অবশেষে প্রকাশ পেলো বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার
HnExpress প্রিয়দর্শী সাধুখাঁ, কলকাতা ঃ বাম, তৃনমূল এর প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর তিন নম্বরে পড়ে ছিল বিজেপি। অবশেষে প্রকাশ করলো ২০২১ এর নির্বাচন ইস্তেহার। তবে পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেনি ভারতীয় জনতা পার্টি। ইতিহাস ঘুরে আসলে দেখা যায় বিজেপির উৎস হলো ভারতীয় জনসংঘ নামে একটি রাজনৈতিক দল। অতীতে এই দলটি ‘জনসংঘ’ নামেই পরিচিত ছিল।
১৯৫১ সালে ভারতের রাজনীতিতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রাধান্যের বিরোধিতা করে ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অর্থাৎ আরএসএস এর সহযোগিতায় এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সাধারণ ভাবে এই দলটি আরএসএস-এর রাজনৈতিক শাখা হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। জনসংঘের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ‘হিন্দু’ সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করা।
সেই সঙ্গে এই দল অভিযোগ এনেছিল, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভারত ও নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের মুসলমানদেরকে রীতিমতো তোষণ করছে। জনসংঘ তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে নেহেরুর তোষণনীতির বিরোধিতা করে। আর সদ্য-গঠিত জনসংঘের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার জন্য আরএসএস তাদের একাধিক প্রধান প্রচারকদের পাঠিয়ে ছিল এই দলের কাজে। এঁদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলেন দীনদয়াল উপাধ্যায়।
তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জনসংঘ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মাত্র তিনটি আসন জয় করেছিল। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সংসদে এই দলের প্রতিনিধি সংখ্যা ছিল নগন্য। নরেন্দ্র মোদির সরকার কেন্দ্রে সরকার গঠন করার কয়েক বছর পরই বাংলার দিকে নজর দেন। ২১ সালের উপস্থিতিতে প্রথম দু-দফার মোট ৬০টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল মোদি সরকার।
দিল্লি থেকেই বাংলার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বারে বারে মত পরিবর্তন এর পর আজ তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগে বলা হয়েছিল যে রবিবার মোদীর ব্রিগেডের পর প্রকাশিত হবে। কিন্তু শনিবার সকালেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় সরকার। আর খানিকটা তাড়াতাড়ি করেই তালিকা প্রকাশ করে দেয় তাঁরা। তালিকায় রয়েছেন পটাশপুর থেকে অম্বুজা, কাঁথি উত্তর থেকে সুনীতা সিংহ, ভগবানপুর থেকে রবীন্দ্রনাথ মাইতি, খেজুরি থেকে শান্তনু প্রামাণিক।
বিনপুর থেকে পালন সোরেন, বলরামপুর থেকে বংশী মাহাত, জয়পুর থেকে নরহরি মাহাত, রঘুনাথপুর থেকে বিবেকানন্দ বাউড়ি, রায়পুর থেকে সুধাংশু হাঁসদা, গোসাবা থেকে চিত্রা প্রামাণিক, তমলুক থেকে হরেকৃষ্ণ বেরা, ময়না থেকে অশোক ডিন্ডা, নন্দকুমার থেকে নীলাঞ্জন অধিকারী, নন্দীগ্রাম থেকে আবারও শুভেন্দু অধিকারী, সবংয় থেকে অন্তরা ভট্টাচার্য, ডেবরা থেকে ভারতী ঘোষ, তালডাংরা থেকে শ্যামল কুমার সরকার, ইন্দাস থেকে নির্মল ধারা।
বাংলার প্রার্থী তালিকা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া গেলেও অসমের ৭০ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিজেপি। বাংলার প্রথম দুই দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কথা ছিল বিজেপির। দিলীপ-কৈলাসদের মতো নেতাদের সিদ্ধান্তের ফলে দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। ভোট প্রচারে বাংলাতে নরেন্দ্র মোদির আসেন তারকাদের নিয়ে। কারণ ২০২১ এ দাঁড়িয়ে আমজনতার কথা, কাজের বিচার অনুযায়ী নেতৃত্বরা ভোটের টিকিট পায় না।
তাঁরাই পায় যাঁরা রুপোলী পর্দা থেকে আসেন। এতে কোনো অংশে কম নেই কেউই, একমাত্র বাম জোট ছাড়া। ইতিমধ্যেই গ্যাস ও তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নাজেহাল জনতা। ঘুটি সাজাচ্ছে সব দলই। সাম্প্রদায়িকতার তকমা দিয়েও হিন্দু-মুসলিম এর সোনার বাংলাতে বিজেপির দাঁত বসানো খুবই কষ্টকর। অন্ধ পালা বদলের খেলাতেও মত্ত কিছু সুযোগ সন্ধানি মানুষ আজ বিজেপিকে বাংলার মসনদে বসাতে চায় বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।
কিন্তু সেই মানুষদের সংখ্যা খুবই কম। আর ইতিমধ্যেই ব্রিগেডে ঘুরে চলে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সমাবেশকে বিজেপি এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছে যে ২রা ও ৩রা মার্চের বাংলা সফর বাতিল করেন অমিত শাহ নিজেই। ব্রিগেড প্রসঙ্গে লকেট চট্টপাধ্যায় বলেন, ‘শুধু হুগলি জেলা থেকেই দেড় লাখ মানুষ ব্রিগেডে যাবেন। ওই দিন ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে ব্রিগেডে।’ যদিও তা ছিল পুরোটাই উল্টো চিত্র।