করোনা ভাইরাস মোকাবিলার আবহে কেমন ভাবে সময় কাটচ্ছে সেলেবদের? আজ HN Express এর মুখোমুখি ফ্যাশন ডিজাইনার ও রাজনীতিবিদ অগ্নিমিত্রা পল
HnExpress ৩রা এপ্রিল, বিশেষ প্রতিবেদন, মুখোমুখি ঃ সারা ভারত তথা রাজ্য জুড়ে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চলছে ২১ দিনের সম্পূর্ণ লক ডাউন। এই আবহে কেমন ভাবে সময় কাটছে সেলেবদের? তারই সুকুল সন্ধানে আজ HN Express এর প্রতিনিধি অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সামনে “মুখোমুখি”তে রয়েছেন বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনার ও রাজনীতিবিদ অগ্নিমিত্রা পল। কি বললেন তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে, দেখে নিন এক ঝলকে —
প্রঃ করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় মূল অস্ত্র হলো একান্তে ঘরে থাকা, কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
উঃ (একটু গম্ভীর হয়ে) জানি না আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা, কিন্তু এই ২১টা দিন, মানে যতগুলো দিন গেল আর কি, প্রচন্ড ব্যাস্ততার মধ্যে দিয়েই কাটছে। কারণ বলতে গেলে, বাড়ি থেকেই সব কাজ করছি। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ আর কি। কার কোথায় কি দরকার। কোথায় কোন গরীব মানুষ অনাহারে রয়েছে কিম্বা কোথাও অন্য কোন সাহায্য করলে ভালো হয়, সেগুলো নিয়েই মূলত কাটছে আর কি। এই সময় খাবারের থেকে আর একটি সমস্যা খুব দেখা যাচ্ছে, তা হল রক্তের সমস্যা।
কোথায় রক্তের আকাল পড়ছে, সেটাও দেখাছি। শুধু কলকাতা নয়, জেলা থেকে রক্ত নিয়ে সমস্যা হলেও সেখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে দেওয়ার যে যে কাজ আছে, সবই করছি বাড়ি বসে। এছাড়া তো রয়েছেই বাড়িতে ছেলের সাথে সময় কাটানো, হাজবেন্ডের সাথে পরিবারের সাথে সময় কাটানো, কিছুটা নিজে রান্না করে, কিছুটা পলিটিক্সের বই পড়ে, বইমেলায় যে বইগুলো শুধু কেনা হয়েছিল, পড়া হয়নি, সেগুলো পড়ছি, সিনেমা দেখা, এইসব করেই বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই কাটছে আর কি বলতে গেলে।
প্রঃ করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় নেওয়া ভারতের পদক্ষেপে কি আপনি সন্তুষ্ট?
উঃ আজ সারা বিশ্বের সমস্ত ডাক্তার, নার্স, সমস্ত স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করছেন সকলেই সাংঘাতিক রকমের একটা কাজ করে চলেছেন। অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। ভারত সরকার ও রাজ্য সরকার নিজের মতো করে যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে। একটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সামনে থেকে দাঁড়িয়ে তার সেবা শুশ্রুষা করে তাকে সুস্থ করে তোলা, এটা কম বড় কথা নয়। যেখানে আমরা সকলেই জানি করোনা ভাইরাস কতোটা ছোঁয়াচে, কতটা ভয়ঙ্কর। তার মধ্যে সারা ভারত নিজের মতো করে লড়ছে, সেটা সত্যি কুর্নিশ করার মতো।
এরই মাঝে আপনাদের মাধ্যম দিয়ে আমি আমাদের রাজ্য সরকারকে জানাব, অনুরোধ করব, এই সময়টা রাজনীতি করার সময় নয়। কেন্দ্র রাজ্য সমন্বয়ে সমস্যার মোকাবিলা করুন। কেন্দ্র থেকে যে টাকা এই করোনা ভাইরাসের জন্য স্বাস্থ্য দফতরে আসছে, সেটার যাতে সঠিক ব্যবহার হয়, সেই দিকে নজর দিন। আমরা কিছু কিছু জায়গা থেকে খবর পাচ্ছি, মিডিয়ার মাধ্যমে বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, যে ডাক্তার, নার্স, যারা স্বাস্থ্য বিভাগে সামনে দাঁড়িয়ে করোনার মোকাবিলা করছে, তারা সঠিক ‘পিপিই কিট’ পাচ্ছেন না। আজ রেন কোর্ট পড়ে কাজ করতে হচ্ছে ডাক্তারদের।
আজ তারা COVID-19-এর মাস্ক পাচ্ছেন না, গ্লাভস পাচ্ছেন না, চোখের চশমা পাচ্ছেন না। তারা এমন জিনিষ পাচ্ছেন যেগুলো সাধারণ বর্জ্য পদার্থ থেকে তৈরী হয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে এমন জিনিষ নিয়ে রোগের মোকাবিলা করা মানে, রোগের মধ্যেই নিজেকে ফেলে দেওয়া। আমরা তো বাড়িতে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’-এ আছি, কিছুটা নিরাপদে আছি। কিন্তু যারা সামনে থেকে লড়ছেন, তাদের দিকে আরও একটু যত্নশীল ও সংবেদনশীল হোন। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া কোটি কোটি টাকাগুলো সৎভাবে, সঠিকভাবে ব্যবহার করা হোক।
প্রঃ সাংবাদিকরা যারা মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করছেন, তারা অনেক সময় তাদের কাজের চাপে বা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছেন না, মাস্ক বা স্যানেটাইজার অমিল, এক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
উঃ আপনাদেরকেও সত্যি কুর্নিশ জানাই। আপনারা যথা সম্ভব মুখে মাস্ক ও গ্লাবস পড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। আপনারাও খুব ক্ষুদ্র অঞ্চলেও গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতিটা আমাদের সামনে তুলে ধরছেন। এখনও যারা ‘লক ডাউন’ মানছেন না, জমায়েত করছে, খেলছে, বাজার করছে, রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গিয়ে আপনারা বোঝাচ্ছেন। কিন্তু আপনাদেরও আমি অনুরোধ করব, ঠিকভাবে, সঠিক খবরটা এই সময় আপনারা পরিবেশন করুন।
যাতে সাধারণ মানুষ ভুল খবর পেয়ে বিভ্রান্তিতে আরেকটা বড়ো ভুল না করে বসেন। আর আপনি বলছেন স্যনেটাইজার পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই, এটা ঠিক। সেই জায়গায় আমি বলব, আগে আপনাদের নিজেদের প্রাণটাও বাঁচাতে হবে। তাই যথা সম্ভব স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার চেষ্টা করুন। এর পরেও আপনাদের জন্য যদি কোন রকমের সাহায্যের দরকার হয়, এবং কি ধরনের সাহায্যের করলে আপনাদের সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে, সেটা অবশ্যই জানাবেন আমাকে। আমি আমার তরফ থেকে যথা সম্ভব চেষ্টা করব।
প্রঃ দিদি, এই কঠিন পরিস্থিতিতে আতংকের পরিবেশে আপনিও ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন চ্যানেলের পক্ষ থেকে জানাই অনুরোধ!
উঃ আপনারাও ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর যতটা পারেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার চেষ্টা করুন। আবারও বলছি আপনাদের সংকটময় পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হলে বলবেন, আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করব।