করোনা ভাইরাস মোকাবিলার আবহে কেমন ভাবে সময় কাটচ্ছে সেলেবদের? আজ HN Express এর মুখোমুখি অলকানন্দা রায়
HnExpress ১লা এপ্রিল, বিশেষ প্রতিবেদন, মুখোমুখি ঃ সারা ভারত তথা রাজ্য জুড়ে যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চলছে ২১ দিনের সম্পূর্ণ লকডাউন। সেই আবহে কেমন ভাবে সময় কাটচ্ছে সেলেবদের? তারই সুকুল সন্ধানে আজ HN Express এর প্রতিনিধি অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সামনে ”মুখোমুখি”তে রয়েছেন বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী অলকানন্দা রায়। কি বললেন তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে, জেনে নিন এক নজরে —
প্রঃ করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় মূল অস্ত্র একান্তে ঘরে থাকা, কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
উঃ (হেসে) সত্যি বলতে এটা বোধ হয় আমার জন্য একটু প্রয়োজনই ছিল। সব সময় কেমন যেন দৌঁড়োচ্ছি ভাব। এটা কোথাও একটা সেলফ রিয়ালাইজেশনেরও সময় যে, কেন এত দৌঁড়াই আমরা? এমনিতে আমি প্রচুর মেডিটেশন করতাম, হয়ত তখন দিনে দু-বার করতাম, একবার সকালে, একবার রাত্রে। এখন সেটাই ৪ থেকে ৫ বার হয়ে যাচ্ছে। সাবিত্রী পড়ছি। শ্রী অরবিন্দের একটা দুর্গার প্রার্থনা আছে যেটা ভারতকে রক্ষা করার কথা বলে। যদিও সেটা ভারত স্বাধীনের আগের গান, তা হলেও এখনকার দিনে দাঁড়িয়েও সেই গান বড্ড বেশি প্রাসঙ্গিক। সেই গান দিনে দু’বার করে করছি। যাতে আমরা এই সময়ে সকলে ভালো থাকি। (হেসে) ঘর গোছাচ্ছি। বই পড়ছি, গান শুনছি। বিশ্বাস করো, এত কিছুর পরেও, বড্ড শান্তি লাগে।
প্রঃ করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতের পদক্ষেপে কি আপনি সন্তুষ্ট?
উঃ একটা আশা আছে, সব কিছু তো ভালো হবেই। ভারত এই করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্বকে পথ দেখাবে। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদেরকে ভারতের সন্তোষজনক পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে। আমরা যদি সব ভারতবাসীরা এক হয়ে লড়তে পারি, তাহলে হয়ত এই মোকাবিলাটা করতে আরও সুবিধা হবে। আসলে কি বলতো, প্রত্যেককেই কিছু জায়গা নিজের ছাড়তে হবে। এই ছাড়াটাই পরবর্তীকালে অনেক বড় পাওয়ার জায়গা হবে। আমাদের মানুষের প্রাচুর্যের ভার বেড়ে গিয়েছিল, এই সময়টাতে সবাই বুঝেছে যে, নূন্যতম চাহিদাতেও একটা জীবন কত সুন্দরভাবে কাটানো যায়। নিজের জন্য নয়, সারা বিশ্বে মানুষ একে অপরের পাশে হাত ধরে দাঁড়ানোটায় যে একটা বিশ্ব ভাতৃত্ববোধ কাজ করছে, সেটা অনেক বড় ব্যপার। আমরা ঘরে থাকলে যদি হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচে, তাহলে সেটা তো অনেক বড় পাওয়া। একটা জিনিষ দেখেছো, মানুষের যখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা সত্যি দরকার তখন কিন্তু আমরা কোন রাজনৈতিক দল নয়, ধর্মীয় বিভাজন নয়, সব কিছুর উপরে উঠে আমরা সকলে এক, এই ব্যাপারটা কতো ভালো লাগছে, তাই না? আমাদের জন্য এখন যে সব ডাক্তার, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছে বা পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে, তারা কিন্তু কেউ ডিউটি করছে না, তারা জীবন দিয়ে তাদের সমাজের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রঃ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী বা পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মিডিয়ার নিরলস কাজকে আপনি ঠিক কিভাবে দেখেন?
উঃ সমাজের সবার সাথে সবার যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটাই সাংবাদিকরা এই সময় যেভাবে করে যাচ্ছেন, তা সত্যিই কুর্নিশ করার মতো। এখন মানুষ তো বেশি মিডিয়া নির্ভর হয়ে পড়েছে। আপনাদের থেকে তো সব সময় খবর পাচ্ছি। সংবাদপত্র প্রথম দিকে না আসলেও, এখন তা আসতে শুরু করেছে। সকালে উঠে খবরের কাগজ পড়াটা একটা অভ্যেস। সেটাকে তো অস্বীকার করা যায় না। শুধু খবর পৌঁছে দেওয়া নয়, এই মুহূর্তে কার কি কর্তব্য, সেটা বুঝিয়ে দেওয়াটাও অনেক বড় কাজ।
প্রঃ সাংবাদিকরা যারা মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করছেন, তারা অনেক সময় তাদের কাজের চাপে বা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছেন না, মাস্ক বা স্যানেটাইজার অমিল, সেক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
উঃ তারা তাদের কাজটা রাস্তায় নেমে তাদের মতো করে করছেন। তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজটা করেই যাচ্ছেন। সবাই যে সামনে দাঁড়িয়ে শুশ্রুষার কাজ করছে, তা নয়। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজ করে চলেছে। আজ যারা সাংবাদিকতা করছে তারাও হাই রিস্কে। তুমি নিজেই জানো না যে কে করোনার ক্যরিয়ার। এই জিনিসটাকে সবার সাপোর্ট করা উচিত। সাংবাদিকদের জন্যও ভাবা সবারই উচিত। তাদের দিকটা ভালো করে না দেখলে আমরা তো খবরই পাব না কোথায় কি হচ্ছে! তোমরা যে সবসময় আমাদের এই নিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছ, এটাও কি কম বড় কাজ! সাধারন মানুষ কিন্তু মিডিয়ার এই কথা এখন মানছে।
প্রঃ নিড এবং লাক্সারির তফাৎটা তাহলে সাধারণ মানুষ বুঝেছে বলতে চাইছেন?
উঃ (একটু গম্ভীর হয়ে) বোঝাটা খুব দরকার ছিল। ভালো কথায় মানুষ যখন শোনে না, ঈশ্বর তখন বোধ হয় আমাদের এইভাবেই শাস্তি দেন।
প্রঃ তাহলে কি আপনি শ্রী কৃষ্ণের সেই বাণীটাই বলতে চাইছেন ‘সম্ভাবামি যুগে যুগে’?
উঃ হ্যাঁ, একেবারেই। ‘সম্ভাবামি যুগে যুগে’ এটা তো আমি বলছিই। আমি তো কালকেই বাড়িতে বলছিলাম, করোনা কি ‘কাল্কি অবতার’ হিসাবে এলো? (হাসি) তিনি কি পৃথিবীকে সব উল্টে পাল্টে দিয়ে পুরো নতুন করে গড়বেন!
প্রঃ দিদি, আমাদের চ্যানেলের পক্ষ থেকে অনুরোধ, এই কঠিন পরিবেশে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন—
উঃ তোমরাও ভালো থেকো। এই সময় তোমাদের ভালো থাকাটা খুবই জরুরী। খুব সাবধানে থেকো। তোমরা কিন্তু সমাজের অনেক দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছ। তোমরা ভালো থাকলে, আর দশজন মানুষ ভালো থাকবে, কারণ তোমরা অনেক বার্তা পৌঁছে দিতে পারো। ভগবান তোমাদের মঙ্গল করুন। আর এর সাথেই আমি বলব যে, আমার তরফ থেকে মিডিয়ার জন্য যদি কিছু করা সম্ভব হয় আমায় জানিও, আমি সবরকম ভাবে তোমাদের পাশে আছি।
ক্রমশ —