরিস্থিতিতে দিনযাপন করছেন। এখনো কোনো বিনা স্বার্থে, মানবিকতার খাতিরে সাহায্যের হাত তাঁর দিকে এগিয়ে আসেনি। তাই এক বিরাট প্রশ্ন উঠেছে এই বিবেকহীন বর্বর সমাজের কাছে, প্রশ্ন আজকের মানবিকতার কাছে, এরা কি আদৌ মানুষ? নাকি মানুষ নামের দুপেয়ে জন্তু মাত্র? এত উন্নতির মাঝেও, এত পরিবর্তনের হাওয়াতেও এতটুকুও বোধহয় বদলায়নি তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থা, আর না বদলেছে মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই আদিম হিংস্রতা।
এদের পাশে এসে দাঁড়ানোর মত আজও নেই কোনো নেতা-নেত্রী, নেই কোনো বুদ্ধিজীবী বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আর না কোনো আপনজন! তবু্ও সমাজের আজ যেখানেই যেটুকু মনুষ্যত্ব বেচেঁ আছে, সেই সমস্ত মানুষের কাছে HnExpress Channel এর পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ যে আপনারা আপনাদের সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন আর ওনাকে একটি সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এই নিউজ লিংকটি সবাই দয়া করে একটু শেয়ার করুন। আশাকরি কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও দিতে পারে।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই পাওয়া আজকের লাস্ট আপডেট হলো, ওঁনাকে কিছু স্বহৃদয় ব্যাক্তিদের নিঃস্বার্থ সহযোগিতায় আজ ব্যারাকপুরের কোনো একটি ট্রাস্টের তত্বাবধানে রেখে আসা হয়েছে। যেখানে তিনি এই মুহুর্তে খুব ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। অবশেষে বলি, হাজার অমানবিকতার মাঝেও আজও কিঞ্চিৎ মানবিকতা আছে বেঁচে।
ছবি ও তথ্যসূত্র ঃ সোস্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ প্রতিনিধি শুভাদিত্য ঘোষ দস্তিদার।